হায়দরাবাদ: ত্রিদেশীয় ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচেও জিততে পারল না ভারত। সিরিয়ার (India vs Syria) কাছে ০-৩-এ হারল মানোলো মার্কেজের দল। পরপর দুই ম্যাচে জিতে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতে নিল সিরিয়া। জানুয়ারিতে এএফসি এশিয়ান কাপে সিরিয়ার কাছে এক গোলে হেরেছিল ভারত। সোমবার হায়দরাবাদে মূলত তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দুই দলের দ্বৈরথে আরও বড় ব্যবধানে জিতল বিশ্বের ৯৩ নম্বর ফুটবল খেলিয়ে দেশটি।



হারলেও ভারত এ দিন দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত ভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে সিরিয়ার দাপট সামলে যে দ্বিতীয়ার্ধে তারা ও ভাবে আক্রমণের ঝড় তুলবে, তা বোধহয় কেউই ভাবতে পারেনি। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে যাওয়া ও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার রোগ ফের একবার ভারতকে পিছিয়ে দিল। তবে এ দিন ভাগ্যও ভারতকে সাহায্য করেনি। তিনটি অবধারিত গোলের শট অনবদ্য সেভ করেন সিরিয়ার গোলকিপার এলিয়াস হাদায়া। তিনি দক্ষতা না দেখাতে পারলে স্কোর সম্পুর্ণ অন্যরকম হত।

ম্যাচের পরে তাই একই সঙ্গে হতাশ ও খুশি ভারতের নয়া কোচ মানোলো মার্কেজ বলেন, “প্রথমার্ধে দলের খেলায় আমি অখুশি ছিলাম। দলের ছেলেরা খুব ভয়ে ভয়ে খেলছিল। দ্বিতীয়ার্ধে অনেক সাহসী ফুটবল খেলেছে ওরা। এক হাজার গুন ভাল খেলেছে। ৩-০ স্কোরটা সঠিক হয়নি। আমাদের অন্তত দু’গোল পাওয়া উচিত ছিল। তবে আমি খুশি, আজ আমরা অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছি, যা প্রথম ম্যাচে পারিনি। আমরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করতে পারিনি, কিন্তু ওরা পেরেছে। ওরা কাউন্টার অ্যাটাকে অনবদ্য”।

এ দিন সাত মিনিটের মাথাতেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সিরিয়ার মিডিও মহমুদ আলাসোয়াদ। তাঁর প্রথম শট ভারতীয় ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে তাঁর কাছেই ফিরে আসে। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তিনি প্রায় চিপ করে বলটি গোলে পাঠিয়ে দেন, যা হয়তো ঠিকমতো দেখতে পাননি গুরপ্রীত (১-০)।

ভারতীয় রক্ষণের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে এবং দশ মিনিটের মাথায় আলাদ্দিন দালির শট ক্রশবারে না লাগলে আরও এক গোলে এগিয়ে যেত সিরিয়া। আক্রমণের তীব্রতায় প্রতিপক্ষকে ক্রমশ কোণঠাসা করে দেয় সিরিয়া। ২০ মিনিটের মাথায় ফের মাঝমাঠের খেলোয়াড় দালেহো ইরানদাস্ত ফের ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান। তবে গোলের সামনে থেকে বল গোলের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

পাল্টা আক্রমণের চেয়ে নিজেদের রক্ষণ সামলাতে এ দিন বেশি ব্যস্ত ছিল ভারত। দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই নেমে আসেন রক্ষণে। দু-একবার ভারত প্রতি আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও তাদের বেশিরভাগ সময়েই বক্সের বাইরে আটকে দেন খালেদ, আয়হাম ওউসুরা। কেন যে তাঁরা বিশ্ব ক্রমতালিকায় ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দেন সিরিয়ার ফুটবলাররা।

শুভাশিস বোস একটি ইতিবাচক আক্রমণ তৈরি করেন ২৮ মিনিটের মাথায়, যখন বাঁদিক দিয়ে ওভারল্যাপে উঠে তিনি বক্সের মধ্যে ক্রস দেন। সেই ক্রসে হেড করেন ছাঙতে। কিন্তু তা বারের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ৩০ মিনিটের পর থেকে ভারতের প্রতি আক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্ত তাদের আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা তৈরি করতে দেননি সিরিয়ান ডিফেন্ডাররা। ছাঙতে, নন্দকুমার, সহালদের প্রতিটি আক্রমণ তৈরির চেষ্টাই বানচাল করে দেয় থায়ের ক্রুমার দল।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে ভারতের আক্রমণের তীব্রতা চরম পর্যায়ে পৌঁছয়। বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে কোণাকুনি শট নেন সহাল, যা অসাধারণ দক্ষতায় আটকে দেন গোলকিপার এলিয়াস হাদায়া। ফিরতি বলে মনবীরও গোলে শট নেন। কিন্তু তা ব্লক হয়ে যায়। এই শেষের কয়েক মিনিটই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে ভারত। কিন্তু কাজের কাজটি করতে পারেনি তারা।

