কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) প্রথম ম্যাচে অল্পের জন্য জয় হাতছাড়া হওয়ার পর আফসোস করলেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (MBSG) কোচ হোসে মোলিনা (José Francisco Molina) দলের ওপর আস্থা রেখেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেই সেই আস্থার দাম দিলেন তাঁর দলের ফুটবলাররা, দলকে এক দুর্দান্ত জয় এনে দিয়ে। 


সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বিরতিতে ১-২-এ পিছিয়ে থাকার পরেও শেষ পর্যন্ত ৩-২-এ ম্যাাচ জিতে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ডুরান্ড কাপ ফাইনালের চেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় পরষ্পরকে। চার মিনিটের মাথায় মরক্কান মিডফিল্ডার মহম্মদ আলি বেমামের ও তার পাঁচ মিনিট পরেই বাংলার তরুণ ডিফেন্ডার দীপ্পেন্দু বিশ্বাস দুর্দান্ত গোল করে ১-১ করে ফেলেন। ২৪ মিনিটের মাথায় আর এক মরক্কান আলাদ্দিন আজারেই দলকে ফের এগিয়ে দেন। বিরতির পর ৬১ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের অধিনায়ক, আর এক বঙ্গসন্তান শুভাশিস বোস ফের সমতা আনেন এবং শেষে কামিংসের গোলে তাদের সেই মরিয়া লড়াই সফল হয়। 


এ ভাবে দল জয়ের সরণীতে ফেরায় বেশ খুশি কোচ মোলিনা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ম্যাচটা জিততেই চেয়েছিলাম। মরশুমের প্রথম জয় এল। তাই আমি খুশি। এত গোল খাওয়া নিয়ে যে আমি খুশি নই, তা তো আগেও বলেছি। তবে আজ দলের ছেলেরা যে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে, হাল ছেড়ে দেয়নি, সে জন্য আমি খুশি। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে খেলা মোটেই সোজা নয়। ওরা আমাদের প্রথম মিনিট থেকেই চাপে রেখেছিল। অসাধারণ দৌড়েছে। রক্ষণও সামলেছে দারুন। ওরা বারবার আমাদের রক্ষণে চিড় ধরানোর চেষ্টা করেছে। সফলও হয়েছে। তবে আমাদের ডিফেন্ডাররাও খুব ভাল খেলেছে আজ। তবে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। এখনও অনেক ভুল হচ্ছে। সেগুলো শোধরাতে হবে”। 


পাল্টা গোল করে জিতলেও গোল খাওয়ার রোগ সারছে না মোহনবাগানের। এই নিয়ে তাদের কোচ বলেন, “আজকেও আমাদের দু’গোল খেতে হয়েছে, যেটা মোটেই ভাল না। তবে আজ আমাদের ডিফেন্স আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। গত ম্যাচেও আমরা দু’গোল খেয়েছিলাম এবং সেই ম্যাচে জিততে পারিনি। তবে এই ম্যাচে দু’গোল খেলেও আমরা জিতেছি। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, গোল খাওয়া, না জয়? তবে এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয় এবং আমাদের এই নিয়ে আরও পরিশ্রম করতে হবে”। 


এ দিন অসাধারণ এক গোল করে প্রথমবার সমতা আনেন বাংলার ডিফেন্ডার দীপ্পেন্দু বিশ্বাস। বাঁ প্রান্ত থেকে পেট্রাটসের লম্বা ফ্রি কিক উড়ে আসে বক্সের মধ্যে থাকা অরক্ষিত দীপ্পেন্দুর মাথায়। তিনি অনেকটা লাফিয়ে উঠে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে হেড করেন, যা জালে জড়িয়ে যায়। তরুণ ডিফেন্ডারের প্রশংসা করে মোলিনা বলেন, “দীপ্পেন্দু বেশ ভাল গোল করেছে। আমি ওর পারফরম্যান্সে খুশি। খুব পরিশ্রমী ছেলে ও। প্রথম দিন থেকে ও রোজই উন্নতি করছে। আমার মনে হয়, ও নিঃসন্দেহে এখন ভারতের অন্যতম সেরা সেন্টার ব্যাক। ও যদি এরকম খেলে যেতে পারে, তা হলে খুব তাড়াতাড়িই ও জাতীয় দলের হয়েও খেলবে”। 


