কলকাতা: প্রথম তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট পাওয়া সত্ত্বেও পরের দুই ম্যাচে জয়হীন থাকায় যে তিমিরে ছিল মহমেডান এসসি (Mohammedan Sporting), সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। গত দুই ম্যাচে হারের আফসোস ছাড়াও আরও এক আফসোস তাদের আছে, বাইরের মাঠে গিয়ে জয় পেলেও ঘরের মাঠে এখনও জয় আসেনি তাদের। শনিবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই ঘরের মাঠে নামবে সাদা-কালো ব্রিগেড। প্রতিপক্ষ লিগ টেবলের ১২ নম্বরে থাকা হায়দরাবাদ এফসি (Hyderabad FC), যাদের চারটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও তারা এখনও জয়হীন। শনিবার তাদের হারিয়ে জয়ে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে সাদা-কালো বাহিনীর সামনে।
গত চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হারা ও একটিতে ড্র করা হায়দরাবাদ গত মরশুমের মতো এ বারও খুব একটা ভাল শুরু করতে পারেনি। বেঙ্গালুরুতে তিন গোলে হার দিয়ে সফর শুরু করার পর পাঞ্জাবের ঘরের মাঠেও হারে। এর পরে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে তারা গোলশূন্য ড্র করে একমাত্র পয়েন্টটি পায় এবং গত ম্যাচেও জামশেদপুরের কাছে হারে। ফলে খুব একটা ভাল ফর্মে তারা আছে বললে মনে হয় না। এই অবস্থায় শনিবার দুর্বল হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জয়ে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পাবে মহমেডান। এই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
প্রথম তিন ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করে তারা। কোনও ম্যাচে তাদের রক্ষণকে দেখে কখনওই ভঙ্গুর মনে হয়নি। আক্রমণ বিভাগকেও দুর্বল লাগেনি। কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের খেলায় সে সব কিছুই দেখা যায়নি। সে দিন সারা ম্যাচে সাতটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মহমেডান। কলকাতা ডার্বিতে তাদের বেশ চাপে রেখেছিল তাদের অন্যতম চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা।
গত রবিবার ছন্দে ফেরা মহমেডান এসসি কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ২৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে উজবেক মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভের গোলে এগিয়ে যায়। তার পরে ৬৬ মিনিট পর্যন্ত দুর্দান্ত রক্ষণ দক্ষতায় নোয়া সাদাউই, আদ্রিয়ান লুনা, জেসুস জিমিনেজদের মতো তুখোড় অ্যাটাকারদের প্রায় অসহায় করে তোলে সাদা-কালো ব্রিগেডের সৈনিকরা।
কিন্তু ৬৭ মিনিটের মাথায় তাদের এক মুহূর্তের অসাবধানতাকে কাজে লাগিয়ে সমতা এনে ফেলেন পরিবর্ত ফরোয়ার্ড কোয়ামে পেপরা। তার ঠিক আট মিনিট পরেই অসাধারণ এক ক্রসে হেড করে দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জিমিনেজ। সেই ম্যাচেরও শেষ পর্বের ক্লান্তি ভোগায় মহমেডান ফুটবলারদের। ফলে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি গতবারের আইলিগ চ্যাম্পিয়নরা। ৭০ মিনিটের পর খেলা থেকে হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা নিয়মিত ভোগাচ্ছে তাদের। যে সমস্যা দূর করতে না পারলে জয়ে ফেরা কঠিন তাদের পক্ষে।
শনিবার অপেক্ষাকৃত দুর্বল হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে শুরুর দিকেই একাধিক গোলে এগিয়ে যেতে পারলে মহমেডানের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। এ পর্যন্ত চারটি ম্যাচে মাত্র একটি গোল করা হায়দরাবাদের আক্রমণ বিভাগ ততটা শক্তিশালী নয়। প্রতিপক্ষের এই দুর্বলতা নিশ্চয়ই কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে তারা।
