দোহা: চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আর্জেন্তিনা ও নেদারল্যান্ডস  একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। লুসেইল স্টেডিয়ামে এক নাটকীয় ম্যাচের সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব। মাঠের ফুটবল, দুই দলের হার না মানা মানসিকতা এবং মাঠের মধ্যেই একাধিকবার দলের খেলোয়াড়দের ঝামেলায় জড়ানো ম্যাচে বাড়তি রসদের যোগান দেয়। ম্যাচের ঝামেলার আঁচ ম্যাচ শেষে মাঠের বাইরে দেখা গেল।


ক্ষুব্ধ মেসি


ম্যাচ শেষে নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফান হাল ও তাঁর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিলেন  আর্জেন্তাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তিনি ম্য়াচের বলেন, 'ফান হালের মতে ওঁরা নাকি ভাল ফুটবল খেলেছে। ওঁরা কেবল কয়েকজন লম্বা ফুটবলারকে মাঠে নামিয়ে লম্বা লম্বা পাসই বাড়ায়। আর্জেন্তিনা বিশ্বের সেরা চারটি দলের মধ্যে পড়ে। কারণ আমরা প্রতিটি ম্যাচেই একই উদ্যম এবং লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামি।'


ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের স্টপেজ টাইমে গোল হজম করায় ম্যাচ অতিরিক্ত সময় এবং তারপর পেনাল্টি শ্যুট আউট পর্যন্ত গড়ায়। পেনাল্টিতে ম্যাচ গড়ানোয় বাড়তি চাপের মুখে পড়তে হলেও আর্জেন্তিনা শেষমেশ জয় পাওয়ায় সন্তুষ্ট দলের অধিনায়ক। 'ম্যাচ জিততে পারায় আমি ভীষণ খুশি। অতিরিক্ত সময় ও পেনাল্টি শ্যুট আউট ম্যাচ গড়ানোয় আমাদের চাপ বাড়ে বটে। তবে শেষমেশ আমরা ম্যাচ জিততে পেরেছি এবং সেটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।' মত মেসির। 


ম্যাচের ইতিবৃত্ত


ম্যাচের ৩৫ মিনিটে চারজন ডাচ ফুটবলারের মধ্যে দিয়ে অবিশ্বাস্য পাস বাড়ালেন মেসি। সেই থ্রু থেকে গোল করলেন নাহুয়েল মোলিনা। আর্জেন্তিনার জার্সিতে প্রথম গোল। বিরতির আগেই ১-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্তিনা। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফাউল করা হয়। পেনাল্টি দেন রেফারি। গোল করে ২-০ করেন মেসি। ম্যাচ তখন সম্পূর্ণরূপে আর্জেন্তিনার হাতে। মনে করা হচ্ছিল, নেদারল্যান্ডসকে রীতিমতো উড়িয়ে সেমিফাইনালে যাবে আর্জেন্তিনা।


কিন্তু অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন উট ওয়েগহোর্স্ট। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে তখন মিনিট সাতেক বাকি। স্টিভেন বার্গহুইসের পাস থেকে জোরাল হেডে ২-১ করেন ওয়েগহোর্স্ট। এরপর ম্যাচের একেবারে শেষ লগ্ন। নিজেদের বক্সের বাইরে অহেতুক ফাউল করেন পাজেল্লা। ফ্রি কিক দেন রেফারি। ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষের দিকে সেই ফ্রি কিক থেকে ফের গোল করেন ওয়েগহোর্স্ট। ম্যাচ ২-২ হয়ে যায়।


৯০ মিনিটে ফয়সালা না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে অতিরিক্ত সময়ের দুই অর্ধেই কোনও দল কোনও গোল করতে পারেনি। একমাত্র এনজো ফার্নান্দেজের একটি শট পোস্টে লেগে ফেরে। উল্টে মাঠের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকবার বচসা, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ফুটবলাররা। হলুদ কার্ডের বন্যা বয়ে যায়। রেফারি আন্তোনিও মিগুয়্যেল মাতেও লাহোজ মেসিকেও হলুদ কার্ড দেখান। পাশাপাশি হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না আকুনা।


তবে টাইব্রেকারে নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর্জেন্তিনার কোপা আমেরিকা জয়ের নেপথ্যেও যাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রথম শট নিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। ডাচ অধিনায়ক ভার্জিল ভ্যান ডাইকের শট শরীর শূন্যে ছুড়ে রুখে দেন মার্তিনেজ। আর্জেন্তিনার প্রথম শটে গোল করেন মেসি। ডাচদের দ্বিতীয় শটও রুখে দেন এমিলিয়ানো। স্টিফেন বারগুইসের শট বাঁচান তিনি। লিয়ান্দ্রো পারাদেস ২-০ করেন। একমাত্র এনজো ফার্নান্দেজ ছাড়া আর্জেন্তিনার বাকি চার শটেই গোল হতে জয় নিশ্চিত হয়ে যায় মেসিদের।


আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে চলেছেন নেমার?