নয়াদিল্লি: বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও আগামী এশিয়ান কাপে ভারতের খেলার সম্ভাবনা এখনও যথেষ্ট রয়েছে। সেই পরীক্ষায় ওতরাতে হবে আগামী বছর মার্চ মাসে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে। তার প্রস্তুতির জন্য যে তিনটি আন্তর্জাতিক উইন্ডো রয়েছে, তার দ্বিতীয়টি চলছে এখন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই উইন্ডোকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না ভারত। যতটা ম্যাচটাইম এই সময়ে পাওয়ার কথা ছিল মানোলো মার্কেজের দলের, ততটা সময় তারা পাচ্ছে না। কিন্তু যেটুকু সময় পাচ্ছে ভারতীয় দল, সেই সময়টুকুই কাজে লাগিয়ে নেওয়াই এখন তাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 


শনিবার সেই লক্ষ্য নিয়েই ভিয়েতনামের (India Vs Vietnam) নাম ডিন শহরের থিয়েন ট্রুং স্টেডিয়ামে আয়োজক দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে মার্কেজের ভারত, যারা সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরুর ঠিক আগে দেশের মাঠে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে সিরিয়ার কাছে তিন গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায়। তার আগে মরিশাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে তারা। গত বছর নভেম্বরের পর থেকে এখনও জয়ের মুখ দেখেনি ভারতীয় দল। 


অক্টোবরের ফিফা উইন্ডোয় যে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল ভিয়েতনামে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য লেবানন সেই টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পরিবর্তন করা হয়েছে। ভারতের যেখানে দুটি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, সেখানে শনিবারের ম্যাচ খেলেই দেশে ফিরে যেতে হবে তাদের। একসঙ্গে আর কোনও ম্যাচে নামার সুযোগ পাচ্ছেন না লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরা।  


সেপ্টেম্বরের টুর্নামেন্টের চেয়ে এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তফাৎ হল, গত টুর্নামেন্ট আইএসএলের আগে হওয়ায় ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা তখন প্রাক মরশুম পর্যায়ে ছিল ফলে ফিটনেস ও দক্ষতার প্রস্তুতি তাদের পুরোপুরি হয়নি তখন। এ বার যেহেতু আইএসএলের তিন-চারটি করে ম্যাচ হয়ে গিয়েছে এবং দলের সব খেলোয়াড়ই আইএসএলের বিভিন্ন দল থেকে এসেছে, তাই ফিটনেস ও দক্ষতা দু’দিক দিয়েই তারা অনেকটা তৈরি এবং ম্যাচের মধ্যেই রয়েছেন।  


এই ভারতীয় দলে কয়েকজন নতুন মুখ রয়েছে, যেমন ডিফেন্ডার আকাশ সাঙ্গওয়ান ও ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার লালরিনলিয়ানা হ্নামতে, যারা প্রথম জাতীয় দলের ডাক পেয়েছেন। ২০১৮ সালে আত্মপ্রকাশ করা ও ভারতের হয়ে ১৪ টি ম্যাচ খেলা ফরোয়ার্ড ফারুখ চৌধুরি তিন বছর পর ভারতীয় দলে ফিরেছেন। দু’বছর আগে যে ভারতীয় দল ভিয়েতনাম সফরে গিয়েছিল, সেই দলের দশজন ভারতীয় ফুটবলার এই দলেও রয়েছেন। গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু থেকে শুরু করে আনোয়ার আলি, জিকসন সিং, চিংলেনসানা সিং, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, লিস্টন কোলাসো, বিক্রম প্রতাপ সিং পর্যন্ত অনেকেই ওখানে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। 


দলের তিন গোলকিপারই ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার যোগ্য। তবে বিশাল কয়েথ এখনও দেশের জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। গোল অক্ষত রেখে মাঠ ছাড়তে পারবে কি না ভারতীয় দল, তা যেমন নির্ভর করবে গোলকিপারদের ওপর, তেমনই ডিফেন্ডার নিখিল পূজারি, আনোয়ার আলি, শুভাশিস বোস, আশিস রাইদেরও কাঁধে সেই দায়িত্ব থাকবে। গত দুই ম্যাচে গোল না পাওয়ার পর এই ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলের মুখ খোলার দায়িত্ব এডমন্ড লালরিন্ডিকা, ফারুখ চৌধুরি, মনবীর সিং, বিক্রম প্রতাপ সিংদের। 


