দোহা: কাতার বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরির কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হল প্রায় সাত হাজার শ্রমিকের। যার মধ্যে একটা বড় অংশই ভারতীয়। ২০১০-এর ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১২ জন করে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কাতার সরকারের দাবি, স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে। কিন্তু এতজন শ্রমিকের কীভাবে স্বাভাবিক মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। 

২০১০-এ যখন কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায়, তখন ফিফার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশে কীভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করা যাবে, অনেকেই সেই প্রশ্ন তোলেন। কারণ, বিশ্বকাপ সাধারণত যে সময়ে হয়, সেই জুন-জুলাই মাসে কাতারের তাপমাত্রা এত বেশি থাকে, তখন খেলা সম্ভব নয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই বিশ্বকাপ হবে শীতকালে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক থামেনি। বরং একের পর এক ঘটনায় বিতর্ক বেড়েই চলেছে। 

এবার একটি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাতারে বিশ্বকাপের জন্য কাজ করতে গিয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ৬,৭৫০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ভারতেরই ২,৭১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রতিবেদনে অবশ্য এটা বলা হয়নি যে সবারই বিশ্বকাপের জন্য কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কাতারের একটি শ্রম অধিকার সংগঠনের দাবি, কাতার বিশ্বকাপের দায়িত্ব পাওয়ার কারণেই এতজনের মৃত্যু হয়েছে। ঠিক কী কারণে এতজনের মৃত্যু হল, সেটাও রহস্যে মোড়া। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০১৯-এ মধু বোল্লাপল্লি নামে ৪৩ বছর বয়সি এক ভারতীয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়। কীভাবে তিনি মারা গেলেন, সেটা আজও জানে না তাঁর পরিবার। কাতার সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয় মধুর। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ তাঁর পরিবার। কারণ, তাঁদের দাবি, মধু সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। হঠাৎ তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়ার কোনও কারণ নেই। 

ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের যত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৬৯ শতাংশেরই মৃত্যু স্বাভাবিক বলে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ভারতীয়র মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে দাবি করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের দাবি, কাতারে শ্রমিকদের কোনওরকম অধিকার নেই। তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো কাজ বেছে নিতে পারেন না, এক সংস্থা ছেড়ে অন্য সংস্থায় যেতে পারেন না বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদন ছাড়া নিজেদের দেশে ফিরতে পারেন না। তাঁদের যেভাবে খুশি ব্যবহার করে সংস্থাগুলি। সেই কারণেই এতজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। 

আগামী বছরের ২১ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। এই প্রথম শীতকালে বিশ্বকাপ হচ্ছে। ফিফার পক্ষ থেকে কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার পিছনে দুর্নীতি নেই বলে দাবি করা হলেও, সমালোচনা ও বিতর্ক থামছে না।