ভুবনেশ্বর: কোচ, মাঠ, সবই বদলেছে, খালি বদলাল না ভাগ্য। ওড়িশার বিরুদ্ধেও (Odisha FC vs East Bengal) পরাজিত হল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের স্কোরলাইন ওড়িশার পক্ষে ২-১। নাগাড়ে ছয় ম্যাচ হেরে লজ্জার রেকর্ড স্পর্শ করল লাল হলুদ। আইএসএলের ইতিহাসে এটি যুগ্মভাবে কোনও দলের সবথেকে খারাপভাবে মরশুম শুরু। ২০২২-২৩ সালে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসিও নিজেদের মরশুমের প্রথম ছয় ম্যাচেই হেরেছিল। ইস্টবেঙ্গলও এবার সেই লজ্জার রেকর্ডের অংশীদার।


মঙ্গলবার ওডিশা এফসি ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে লিগ টেবলের সাত নম্বরে উঠে আসে। ২২ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণা গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন লাল-হলুদের গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। কিন্তু ৬৯ মিনিটের মাথায় ফ্রি-কিক থেকে হেড করে যে গোল করেন কলিঙ্গ-বাহিনীর দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফল, সেই গোলেই এই ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়ে যায়।


এ দিন জয়ী ওডিশা এফসি যেখানে ন’টির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, সেখানে ইস্টবেঙ্গল এফসি ১৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করে। প্রতিপক্ষের বক্সে ওডিশা ১৮ বার বল ছুঁয়েছে, ইস্টবেঙ্গল ছুঁয়েছে ২৭ বার। ফাইনাল থার্ডে ওডিশার পাসের সংখ্যা ছিল ৪৭, ইস্টবেঙ্গলের ৪৫। দুই দলই চারটি করে শট লক্ষ্যে রাখে। এই পরিসংখ্যান দেখে ফল না জানা যে কোনও ফুটবল প্রেমীই বলবেন, সারা ম্যাচেই দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। কিন্তু ফল দেখে তিনি অবশ্যই অবাক হবেন।


এ দিন দলে চারটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান ইস্টবেঙ্গলের নয়া কোচ অস্কার ব্রুজোন। জিকসন সিং, দিয়ামান্তাকস, পিভি বিষ্ণু ও হিজাজি মাহেরকে তিনি প্রথম এগারোয় ফিরিয়ে আনেন ডেভিড লালনসাঙ্গা, ক্লেটন সিলভা, শৌভিক চক্রবর্তী ও হেক্টর ইউস্তের জায়গায়। অন্য দিকে, এ দিন দিয়েগো মরিসিওর জায়গায় ওডিশার হয়ে শুরু থেকে মাঠে ছিলেন রয় কৃষ্ণা।


২২ মিনিটের মাথায় রয়ের গোলেই এগিয়ে যায় ওডিশা এফসি। ফিজিয়ান ফরোয়ার্ড আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল এফসির বিরুদ্ধে তাঁর চতুর্থ গোলটি করেন। বাঁ দিকের ফাঁকা জায়গা থেকে কৃষ্ণার জন্য এক দূরপাল্লার থ্রু পাঠান তরুণ প্রতিভাবান ইসাক ভানলালরুয়াতফেলা। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিলেন তারকা স্ট্রাইকার এবং অতিথি দলের ডিফেন্সে চিড় ধরিয়ে সহজেই গোলের দিকে এগিয়ে যান এবং ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলরক্ষক প্রভসুখন সিং গিলকে ধোঁকা দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন (১-০)।


প্রথমার্ধের শেষে নিজেদের বক্সে মিডফিল্ডার থোইবা সিংয়ের হ্যান্ডবলের কারণে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। পেনাল্টির আগে পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রেখেছিল ওডিশা। পেনাল্টির সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেন দিয়ামান্তাকস। আইএসএলে পাঁচটি ম্যাচে গোলহীন থাকার পর অবশেষে গোল পান তিনি। বাঁ পায়ের শটে বলকে গোলের নিচের ডান কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি (১-১)।


দ্বিতীয়ার্ধে, ওডিশা এফসি আবার খেলা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং লোবেরার নির্ভরযোগ্য দুই খেলোয়াড়ের জুগলবন্দি মুর্তাদা ফল এবং আহমেদ জাহু ফের তাঁর মুখে হাসি ফোটান। ডান প্রান্ত থেকে জাহুর দূরপাল্লার ফ্রি-কিক ফলের জন্য ছিল যথেষ্ট। ৬৯তম মিনিটে জাহুর অসাধারণ ডেলিভারিটি নিখুঁত ভাবে ফলের দিকে যায় এবং তিনি হেড দিয়ে বলটি জালে জড়ান এবং দলকে ফের জয়ের দিকে টেনে নিয়ে যান।


যখন প্রভাত লাকরা ৭৬তম মিনিটে জাহুকে কড়া ট্যাকল করার জন্য দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান, তখন ইস্টবেঙ্গল এফসি বড় ধাক্কা খায়। একজন খেলোয়াড় কম থাকায়, তারা সঙ্ঘবদ্ধ ওডিশা এফসির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই জারি রাখতে পারেনি। ফলে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে হোম টিমই।


ইস্ট বেঙ্গল এফসি আইএসএলের ইতিহাসে এখন দ্বিতীয় দল, যারা তাদের মরশুমের প্রথম ছ’টি ম্যাচে হারল, এর আগে ২০২২-২৩ মরশুমে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি তাদের প্রথম দশটি ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: ১২ মাসের অপেক্ষার অবসান, আল হিলালের হয়ে মাঠে ফিরলেন নেমার জুনিয়র