কলকাতা: ন’বছর পরে এশীয় স্তরের টুর্নামেন্টে নেমেও সাফল্য পাওয়া হল না ইস্টবেঙ্গল এফসি-র (East Bengal FC)। বুধবার ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানের আলটিন আসিরের কাছে ২-৩-এ হার মানল তারা। প্রথমার্ধে তেমন ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে উজ্জীবিত ফুটবল খেলে তারা। তা সত্ত্বেও জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। 


এ দিন যুবভারতীতে সাত মিনিটেই গোল করে কলকাতার দলকে এগিয়ে দেন ডেভিড লালনসাঙ্গা। কিন্তু তার দশ মিনিট পরেই সমতা এনে ফেলেন আলটিন আসিরের মিডফিল্ডার মিরাত আনায়েভ। ২৭ মিনিটের মাথায় তারা এগিয়ে যায় নুরমিরাদভ সেলিমের গোলে। বিরতির পর দলের হয়ে তৃতীয় গোল করেন  মিহাইল টিটভ। ৫৯ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান সল ক্রেসপো। 


এর পর সমতা আনার মরিয়া চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে, আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মরিয়া চেষ্টা করেও সফল হয়নি তারা। এই হারের ফলে ইস্টবেঙ্গলের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ অভিযান শুরুতেই শেষ হয়ে গেল। গ্রুপ পর্বে খেলার সুযোগ পাওয়া হল না তাদের। জয়ী আলটিন আসির গ্রুপ পর্বে খেলবে।


এ দিন ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই গোল পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। বাঁ দিকের উইং দিয়ে বল নিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে থাকা ডেভিড লালনসাঙ্গার উদ্দেশে ক্রস দেন। হেড দিয়ে বল গোলে পাঠানোর চেষ্টা করেন ডেভিড। কিন্তু বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে, যার দখল ঠিকমতো নিতে পারেননি আলটিনের গোলকিপার বাতির বাবায়েভ। তাঁর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে সোজা গোলে ঠেলে দেন সেই ডেভিড (১-০)। তখন ম্যাচের বয়স সবে সাত মিনিট হয়েছে। 


গোল খাওয়ার পরই খোলস ছেড়ে বেরোতে শুরু করে তুর্কমেনিস্তানের ক্লাবের ফুটবলাররা। ১২ মিনিটের মাথায় রহমান মিরাতবেরদিয়েভের গোলমুখী শট দুর্দান্ত ভাবে সেভ করেন লাল-হলুদ গোলকিপার প্রভসুখন গিল। এই সুযোগ হাতছাড়া হলেও পাঁচ মিনিট পরেই যে সুযোগ তৈরি করে নেয় আলটিন, সেই সুযোগ কিন্তু আর হাতছাড়া হয়নি। 


কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে মিরাত আনায়েভ যখন প্রতিপক্ষের গোলে বল ঠেলেন, তখন লাল-হলুদ রক্ষণের কেউ ছিলেন না তাঁর আশপাশে। নাওরেম মহেশকে নীচে নেমে এসে আনায়েভকে আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁর চেষ্টা কাজে লাগেনি। যখন জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি, তখন গোলকিপার গিল গোললাইনে শুধুই দাঁড়িয়ে ছিলেন (১-১)। 


সমতা আনার পর বিদেশী দলের ছবিটাই পুরোপুরি পাল্টে যায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় তারা। মাঝমাঠ থেকে বারবার আক্রমণে ওঠে তারা। আগ্রাসী প্রতিপক্ষকে আটকাতে মরিয়া হয়ে ওঠায় হলুদ কার্ড দেখেন শৌভিক চক্রবর্তী এবং প্রতিপক্ষকে ফ্রি কিকও ‘উপহার’ দেন তিনি। সেই ফ্রি কিক থেকেই সোজা গোলে শট নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দেন নুরমিরাদভ সেলিম (১-২)। এত দ্রুত বল গোলে ঢোকে যে নড়াচড়া করার সময়ই পাননি গিল। 


পিছিয়ে পড়ার পর বলের দখল বেশি করে নিয়ে ও আক্রমণ তীব্রতা বাড়িয়ে খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু গোল করার জন্য প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকতে ব্যর্থ হয় তারা। দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ও ক্লেটন সিলভার মতো অ্যাটাকাররা রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকায় এবং নাওরেম মহেশ ছন্দে না থাকায় এ দিন তাদের আক্রমণে দুর্বলতা দেখা যায়। 


অন্যদিকে, পায়ে চওড়া স্ট্র্যাপ বেঁধে খেলতে নামা হিজাজি মাহের সঙ্গে জিকসন সিংকে না পাওয়ায় লাল-হলুদ রক্ষণকেও বেশ কোণঠাসা মনে হয়। তাও সমতা আনার চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। 