গত ম্যাচে জামশেদপুরের কাছে হারের পর হায়দরাবাদের কোচ থাংবোই সিংতো স্বীকার করে নেন, তাঁর দলের আক্রমণ ও রক্ষণ, দুই বিভাগেই উন্নতি প্রয়োজন। গত ম্যাচেই তাদের চলতি লিগের প্রথম গোল আসে সি গদার্ডের পা থেকে। কিন্তু তার আগেই জোড়া গোল হজম করে নেয় তারা। একটি গোল শোধ দিতে পারলেও এর চেয়ে বেশি এগোতে পারেনি হায়দরাবাদ।
দলের দুই ব্রাজিলীয় অ্যাটাকার অ্যালান মিরান্ডা ও আন্দ্রেই আলবা থাকলেও তাঁরা এখনও দলকে গোল এনে দিতে পারেননি। সি গদার্ড এক গোল পেলেও তেমন ভাল ফর্মে নেই। সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচ সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। দুই ভারতীয় ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবি ও রামলুনচুঙ্গা-দেরও অনেক উন্নতি করতে হবে।
শনিবারের ম্যাচে দুই দলের লাতিন ফুটবলারদের মধ্যে লড়াই আকর্যণীয় হয়ে উঠতে পারে। হায়দরাবাদ শিবিরে যেমন রয়েছেন দুই ব্রাজিলীয়, তেমনই মহমেডানের দুই বিদেশী আর্জেন্টিনার অ্যালেক্সি গোমেজ ও ব্রাজিলের কার্লোস ফ্রাঙ্কা রয়েছেন। ফ্রাঙ্কা ভাল ফর্মে থাকলেও গত ম্যাচে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি গোমেজ। ডার্বি থেকেই ফর্ম হারিয়েছেন তিনি। আসন্ন ম্যাচে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফর্ম ফিরে পান কি না, সেটাই দেখার। তাদের আরও চিন্তার বিষয় ঘানার ডিফেন্ডার জোসেফ আজেইয়ের চোট। গত ম্যাচে গুরুতর চোট পাওয়ার পর এই ম্যাচে তিনি অনিশ্চিত।
উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মিরজালল কাসিমভও সাদা-কালো ব্রিগেডের আক্রমণে যথাসাধ্য সাহায্য যেমন করেন, তেমনই রক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। গত ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোলও পেয়েছেন তিনি। মূলত লাতিন জুটির ওপরই নির্ভর করছে দলের সাফল্য। গোলকিপার পদম ছেত্রী, মিডফিল্ডার আদিঙ্গা, উইঙ্গার লালরেমসাঙ্গা ফানাই, বিকাশ সিং-রাও উন্নতির মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু যতক্ষণ না শেষ মিনিট পর্যন্ত একই গতি ও ছন্দ ধরে রাখতে পারছেন তাঁরা, ততক্ষণ ধারাবাহিক সাফল্য আসা কঠিন।
এ পর্যন্ত প্রথম পাঁচ ম্যাচে চার পয়েন্ট অর্জন করেছে মহমেডান এসসি। শনিবারও যদি তারা পয়েন্ট অর্জন করতে না পারে, তা হলে এটি প্রথম ছয় ম্যাচে সবচেয়ে কম পয়েন্ট পাওয়া দলগুলির তালিকায় তিন নম্বরে জায়গা পাবে। প্রথম দু’টি দল ইস্টবেঙ্গল এফসি (২ পয়েন্ট, ২০-২১ মরশুম) ও পাঞ্জাব এফসি (২ পয়েন্ট, ২৩-২৪)। প্রথম তিনটি হোম ম্যাচেই জয়হীন রয়েছে মহমেডান। শনিবারও যদি তারা জিততে না পারে, তা হলে প্রথম চার ম্যাচে জয়হীন থাকা আরও দু’টি দলের সঙ্গে যোগ দেবে তারা, জামশেদপুর এফসি ও ইস্টবেঙ্গল এফসি।
গত চারটি অ্যাওয়ে ম্যাচেই হেরেছে হায়দরাবাদ। প্রতি ম্যাচেই দুই বা তার বেশি গোল হজম করেছে তারা। এর আগে ২০১৯-এর অক্টোবর থেকে ২০২০-র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা আটটি ম্যাচে হেরেছিল। এর মধ্যে সাতটি ম্যাচে তারা দুই বা তার বেশি গোল খেয়েছিল।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ওড়িশার বিরুদ্ধেও হার, টানা ছয় ম্যাচে পরাজিত হয়ে লজ্জার রেকর্ড ইস্টবেঙ্গলের