গত চার ম্যাচে একটিও জয় না পাওয়া হায়দরাবাদ এফসি শনিবার চলতি আইএসএলের প্রথম জয়টি তুলে নেয় মহমেডানের বিরুদ্ধে এবং সেটিও বড় ব্যবধানে। এ দিন ৪-০-য় মহমেডানকে হারিয়ে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় জয়টি অর্জন করে তারা। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল করে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায় নিজামের শহরের দল, যারা আইএসএলে সাত ম্যাচ পরে জয় পেল। দ্বিতীয়ার্ধে চতুর্থ গোল করে জয় সুনিশ্চিত করে হায়দরাবাদ। তবে গোলের ব্যবধান আরও বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।
মোহনবাগানের কাছে তিন গোলে হারের পর এ বার এই ম্যাচে চার গোলে হার। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ। বলেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ খেলতে পারিনি আমরা। প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের চেয়ে আমাদের ছেলেরা একটু বেশিই ক্লান্ত ছিল। হায়দরাবাদ আজ অনেক তরতাজা ছিল, গতিময় ফুটবল খেলেছে। আমাদের ছেলেরা সেই তুলনায় ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। প্রথম ১৫ মিনিটে যে তিন গোল হয়েছে, তার প্রতিটিই আমাদের ভুলের জন্য”।
বিরতিতে তিন গোলে পিছিয়ে থাকার সময়ও যে ছবিটা পাল্টানোর আশা ছিল তাদের, তা জানিয়ে চেরনিশভ বলেন, “বিরতিতে আমাদের মধ্যে ভালই আলোচনা হয়। আমরা একাধিক পরিবর্তন করে দল নামাই দ্বিতীয়ার্ধে। আমরা ম্যাচের ছবিটা পাল্টাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ওরা আর একটা গোল পেয়ে যায়। ফলে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়”।
এ দিন মহমেডান এসসি ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও একটিও গোলে পরিণত করতে পারেনি। অথচ হায়দরাবাদ পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করে চার গোল করে। প্রতিপক্ষের বক্সে ৩০ বার বল ছুঁয়েছে কলকাতার দল। ফাইনাল থার্ডে মোট ১৬০টি পাস দিয়েছে তারা। তা সত্ত্বেও মাত্র চারটি শট গোলে রাখতে পারে। কিন্তু একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি সাদা-কালো বাহিনী।
এত সুযোগ হাতছাড়া করা প্রসঙ্গে সাদা-কালো শিবিরের কোচ বলেন, “আজও আমরা অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছি, কিন্তু একটা গোলও করতে পারিনি। মাঝে মাঝে এ রকম হয়। কোনও কিছুই ঠিকঠাক হয় না। এখন আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে। অনুশীলনে কিছু ভুল হচ্ছে, না মানসিকতায়, তা খুঁজে বার করতে হবে। সেই অনুযায়ী নিজেদের শোধরাতে হবে এবং কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এখন দু-তিন দিন বিশ্রাম দরকার। তার পরে বিশ্লেষণে বসব”।
তবে সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণের পর তাঁর ধারণা, “হয়তো আজ হায়দরাবাদের জেতার খিদে আমাদের চেয়ে বেশি ছিল। হয়তো ওদের চেয়ে আমাদের চাপ অনেক বেশি ছিল। আমাদের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক। তারা প্রতি ম্যাচেই জয় দেখতে চায়। গত কয়েক দিনে অনুশীলনে আমরা আক্রমণ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু শেষ পাস বা শটের ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি আমরা। ভাগ্যও আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে না। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে, যখন শুধু গোলকিপার সামনে থাকে, তখন যে গোলে শট নিতে হবে, এটা তো আর খেলোয়াড়দের আলাদা করে বলে দিতে হয় না। চার গোলে হারা একটা ম্যাচ থেকে ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করা খুবই কঠিন। সে জন্য গোল করতে হবে, জিততে হবে। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে”।
শনিবার চোটের জন্য খেলতে পারেননি তাদের ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার জোসেফ আজেই। তাঁর পরিবর্তে খেলেন নবাগত ফরাসি ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্ট ওগেই। কিন্তু আজেই খেলতে না পারায় তাঁর দল ওত গোল খেয়েছে, এ কথা মানতে রাজি নন কোচ। বলেন, “জোসেফ আজেই গত কয়েকটা ম্যাচে ভাল খেলেছে। গত ম্যাচে ওর জায়গায় ফ্লো এসে ভাল খেলেছিল। ও ভাল খেলোয়াড়। দলের পরিবেশের সঙ্গে আরও ভাল করে মানিয়ে নিতে হবে ওকে, যার জন্য সময় লাগবে। আজ আসলে শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়াটা আমাদের কাছে একটা বড় ধাক্কা ছিল এবং আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা শুরুতেই ভেস্তে যায়। ফলে আমরা ছোট ছোট অনেক ভুল করেছি। তবে একা জোসেফ খেলতে পারেনি বলে আমরা এ ভাবে হেরেছি, তা ঠিক নয়। আমরা দল হিসেবে যেমন জিতেছি, তেমনই দল হিসেবেই হেরেছি। দায়টা পুরো দলেরই”।
মহমেডান এসসি-র পরবর্তী ম্যাচ ৯ নভেম্বর, ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, পরের ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য অনেকটা সময় পেয়ে যাবে তারা।