প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে মাদি তালালের লম্বা ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোলের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মহেশ। এর পরে পাওয়া কর্নারকেও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। নিজেদের গোলের সামনে কার্যত দেওয়াল তুলে দেয় আলটিন আসির।         


দ্বিতীয়ার্ধে মহম্মদ রকিপ ও নাওরেম মহেশকে তুলে নিয়ে জিকসন ও দিয়ামান্তাকসকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। গ্রিক ফরোয়ার্ড মাঠে নামায় মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকেই দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নন্দকুমার বাঁ দিক দিয়ে উঠে গোলের দিকে ক্রস উড়িয়ে দেন, যা দখলে নিয়ে নেন গোলকিপার বাবায়েভ। 


দিয়ামন্তাকস, তালাল ও ক্রেসপোর ত্রয়ী এই সময় থেকেই গোলের চেষ্টা শুরু করে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গোলে শট নেন ইস্টবেঙ্গলের দিমি। কিন্তু তা ফের আটকে দেন বাবায়েভ। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে উঠে ৫২ মিনিটের মাথাতেই ফের গোল করে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায় আলটিন আসির। বক্সের সামনে থেকে উড়ে আসা বলে শট নিয়ে প্রথমে গোলের চেষ্টা করেন ডানদিক দিক দিয়ে বক্সে ঢোকা আনায়েভ। কিন্তু তাঁর শট গিলের হাতে লেগে চলে আসে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে থাকা মিহাইল টিটভের পায়ে। তিনি জালে বল জড়াতে কোনও ভুল করেননি (১-৩)।


এর পরেও ব্যবধান কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল এবং মাদি তালালের জোরালো শট দুর্দান্ত দক্ষতায় সেভ করেন গোলকিপার বাবায়েভ। বিদেশী ত্রয়ীর চেষ্টা সফলও হয় ৫৯ মিনিটের মাথায়, যখন তিন ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে বক্সে ঢুকে গোলের উদ্দেশ্যে কোণাকুনি চিপ করেন সল ক্রেসপো, যা ডানদিকের ওপরের কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে যায় (২-৩)। 


প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে অনেক উজ্জীবিত ফুটবল খেলে লাল-হলুদ বাহিনী। তবে তাদের দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে বারবার তাদের গোল এলাকায় ঢুকে পড়েন আলটিন আসিরের অ্যাটাকাররা। সমতা আনার উদ্দেশে ৬৫ মিনিটের মাথায় ডেভিডের জায়গায় ক্লেটন সিলভাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল, যাতে আক্রমণে তীব্রতা আরও বাড়ে। 


৬৯ মিনিটের মাথায় সমতা আনার সুযোগ অবিশ্বাস্য ভাবে হাতছাড়া হয় ইস্টবেঙ্গলের, যখন নিজেদের বক্সের মধ্যে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে আলটিন আসিরের এক ডিফেন্ডার গোলের দিকে বল ঠেলে দেন। কিন্তু তা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। জয় সুরক্ষিত করার জন্য তারাও চতুর্থ গোলের চেষ্টা চালিয়ে যায়। তবে এই সময় ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণকে আগের চেয়ে সংগঠিত লাগে। 


নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে সমতা এনেই ফেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু গোলে বল ঠেলার আগে গোলকিপারকে আঘাত করার অভিযোগে ক্লেটনের বিরুদ্ধে ফ্রি কিকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গোল বাতিল করে দেন অস্ট্রেলীয় রেফারি আলেকজান্দার কিং। এর পরে মুহূর্তেই পাল্টা আক্রমণে উঠে ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন আনায়েভ, যা দুর্দান্ত সেভ করেন গিল। 


ম্যাচের শেষ দিকে নামেন পিভি বিষ্ণু এবং তাঁর মাঠে আসার পরেই আক্রমণ আরও জোরালো হয়। ৯০ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের একেবারে সামনে থেকে ফ্রি কিক পায় ইস্টবেঙ্গল, যা থেকে সোজা গোলে শট নিয়ে সমতা আনার পরিকল্পনা ছিল ক্লেটনের। কিন্তু গোলকিপার বাবায়েভ তা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর হাত থেকে বল ফসকে যায়। সামনে তালাল ও হিজাজি থাকলেও বলের পুনর্দখল নিয়ে নেন আলটিন গোলকিপার। এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পর আর কিছু করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। স্টপেজ টাইমে দু-দু’বার কর্নার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। (তথ্যসূত্র: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: রঞ্জি ট্রফির প্রস্তুতিতে বিশেষ নকশা বাংলার, অভিষেক-মনদীপদের বিরুদ্ধে খেলবেন ঋদ্ধিরা?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।