কলকাতা: অদূর অতীতে মোহনবাগানে মহা তারকা হয়ে উঠেছেন অনেকেই। কোচেরা বলেন ঠিকই যে, ফুটবল আসলে টিমগেম, এই খেলায় ভাল হলেও যেমন দলের কৃতিত্ব, তেমনই খারাপ হলেও দলেরই দায়। কিন্তু কলকাতার দুই প্রধানে চিরকালই তারকাদের উদয় হতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের দেবতার আসনে বসিয়ে প্রায় পূজা করেছেন সমর্থকেরা। সবুজ-মেরুন বাহিনীতে এক সময়ে দেখা গিয়েছে চিমা ওকেরিকে, দেখা গিয়েছে হোসে রামিরেজ ব্যারেটোকে, তার পরে এসেছেন সনি নর্দে, রয় কৃষ্ণরা। এখন দিমিত্রিয়স পেত্রাতস যুগ। 


এ বারের আইএসএলে গোল্ডেন বল পুরস্কার জিতে পেত্রাতস আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন, সত্যিই তিনি সেরা। মরশুমের শুরু থেকেই সমর্থকেরা বলতে শুরু করেন দিমিত্রিয়স পেত্রাতস ছাড়া মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট অচল। যে ম্যাচে এই অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড ভাল খেলতে পারেননি, সেই ম্যাচে মোহনবাগানও ভাল কিছু করতে পারেননি। পুরোটা যে ভুল বলেননি, তা অনেক ম্যাচেই দেখা গিয়েছে। এ মরশুমের মাঝখানে পেশীর চোট পেয়ে বাইরে ছিলেন তিনি। সেই সময়ে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের ঘুম চলে গিয়েছিল। 


এ বারের আইএসএলে সব মিলিয়ে যে ছ’টি ম্যাচে হেরেছে মোহনবাগান, তার বেশির ভাগ ম্যাচেই ফর্মে ছিলেন না পেত্রাতস। উল্টো দিক থেকে দেখতে গেলে, দলের ছ’টি জয়ে গোল করে সরাসরি অবদান রেখেছিলেন পেত্রাতস। তিনি গোল করেছেন, অথচ দল হেরেছে, এমন ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার। 


এ বারের লিগে মোট দশ গোল করেছেন এই অস্ট্রেলীয় তারকা ও সাতটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে দলের ১৭টি গোলে অবদান ছিল তাঁর। ২৩টি ম্যাচে খেলেছেন। তার মধ্যে শুরু করেছেন ২১টিতে। প্রতিটিতেই দলের খেলায় তাঁর প্রভাব ছিল যথেষ্ট। সব মিলিয়ে এই মরসুমে আইএসএলের দশটি গোল-সহ মোট ১৫টি গোল করেছেন অস্ট্রেলীয় তারকা ফরোয়ার্ড। চলতি মরশুমে আইএসএলে সাতটি অ্যাসিস্ট-সহ দিলেও অন্যান্য টুর্নামেন্ট-সহ সারা মরশুমে তাঁর অ্যাসিস্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১। অর্থাৎ, এ মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের হয়ে তিনি ২৬টি গোলে অবদান রেখেছেন।


পেট্রাটসের পায়ে বল পড়া মানেই যে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে যাওয়া, বারবার এমনই দেখা গিয়েছে মোহনবাগান ম্যাচে। গত আইএসএলে তিনি ২৩টি ম্যাচে মোট ২০৯১ মিনিট মাঠে থেকে ১২টি গোল করেছিলেন ও সাতটি করিয়েছিলেন। সেবার ৬১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি। এ বার এ পর্যন্ত ২৩টি ম্যাচে ১৮৯৬ মিনিট মাঠে থেকে দশটি গোল করেছেন ও সাতটি করিয়েছেন। মোট ৬০টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। তাঁর কনভারশন রেট বা শটকে গোলে রূপান্তরিত করার শতকরা হার ১৪.৯৩%।


সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় পেট্রাটস ছিলেন ন’নম্বরে। সাতটি অ্যাসিস্ট দিয়ে তিনি ক্রিভেলারো, মনবীরের সঙ্গে ছিলেন দুই নম্বরে। ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ ও তিনি ৬০টি করে গোলের সুযোগ তৈরি করে ছিলেন সবার ওপরে। যে ম্যাচে গোল করতে পারেননি, সেই ম্যাচে অন্য সব রকম ভাবে সাহায্য করেছেন দলের প্রতি নিবেদিত এই ফুটবলার।                                                                                                      তথ্য় সংগ্রহ: আইএসএল