এ দিন নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ১২ মিনিট আগে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেনকে নামান মোহনবাগান কোচ মোলিনা। এত পরে তাঁকে নামানোর কারণ ব্যাখ্যা করে সবুজ-মেরিন কোচ বলেন, “জেমি এখনও পুরো ফিট নয়। সেজন্যই ওকে ম্যাচের শেষ দিকে নামাই। ক্রমশ ওকে খেলিয়ে ম্যাচফিট করে তুলতে হবে। ৯০ মিনিট খেলার মতো ফিটনেস ওর এখনও আসেনি। জেমি দু’সপ্তাহ আগে অনুশীলন শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ও নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছিল না। আজ ও খেলার পর ব্যথা অনুভব করেনি, এটা ভাল খবর। তবে ও পুরো ফিট না হওয়া পর্যন্ত ওকে অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি, পরের ম্যাচে ও হয়তো আরও বেশিক্ষণ খেলতে পারবে”। 


দলের প্রশংসা করে গর্বিত কোচ বলেন, “আমাদের দল খুবই ভাল। এমন নয় যে এগারোজন খেলোয়াড়ই আমাদের সেরা। যারা বেঞ্চে থাকে, তাদের যে কোনও সময় মাঠে নামানো যায়। তাই আমি কোনও নির্দিষ্ট এগারোজনের দল তৈরি করে রাখি না। যখন এটিকে-র কোচ ছিলাম, তখনও প্রতি ম্যাচে দলে অনেক পরিবর্তন আনতাম। আমার দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই মাঠে নামার জন্য তৈরি থাকে। আমাদের খেলোয়াড়রা যথেষ্ট পরিশ্রমী। ওরা যথেষ্ট প্রতিভাবান। ওদের ওপর ভরসা আছে আমার”। 


ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পাওয়া স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্টও দলের গোল খাওয়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নিয়মিত গোল খাচ্ছি, কারণ, আমাদের রক্ষণে গলদ থাকছে। এই সমস্যা আমাদের দূর করতে হবে। কারণ, প্রতি ম্যাচে ৩-৪টে করে গোল করা তো সম্ভব নয়”। 


ডুরান্ড কাপ ফাইনালে হারের বদলা নিতে পেরে খুশি স্টুয়ার্ট বলেন, “ডুরান্ড কাপের ফাইনালে আমরা খুবই হতাশ হয়েছিলাম। তার পর থেকে আমরা সবার অলক্ষ্যে নিজেদের তৈরি করেছি। আজ সেই প্রস্তুতির ফল পেলাম। আশা করি পরের ম্যাচগুলোতেও আমরা এ রকম বা এর চেয়েও ভাল খেলব”।


দলের আক্রমণ বিভাগের প্রশংসা করে স্টুয়ার্ট বলেন, “গোলের সুযোগ তৈরি করা ও গোল করা আমাদের কাজ। আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করছি। তারই প্রতিফলন দেখলেন আজ। বিরতিতে ১-২-এ পিছিয়ে থাকার পরও ম্যাচটা জিতে শেষ করলাম। আমাদের দল খুবই ভাল। যারা মাঠে খেলছে, যারা বেঞ্চে থাকছে, কেউই কম নয়। জেসন আজ পরিবর্ত হিসেবে নেমে অসাধারণ গোল করেছে। তবে দিমির জন্য খারাপ লাগছে। জেমি আজ কম খেললেও আশা করি পরের ম্যাচগুলোতে আরও বেশিক্ষণ মাঠে থেকে আমাদের সাহায্য করবে”।  


সোমবারের জয় তাদের পরবর্তী লড়াইয়ের জন্য শক্তি ও আত্মবিশ্বাস জোগাল বলে মনে করেন স্টুয়ার্ট। বলেন, “এ বারের লিগে দলগুলো আরও শক্তিশালী মনে হচ্ছে। প্রতিটা পয়েন্ট জেতা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। তাই এই ম্যাচ থেকে যে আত্মবিশ্বাস ও ছন্দ পেলাম আমরা, তা এর পরে কঠিন ম্যাচগুলোতেও কাজে লাগবে আমাদের। এই জয়টা খুবই দরকার ছিল”। (সৌ: ISL)


আরও পড়ুন: মেয়েদের সুরক্ষা ফিরুক, সমাজ হোক অসুর-মুক্ত, আর জি কর আবহে নাচের মাধ্যমে বার্তা ডোনার


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।