কলকাতা: চলতি বছরের শুরুতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Super Giant) কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তাঁর প্রশিক্ষণাধীন দল টানা আটটি ম্যাচে অপরাজিত থাকে, যার মধ্যে ছিল ছ’টি জয় ও দু’টি ড্র। কিন্তু দলের ছন্দপতন হয় হাবাস হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায়। সাইডলাইনে তাঁর অনুপস্থিতির প্রভাব পড়ে দলের পারফরম্যান্সেও। ঘরের মাঠে লিগ টেবলের এগারো নম্বরে থাকা দল চেন্নাইন এফসি-র কাছে অপ্রত্যাশিত হার তাদের লিগশিল্ড জয়ের রাস্তা কঠিন করে তুলেছে। 


আপাতত যা অবস্থা, তাতে শেষ তিনটি ম্যাচে না জিতলে মোহনবাগানের লিগশিল্ড জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে এবং এই তিনটির প্রথমটি শনিবার তারা খেলতে নামছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে, পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে, যাদের বিরুদ্ধে এবারের আইএসএল অভিযান শুরু করেছিল মোহনবাগান, ঘরের মাঠে ৩-১ জয় দিয়ে। 


গত ম্যাচে সপ্তাহ দুয়েক ছুটির পর প্রথম মাঠে নেমে চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে যে ভাবে হারে মোহনবাগান, তাতে স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, ছুটিতে দলের ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রক্ষণ থেকে আক্রমণ, সর্বত্র আগোছালো ভাব দেখা যায় তাদের পারফরম্যান্সে। সবচেয়ে বড় কথা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস সে দিন উজ্জ্বল না থাকায় দলের আক্রমণও অনেকটা ধারহীন হয়ে পড়ে। মাঝমাঠে জনি কাউকোও সে দিন ছন্দে ছিলেন না। 


মোহনবাগানের রক্ষণও সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত দু’টি ম্যাচে তিন গোল করে হজম করেছে তারা। চলতি লিগে এর আগে শুধু এফসি গোয়ার কাছে চার গোল খেয়েছিল তারা। আর কোনও ম্যাচেই তিন বা তার বেশি গোল খায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনী। চেন্নাইন এফসি ম্যাচের ভুল শুধরে এই ম্যাচে খেলতে না পারলে পেট্রাটসদের কপালে দুঃখ আছে। কিন্তু তাঁদের ভুল যাঁর শুধরে দেওয়ার কথা সেই আন্তোনিও হাবাসই তো অসুস্থ। এই অবস্থায় দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কি না জেসন কামিংসরা, এই ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় এটিই।  


শনিবার তাদের প্রতিপক্ষ এ বারই প্রথম আইএসএলে খেলছে, যারা গত মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের এক নম্বর লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু আইএসএলের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ধাতস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায় পাঞ্জাবের দলটির। লিগের প্রথম জয়ের মুখ দেখতে তাদের লেগে যায় এগারোটি ম্যাচ। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে প্রথম জয় পাওয়ার পর ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে গ্রিক কোচ স্টাইকোস ভার্গেটিসের দল। পরের দশটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পায় তারা, একটিতে ড্র করে ও চারটিতে হেরে যায়। 


চলতি লিগে পাঁচটি দল প্লে অফে জায়গা পাকা করেই ফেলেছে। ছ’নম্বর জায়গাটির জন্য লড়ছে পাঁচটি দল। তাদের মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাব এফসি, যারা আপাতত ২০ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে লিগ টেবলের দশ নম্বরে। এশিয়ান কাপের জন্য অবকাশের পর যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসা করতেই হবে। 


লিগ শুরুর পর থেকে টানা ১৩৫ দিন তারা টেবলের নীচে তিনটি দলের মধ্যে থাকে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৩-১-এ হারানোর পর তারা ন’নম্বরে উঠে আসে। শেষ তিন থেকে সেই প্রথম বেরিয়ে আসে তারা। অবকাশের পর আটটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিতে ও একটি ড্র করে ১৩ পয়েন্ট অর্জন করে তারা। কিন্তু গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে হারায় ও একটিতে ড্র করায় তারা আবার শেষ তিনে ঢুকে পড়েছে। 


শনিবার যদি তারা মোহনবাগানের কাছে হেরে যায়, তা হলে ছ’নম্বরের দৌড় থেকে অবধারিত ভাবে ছিটকে যাবে। তাই ঘরের মাঠে শনিবার জেতার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবেন মাদি তালাল-রা। যদিও ঘরের মাঠে তাদের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। চলতি লিগে যে পাঁচটি ম্যাচে তারা জিতেছে, তার মধ্যে মাত্র দু’টি ছিল ঘরের মাঠে। বাকি তিনটি বাইরে। 


লুকা মাজেন (২০ ম্যাচে ৭ গোল), উইলমার জর্ডন (১৩ ম্যাচে ৬ গোল), মাদি তালাল-ই (২০ ম্যাচে ৫ গোল) এই দলের প্রধান ভরসা। হুয়ান মেরাও মাঝমাঠের ভরসা। এই তিন-চারজন খেলোয়াড়ের ওপর কড়া পাহাড়া রাখতে হবে মোহনবাগানকে। রক্ষণ যদি তাদের আটকাতে না পারে, তা হলে হয়তো এ বারেও লিগশিল্ড জয়ের স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে তাদের। (তথ্যসূত্র - ISL Media)


আরও পড়ুন: কেকেআরের ড্রেসিংরুমে বরুণ-নারাইনদের সঙ্গে খুনসুটি শাহরুখের, কী বললেন বাজিগর?




আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।