বিরতির পর আপুইয়া ও আশিস রাইকে নামায় ভারত। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ তৈরির জন্য এবং উইংয়ে আরও তৎপরতার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেন কোচ মার্কেজ। যে পরিকল্পনা নিয়ে আশিসকে নামানো হয়েছিল, শুরুতেই তা করে দেখান তিনি। ডানদিক থেকে বক্সের মধ্যে মনবীরকে বল পাঠান তিনি। কিন্তু মার্কারের চাপে তিনি তা গোলে ঠেলতে না পেরে ফের আশিসকেই দিয়ে দেন। আশিস পাঠান বক্সের বাঁদিকে ছাঙতের কাছে। তিনি ফের ক্রস পাঠান মনবীরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ঠিকমতো মাথায় বল লাগাতে পারেননি তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে ভারত। বল পজেশন বাড়িয়ে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু যখন তাদের দখলে আসে বল, তখন খেলার গতি ক্রমশ কমানোর চেষ্টা করে সিরিয়া। তবু ভারতকে দমাতে পারেনি তারা। ৫৫ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন ছাঙতে, যা অনবদ্য দক্ষতায় সেভ করেন গোলকিপার।

যাট মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে আক্রমণ তৈরি করেন আশিস রাই। তাঁর পা থেকে নন্দকুমার ও সহালের পা হয়ে বল আসে গোলের সামনে মনবীরের কাছে। ঠিকমতো হেড করতে পারলে তিনি গোল পেতেন হয়তো। কিন্তু তাঁর মাথার পিছন দিকে লেগে বল চলে যায় ছাঙতের কাছে। বক্সের বাঁ দিক থেকে গোলে শট নেন তিনি। কিন্তু তাঁর শট ব্লক করেন এক ডিফেন্ডার।

প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের মাঝমাঠ থেকে অনেক বেশি গোলের সুযোগ তৈরি হয়, যার ফল পান অ্যাটাকাররা। ৬৭ মিনিটের মাথায় সহালের জায়গায় নামা মহেশ বাঁ দিক থেকে ক্রস বাড়ান উল্টোদিকে নন্দকে। বাঁদিকের পোস্টের সামনে তাঁর ভলি থেকে গোলে বল ঠেলার চেষ্টা করেন ছাঙতে। কিন্তু এ বারও বাধা হয়ে দাঁড়ান গোলকিপার হাদায়া।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে প্রায় ৭০ মিনিট পর্যন্ত ভারত দাপুটে ফুটবল খেলা সত্ত্বেও যখন সমতা আনতে পারেনি, তখন ক্রমশ খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু করে সিরিয়া এবং ৭৬ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন দালেহো। বক্সের ডানদিকে প্রায় ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যান তিনি। বক্সে ঢুকে আনোয়ার আলিকে ধোঁকা দিয়ে কাট ইন করে আনোয়ার ও রাহুল ভেকের ফাঁক দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন দালেহো, জাতীয় দলের হয়ে এটিই যাঁর প্রথম গোল (২-০)।

নির্ধারিত সময়ের শেষ পাঁচ মিনিটে ভারত ফের আক্রমণের চেষ্টা শুরু করে ভারত। ৮৬ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে দূররপাল্লার শট নেন পরিবর্ত এডমন্ড লালরিন্ডিকা। পরবর্তী মিনিটেই কর্নার থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন মহেশ। এই দুই শটই অসাধারণ দক্ষতায় কার্যত আঙুল দিয়ে বাঁচান হাদায়া। এর পরেই ছাঙতের গোলমুখী ভলি ক্রশবারের ওপর গিয়ে পড়ে। এডমন্ডের সঙ্গে লিস্টন কোলাসোও এ দিন রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামেন। স্টপেজ টাইমে প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর শট গোলকিপারের হাতে লেগে বারের নীচে লেগে গোললাইনের বাইরে পড়ে।

স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে মাহমুদ আল মাওয়াসের বাড়ানো বল পেয়ে যখন গোলে বল ঠেলেন পাবলো সাব্বাগ (৩-০), তখন ভারতের বক্সে ভারতের বক্সে মাত্র দু’জন ফুটবলার ছিলেন।


ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিং সান্ধু (গোলকিপার, অধিনায়ক), নিখিল পূজারী (আসিশ রাই, ৪৬'), রাহুল ভেকে, আনোয়ার আলি, শুভাশিস বোস, সহাল আব্দুল সামাদ (নাওরেম মহেশ সিং, ৬৪'), সুরেশ সিং ওয়াংজাম (লালেংমাওইয়া রালতে, ৪৬'), জিকসন সিং, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, মনবীর সিং (লিস্টন কোলাসো, ৭৭'), নন্দকুমার শেকর (এডমুন্ড লালরিন্ডিকা, ৭৭')। (তথ্যসূত্র - ISL মিডিয়া)


আরও পড়ুন: শামি-সিরাজের মতোই... ভারতীয় দলের পরবর্তী সুপারস্টার পেসারকে বেছে নিলেন সৌরভ