কলকাতা: আইএসএলে (ISL 2024-25) কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শনিবার মুখোমুখি হয়েছিল মহামেডান স্পোর্টিং ও হায়দরাবাদ এফসি (Mohammedan Sporting vs Hyderabad FC )। এক দল ছিল হারের হ্যাটট্রিক এড়ানোর চেষ্টায় এবং আরেক দলের লক্ষ্য ছিল মরশুমের প্রথম তিন পয়েন্ট ঘরে তোলা। মাঠে সাদা কালো ব্রিগেডকে নিয়ে কার্যত ছেলে খেলা করল নিজামের শহরের দল। ৪-০ গোলে মহামেডানকে দুরমুশ করল হায়দরাবাদ এফসি।


শনিবার মাঠে নামার আগে আইএসএলে শেষ ন’টি ম্যাচে পাঁচটি গোল পেয়েছিল হায়দরাবাদ এফসি। শনিবার একই ম্যাচে চার গোল করে তারা! মহমেডান এসসি এ দিন ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে তিন-তিনটি গোল খাওয়ার পর থেকেই প্রায় হাল ছেড়ে দেয় তারা। লড়াইয়ে ফেরার যেটুকু চেষ্টা করে সাদা-কালো বাহিনী, তার বেশিরভাগটুকুই বিফলে যায়।

এ দিন প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিন-তিনটি গোল করে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায় হায়দরাবাদ এফসি। তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড অ্যালান ডিসুজা পলিস্তার জোড়া গোল ও সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচ প্রথমার্ধে তিন গোলের ব্যবধান তৈরি করে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে এক অসাধারণ গোলে জয় সুনিশ্চিত করেন পরাগ শ্রীবাস।

এ দিন মহমেডান এসসি ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও একটিও গোলে পরিণত করতে পারেনি। সে দিক থেকে দেখতে গেলে হায়দরাবাদের সাফল্যের হার অনেক ভাল। পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করে চার গোল করে তারা। প্রতিপক্ষের বক্সে ৩০ বার বল ছুঁয়েছে কলকাতার দল। ফাইনাল থার্ডে মোট ১৬০টি পাস দিয়েছে তারা। তা সত্ত্বেও মাত্র চারটি শট গোলে রাখতে পারে। কিন্তু একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি সাদা-কালো বাহিনী।

ভারতীয় কোচ থাংবোই সিংতোর প্রশিক্ষণাধীন হায়দরাবাদ এফসি সাম্প্রতিককালে এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি। তাদের শেষ বড় জয় ছিল ২২-২৩ মরশুমে, নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে, ৬-১-এ। ২১-২২ মরশুমে তারা ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে হারিয়েছিল চার গোলে। গত মরশুমে তারা একটিমাত্র জয় পেয়েছিল, এ বছর ৯ মার্চ, চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে। তার পর থেকে লিগে সাতটি ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি নিজামের শহরের দল। শনিবার বহু অপেক্ষার পর এল সেই জয়, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার জোসেফ আজেইয়ের অনুপস্থিতি এ দিন প্রথম মিনিট থেকেই টের পায় মহমেডান স্পোর্টিং। এ দিনই প্রথম শুরু থেকে মাঠে নামেন ফরাসি ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্ট ওগিয়ে। কিন্তু তিনি ধাতস্থ হওয়ার আগেই প্রথম গোল করে দেন হায়দরাবাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড অ্যালান পলিস্তা। চতুর্থ মিনিটে ছ’গজের বক্সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পা পিছলে যায় গোলকিপার পদম ছেত্রীর। এই সুযোগ কাজে লাগান তাঁর সামনে থাকা পলিস্তা। ছেত্রীর ফস্কানো বল গোলে ঠেলতে ভুল করেননি তিনি (১-০)।

শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় ছন্নছাড়া মহমেডান বলের দখল বাড়িয়ে খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করলেও প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় গিয়ে বারবার আটক হয়ে যায় তারা। আঙ্গুসানা, ফ্রাঙ্কা, ফানাই গোলের চেষ্টা করলেও প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাদের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ করে দেন।

হায়দরাবাদ দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় ১২ মিনিটের মাথায়, যখন সি গদার্ডের তোলা কর্নারে বক্সের মাঝখান থেকে হেড করে জালে জড়িয়ে দেন সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচ (২-০)। মাঠের সবচেয়ে বেশি উচ্চতার ফুটবলারটি তাঁর এই সুবিধাকে ভরপুর কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে দেন।

দু’গোলে পিছিয়ে পড়া মহমেডান এসসি লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা শুরু করতে না করতেই ফের গোল খেয়ে যায় তারা। এ বারও পলিস্তাকে আটকাতে পারেনি তারা। বাঁ প্রান্ত থেকে পরাগ শ্রীবাসের বাড়ানো লম্বা পাস পেয়ে সোজা গোলে শট নেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড, যার নাগালই পাননি ছেত্রী (৩-০)। এর আগের ম্যাচগুলিতে যিনি দলের অন্যতম ত্রাতা হয়ে উঠেছেন, সেই গোলকিপার ছেত্রীর আত্মবিশ্বাস এ দিন তলানিতে চলে যায় ১৫ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খাওয়ার পর। মহমেডানের রক্ষণকেও এ দিন বেশ নড়বড়ে লাগে।

পাল্টা লড়াইয়ে ফেরার জন্য তেমন মরিয়া ভাবও দেখা যায়নি সাদা-কালো ব্রিগেডের মধ্যে। এই ধাক্কায় কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিও কার্যত নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তিন গোলে পিছিয়ে পড়ায় আদিঙ্গাদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাবও লক্ষ্য করা যায়। ৩৬ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েও দিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কা। কিন্তু তিনি অফ সাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়।

মহমেডানের দুই লাতিন আক্রমণ জুটিকে এ দিন বেশ ম্লান লাগে। অন্যদিকে, গত চার ম্যাচে মাত্র এক গোল পাওয়া হায়দরাবাদ এই ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিন-তিনটি গোল পেয়ে যাওয়ায় আরও চনমনে হয়ে ওঠে। প্রথমার্ধে তাদের তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল। তিনটিকেই গোলে পরিণত করে তারা। প্রথমার্ধে বল পজেশনে মহমেডান অনেক এগিয়ে (৬১-৩৯) থাকলেও ম্যাচের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না তাদের।

ওগিয়ের জায়গায় সিজার মানজোকি, আঙ্গুসানার জায়গায় মহম্মদ ইরশাদ ও ফানাইয়ের জায়গায় মকান চোঠেকে এনে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করলেও মহমেডান লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা শুরু করার আগে ফের একটি গোল খেয়ে যায়। ৫১ মিনিটের মাথায় যে গোলটি করেন পরাগ শ্রীবাস, তা যেমন অনবদ্য তেমনই অভাবনীয়ও। আন্দ্রে আলবার পাস থেকে বল পেয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে যে দূরপাল্লার শটটি নেন শ্রীবাস, তা হাওয়ায় বাঁক খেয়ে ডানদিকের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে যায় (৪-০)। মরিয়া চেষ্টা করেও তা আটকাতে পারেননি ছেত্রী।

আক্রমণে মানজোকি এসে যাওয়ায় মহমেডানের আক্রমণের তীব্রতা কিছুটা বাড়ে। একাধিক চেষ্টা করেন মানজোকি, চোঠে, গোমেজ, ফ্রাঙ্কা, বিকাশরা। কিন্তু ফিনিশিংয়ের দৈন্যতায় একবারও গোলের মুখ খুলতে পারেননি তাঁরা।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: সাত ম্যাচ হারের ধারা থামল, চ্যালেঞ্জ লিগে ড্র করল ইস্টবেঙ্গল