দোহা: করিম বেঞ্জেমা, এনগোলো কঁতে, পল পোগবা, প্রেস্নেল কিম্পেম্বে, ক্রিস্টোফার এনকুঙ্কুর মত বিশ্ববন্দিত তারকারা চোটের কারণে বিশ্বকাপ (FIFA WC 2022) থেকে ছিটকে যান। তা সত্ত্বেও সফলভাবে নিজেদের বিশ্বকাপ খেতাব ডিফেন্ড করার থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে দিদিয়ের দেশঁর ফ্রান্স দল (France Football Team)। গত বছরে উয়েফা ইউরোয় শুরুর দিকেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ায় ফ্রান্সকে বেশ সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে সেসব এখন অতীত। মাত্র তৃতীয় দেশ হিসাবে পর পর দুই বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি কিলিয়ান এমবাপেদের (Kylian Mbappe) সামনে। কোন পথে, কী ভাবে ফাইনালে পৌঁছল লে ব্লাঁ।


গ্রুপ পর্ব


বিশ্বকাপের শুরুটা কিন্তু ফ্রান্স একেবারেই ভালভাবে করেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই এক গোল পিছিয়ে পড়েছিল গত বারের চ্যাম্পিয়নরা। তবে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে অ্যাড্রিয়ান রাবিয়ো ও অলিভিয়ের জিহুর গোলে ম্যাচে লিড নিতে সক্ষম হয় ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে দুরন্ত ফ্রান্স দলের সামনে কার্যত মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারেনি সকারুজরা। দ্বিতীয়ার্ধে কিলিয়ান এমবাপে এবং জিহু যথাক্রমে তিন ও চার নম্বর গোলটি করে ৪-১ স্কোরলাইনে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন।


বিগত তিন বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই আগের বারের চ্যাম্পিয়ন দলগুলি বিদায় নিয়েছিল। সেই অভিশাপকে ঝেড়ে ফেলে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ২-১ স্কোরলাইনে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্য়াচ জিতে নক আউটে নিজেদের জায়গা পাকা করে ফ্রান্স। কিলিয়ান এমবাপে এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন। ড্যানিশদের হয়ে ক্রিশ্চিয়ানসন এক গোল শোধ করলেও এমবাপেরাই শেষ হাসি হাঁসেন।


প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আগেই নিজেদের জায়গা পাকা করে ফেলায় তিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে দলে প্রচুর বদল ঘটান দেশঁ। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। তিউনিশিয়ার অধিনায়ক ওয়াহাবি খাজরি ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন। আঁতোয়াঁ গ্রিজম্যান ম্যাচের শেষদিকে তিউনিশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দিলেও, তা বাতিল করা হয়। অবশ্য ফ্রান্স দল এই ম্যাচটিকে এক দুঃস্বপ্নের মতো খুব শীঘ্রই ভুলে যায়। 


প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল


প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ফের জ্বলে উঠেন এমবাপে। জোড়া গোল করেন তিনি। শুরুটা উভয় দলই কিছুটা দেখেশুনে করলেও, সুযোগ পেলে গোলের সামনে যে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন, তা এই ম্যাচেই প্রমাণ করে দেন এমবাপে। ম্য়াচের অপর গোলটি আসে জিহুর পা থেকে। এই গোলের সুবাদেই থিয়রি অঁরিকে পিছনে ফেলে জিহুই ফ্রান্সের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যান। ৩-১ ম্যাচটি জেতেন এমবাপেরা।


কোয়ার্টার ফাইনাল


অরিলিয়েন চাউমেনির দুরন্ত দূরপাল্লার শটে ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে এগিয়ে যায়।  ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন ৫৪ মিনিটে গোল করে থ্রি লায়ান্সকে সমতায় এনে দেন। ৭৮ মিনিটে জিহু ফের একবার গোল করে ফ্রান্সের লিড ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। তবে শেষের দিকে থিও হার্নান্জেজ কেনকে ফাউল করার ফের একবার পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। দুর্ভাগ্যবশত কেনের শট গোলের তেকাঠির বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষমেশ ২-১ ম্যাচ জেতে ফ্রান্স।


সেমিফাইনাল


অতীতের বিশ্বজয়ী ফ্রান্স দলগুলির ধারা বজায় রেখে সেমিফাইনালে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন একজন ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজ। পাঁচ মিনিটে তাঁর গোলেই ম্যাচে লিড নিয়ে নেয় ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপের এক দুরন্ত রান থেকে তাঁরই নেওয়া শটে ভাগ্যক্রমে কোলো মুয়ানির দখলে বল চলে আসে। পিচে মাত্র ৪৪ সেকেন্ড আগে নামা মুয়ানি, মরক্কোর কার্যত ফাঁকা গোলে বল জড়িয়ে দিতে কোনও ভুল করেননি। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে পরিবর্ত হিসাবে নামা কোনও খেলোয়াড়ের দ্বিতীয় দ্রুততম গোল। হাকিম জিয়েখরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ২-০ ম্যাচ জেতে ফ্রান্স।


এবার কেবল ফাইনালের মহারণ বাকি। দুই ক্লাব সতীর্থ এমবাপে ও লিওনেল মেসির দিকেই সকলের নজর। কোন মহাতারকা দলকে বিশ্বকাপ এনে দেন, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।


আরও পড়ুন: সৌদির বিরুদ্ধে হেরে বিদায়ের আশঙ্কা, কোন পথে ফাইনালে পৌঁছলেন মেসিরা?