মাঝমাঠ থেকে তাঁদের সাহায্য করবেন সুরেশ সিং ওয়াংজাম, জিকসন সিং, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, লিস্টন কোলাসো, আপুইয়া, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরা। তবে গত দুই ম্যাচে যে ভাবে প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি তাঁরা, এই ম্যাচে সেই সমস্যা না মিটলে এ বারও জয় না পেয়েই মাঠ ছাড়তে হবে তাদের।  


আরও পড়ুন: ইডেন থেকে সরে গেল রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ! কোথায় খেলতে হবে বাংলা দলকে?


চলতি শতকে ফুটবল মাঠে খুব বেশিবার ভিয়েতনামের মুখোমুখি হয়নি ভারতের সিনিয়র দল। শনিবারের ম্যাচটি হতে চলেছে চলতি শতকে দুই দেশের চতুর্থ ম্যাচ। ২০০৪-এ হো চি মিন সিটিতে ২-১-এ জিতেছিল ভিয়েতনাম। ২০১০-এ পুনেয় সুনীল ছেত্রীর হ্যাটট্রিকে জেতে ভারত এবং ২০২২-এ হো চি মিন সিটিতে ৩-০-য় জেতে আয়োজক দেশ। দু’বছর আগের সেই ম্যাচের ১৩ জন ফুটবলার এ বারের ভিয়েতনাম দলেও রয়েছেন। সেই ম্যাচের দুই গোলদাতা নগুইয়ান ভ্যান তোয়ান ও নগুইয়ান ভ্যান কুইয়েতও রয়েছেন এই দলে। 


ভারতের মতো এই ভিয়েতনাম দলও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ছিটকে গিয়ে নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে আবার নতুন ভাবে নিজেদের তৈরি করছে। ফিফার ক্রমতালিকায় ১১৬ নম্বরে থাকা ভিয়েতনাম গত জুন থেকে দক্ষিণ কোরিয়ান কোচ কিম স্যাঙ সিক-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং চারটির মধ্যে একটি ম্যাচ জিতেছে। সেপ্টেম্বরে তারা ফিলিপিন্সকে হারালেও হেরে যায় রাশিয়া ও তাইল্যান্ডের কাছে। গত ১১টি ম্যাচের মধ্যে দশটিতেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে তাদের। দুই দলই জয়ের স্বাদ পেতে মরিয়া। তাই শনিবারের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ভারতীয় কোচ। 


“দুই দলেই ভাল ভাল ফুটবলার রয়েছে। কিন্তু যেহেতু আমরা দেশের বাইরে এসে খেলছি, তাই আমাদের পক্ষে কাজটা একটু বেশিই কঠিন। আমরা এখন আগের চেয়ে ফিট ঠিকই, তবে আরও উন্নতি করতে পারি। মাসখানেক হল আমাদের লিগ শুরু হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ১০-১২টা ম্যাচ না খেললে একজন ফুটবলার তার সেরা ছন্দে আসতে পারে না। তবে ভিয়েতনামের লিগেও চার রাউন্ড হয়েছে। তাই ওদের অবস্থাও একই রকম”, বলেন ভারতীয় দলের কোচ। 


তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা মিশিয়ে এই দল তৈরি করেছে ভিয়েতনাম। দলের বেশিরভাগেরই গড় বয়স ২৬। তবে দু’জন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় চোটের জন্য এই দলে নেই। ২৭ সদস্যের এই দল গত ৫ অক্টোবর থেকে এই ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে তারা এখানকার লিগ চ্যাম্পিয়ন ক্লাবের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে। 


ভারতীয় দল সোমবার ভিয়েতনামের নাম ডিনে পৌঁছে প্রথম অনুশীলন করে। অর্থাৎ, ম্যাচের আগে পাঁচ দিন অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন ভারতীয় ফুটবলাররা। বেশ কয়েক দিন অনুশীলনের সুযোগ পাওয়ায় দলের উপকারই হবে বলে মনে করেন মার্কেজ। এর ফল পাওয়া যাবে কি না, সেটাই দেখার। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: অগ্নিপরীক্ষার সামনে সেঞ্চুরিকে কেরিয়ারের সেরা বাছলেন সুদীপ, তবু চাপ কাটাতে পারল না বাংলা



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।