কলকাতা: কলকাতায় এসে ডুরান্ড কাপ জয়ের পর নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি এ বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2024-25) মরশুম শুরু করে কলকাতাতেই। মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে জয় দিয়ে লিগ অভিযান শুরু করে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচও ছিল কলকাতায়, গতবারের লিগগশিল্ড জয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচের শেষদিকে গোল খেয়ে হারতে হয় হাইল্যান্ডারদের। সেই কলকাতাতেই ফিরে এসেছে হুয়ান পেদ্রো বেনালির দল। এ বার তাদের সামনে কলকাতার আর এক দল ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal), যারা এ মরশুমে এখনও প্রথম জয়ের খোঁজে রয়েছে।

গত ম্যাচে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে তাদের সঙ্গে, তা লাল-হলুদ শিবিরকে হতাশ করে তোলার জন্য ছিল যথেষ্ট। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান। কিন্তু একই সঙ্গে দুই উইঙ্গারকে হারানোয় ৭৫ মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) ন’জনে মিলে তুমুল লড়াই করে তারা। দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে নিজেদের গোল অক্ষত রাখে এবং মরশুমের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে ইস্টবেঙ্গল।

এই পারফরম্যান্সের পর তাদের লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। হয়তো সেদিন এগারো জনে খেললে ম্যাচের ফল অন্যরকম হত। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোন যে ভাবে গোটা দলটার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করেছেন, যে ভাবে দলের ছেলেদের বোঝান, লড়াই চালিয়ে গেলে খারাপ সময়ের পর ভাল সময় আসবেই, যে ভাবে ভুলগুলো শোধরানোর উপায় বাতলে প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা অনুযায়ী নিজেদের রণনীতি তৈরি করেন তিনি, তা প্রশংসার যোগ্য। চলতি আইএসএলের আসরেও দলকে লড়াইয়ে ফোরানোর ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করেছেন স্প্যানিশ কোচ। গত ম্যাচে সেই লক্ষ্য অর্ধেকটা পূরণ হয় তাঁর। দল লড়াইয়ে ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু জয়ে ফিরতে পারেনি।

গত ম্যাচের আগে পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। চার গোল দিয়ে ১২ গোল হজম করলে তা হবেই। কিন্তু সেই রক্ষণ-নির্ভর ফুটবল খেলেই যে ভাবে শেষ ম্যাচে আক্রমণাত্মক মহমেডান এসসি-কে আটকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় মশাল বাহিনী, তা প্রশংসনীয়। শুক্রবার যুবভারতীতে শক্তিশালী নর্থইস্টের বিরুদ্ধেও যদি তারা সেই লড়াই বজায় রাখতে পারে, তা হলে ফের পয়েন্ট পেতে পারে তারা। কিন্তু এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সোজা হওয়ার সম্ভাবনা যে বেশ কম, তা নর্থইস্টের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে।

শেষ চারটি ম্যাচেই অপরাজিত নর্থইস্ট। তার মধ্যে তিনটিতে জয় ও একটিতে ড্র। এই চার ম্যাচে ১২ গোল করেছে তারা। সব মিলিয়ে ২১ গোল করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের দলটি, যা এ মরশুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। জামশেদপুর এফসি-কে ৫-০-য় হারায় তারা। গত ম্যাচে ফর্মে থাকা পাঞ্জাব এফসি-কে হারায় তারা, যে পাঞ্জাব এফসি মঙ্গলবার মুম্বই সিটি এফসি-কে ৩-০-য় হারায়। দলের ২১ গোলের মধ্যে তাদের মরক্কান ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই একাই ১১টি গোল দিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে নেস্টর আলবিয়াখ চারটি, গিলেরমো ফার্নান্ডেজ ও পার্থিব গগৈ দু’টি করে গোল করেছেন।

যে দল এ বারের আইএসএলে শুধু প্রথম ম্যাচ ও গত ম্যাচ বাদে বাকি সব ম্যাচেই অন্তত দু’টি করে গোল খেয়েছে সেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নর্থইস্টের গোলমেশিন যে চালু থাকবে, এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভুটানে টানা তিনটি ম্যাচে অপরাজিত থেকে (একটি ড্র, দুটি জয়) টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে পৌঁছনোর পরে ইস্টবেঙ্গল শিবিরের মেজাজ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সম্ভবত ভুটানের পারফরম্যান্সের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তাদের আইএসএল অভিযানে। মহমেডানের বিরুদ্ধে তার ঝলক দেখা গিয়েছে। লম্বা ছুটির পর তরতাজা ইস্টবেঙ্গল এ বার নর্থইস্টকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললে অবাক হবেন না।

কিন্তু দুই উইংয়ে নন্দকুমার ও মহেশের মতো দুই অস্ত্র কি পাবেন ব্রুজোন? দলে পিভি বিষ্ণু, ডেভিড লালনসাঙ্গার মতো দুই অ্যাটাকার আছেন, যাঁদের দুই উইংয়ে খেলাতে পারেন লাল-হলুদ কোচ। মাঝমাঠে সল ক্রেসপো, মাদি তালালরা যদি খেলেন, তা হলে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে গোলের পাস বাড়ানোর লোকের অভাব হবে না।

নর্থইস্ট যেমন ২১ গোল দিয়েছে, তেমন ১৫ গোল খেয়েছেও। তাই তাদের রক্ষণকে দুর্ভেদ্য বলা যাবে না। গত ম্যাচেও মিগুয়েল জাবাকো, দীনেশ সিং, আশির আখতার, সামতেরা গোল অক্ষত রাখতে পারেনি। মহমেডান ও জামশেদপুর বাদে অন্য সব ম্যাচেই গোল খেয়েছে তারা। গোলকিপার গুরমিত সিং ক্লিন শিটের তালিকায় রয়েছেন চার নম্বরে। রক্ষণের এই দুর্বলতাকে নিশ্চয়ই কাজে লাগাতে চাইবে কলকাতার দল।

নর্থইস্টের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র এখন তাদের ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই। যিনি পরপর দু’মাস আইএসএলের সেরা ফুটবলারের খেতাব ছিনিয়ে নিয়েছেন। মরক্কোর এই ৩১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডই নর্থইস্টের প্রতিপক্ষদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। ইতিমধ্যেই ন’টি ম্যাচে ১১টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। গত ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি ছাড়া এর আগে প্রতি ম্যাচে গোল করেছেন তিনি। পাঞ্জাব-ম্যাচের আগে তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতে দুটি করে গোল করেন। চারটি অ্যাসিস্টও করেছেন। অর্থাৎ দলের ২১ গোলের মধ্যে ১৫টিতেই তাঁর অবদান রয়েছে। কোনও প্রতিপক্ষই তাঁকে আটকে রাখার রাস্তা খুঁজে পাননি।

গোলের জন্য নর্থইস্ট অনেকটাই নির্ভর করে আজারেইয়ের ওপর। তাঁকে বোতলবন্দী করে রেখে দিতে পারলে নর্থইস্টের আক্রমণের তীব্রতা অনেকটাই কমে যেতে পারে। শুক্রবার ব্রুজোন তাঁর ফুটবলারদের তাঁকে আটকানোর কোন কৌশল অবলম্বন করার নির্দেশ দেন, সেটাই দেখার।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: লিগে এখনও প্রথম জয় অধরা, তবে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে নতুন ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে, আশাবাদী কোচ