কলকাতা: গত মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ বার আইএসএলে (ISL 2024) খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মহমেডান স্পোর্টিং। পাঞ্জাব এফসি-র পর তারাই দ্বিতীয় দল, যারা আই লিগ থেকে প্রোমোশন পেয়ে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অংশ নিতে চলেছে। এতদিন বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের অনেকের আক্ষেপ ছিল কলকাতার তিন প্রধানকে আইএসএলে দেখতে পান না তাঁরা। এ বার তাঁদের সেই আক্ষেপ মিটে যাবে বলেই মনে হয়।  


একটা সময়ে দেশের সেরা ফুটবলের আসরগুলিতে অংশ নেওয়া ও সফল হওয়া ছিল মহমেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting) নিয়মিত ব্যাপার। ১৮৯১-এ প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই ক্লাব আবার ফিরে এসেছে ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে। যার জেরে কলকাতার বাকি দুই প্রধান ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সঙ্গে তাদের চিরকালীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফের দেখা যাবে। 


মোহনবাগান এসজি-র সবুজ-মেরুন, ইস্টবেঙ্গল এফসি-র লাল-হলুদের সঙ্গে এ বার সাদা-কালো জার্সিধারীদেরও দাপট হয়তো দেখা যাবে দেশের এক নম্বর লিগে। গত মরশুমে ১৩ দলের আই লিগে ২৪টি ম্যাচে ১৫টি জয় ও সাতটি ড্র-সহ মোট ৫২ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মহামেডান স্পোর্টিং। এই সাফল্যের ফলেই এ বার আইএসএলে খেলবে তারা। এ মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপে ইন্টার কাশির সঙ্গে ১-১ ড্র করে, বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ২-৩-এ হারে ও ইন্ডিয়ান নেভিকে ১-০-য় হারায়। ফলে তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায়। তবে আইএসএলে অনেক উন্নত পারফরম্যান্স দেখানোর আশ্বাস দিয়েছেন তাদের রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ। 


গতবারের দল থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারকে বিদায় জানিয়েছে মহমেডান এসসি। এডি হার্নান্দেজ ও ডেভিড লালনসাঙ্গা এ বার সাদা-কালো ব্রিগেডে নেই। গত মরশুমে তাদের সাফল্যে এই দুই ফুটবলারের অবদান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আই লিগে তাদের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন হার্নান্দেজ ও ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন ডেভিড। 


তবে কয়েকজন নতুন ফুটবলারকে এ বার নিয়ে এসেছে তারা, যারা মহমেডানকে প্রত্যাশিত সাফল্য এনে দিতে পারেন। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর পেশাদার লিগে খেলা ফরোয়ার্ড সিজার মানজোকিকে সই করিয়েছে তারা। ২৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও চিনের সুপার লিগেও নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। 


তিনি ছাড়াও গৌরব বোরা, আমরজিৎ সিং কিয়াম, রোচারজেলা, মকান চোথের মতো আইএসএলে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ফুটবলারদেরও সই করিয়েছে কলকাতার ক্লাব। এঁরা ভাল খেললে যে সাদা-কালো বাহিনীও আইএসএলের লিগ টেবলে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 


নতুন এসেছেন যাঁরা


সিজার মানজোকি, কার্লোস ফ্রেইরেস (ফ্রাঙ্কা), ভাস্কর রায়, নিখিল ডেকা, শুভজিৎ ভট্টাচার্য, রোচারজেলা, জো জোহেরলিয়ানা, অমরজিৎ সিং কিয়াম, গৌরব বোরা, মহম্মদ কাদিরি, রবিনসন সিং, মকান চোথে, সাজাদ পারে, লালরেমসামগা ফানাই। 


নজরে যাঁরা 


পদম ছেত্রী


গত মরশুমে গোলকিপার ছেত্রীই ছিলেন মহমেডান এসসি-র রক্ষণে সবচেয়ে বড় ভরসা। তাঁর অসাধারণ কিছু সেভ ও দুর্দান্ত আন্দাজ ক্ষমতা তাঁকে গত আই লিগের সেরা গোলকিপারের খেতাব এনে দেয়। আটটি ম্যাচে ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছেড়েছিলেন ছেত্রী। এ বারেও আশা করা যায় তাঁর দুরন্ত দক্ষতা দেখতে পাবেন আইএসএলের দর্শকেরা। নিখিল ডেকা, ভাস্কর রায়ের মতো নতুন গোলকিপার দলে এলেও সম্ভবত ছেত্রীই হতে চলেছেন চেরনিশভের প্রথম এগারোয় অবধারিত বাছাই। 


অ্যালেক্সি গোমেজ 


আর্জেন্টিনার এই ফুটবলার গোল করা ও গোল করতে সাহায্য করা, দুইয়েই সমান পারদর্শী। গত মরশুমে আই লিগে মহমেডানের সাফল্যে তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলের পাস সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও সেট পিসেও তিনি যথেষ্ট বিপজ্জনক। ২৬ বছর বয়সী গোমেজ এ বারও মহমেডান শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠতে পারেন। 


হেড কোচ 


রাশিয়ার জাতীয় দলের প্রাক্তন সহকারী কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ সে দেশের অনুর্ধ ২১ জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন। এফসি স্পার্টাক মস্কো, এফসি ডায়নামো তবিলিসির মতো ক্লাবেও কোচিং করিয়েছেন তিনি। যখন খেলতেন, তখন ডায়নামো মস্কো ও বেলজিয়ামের আন্তোয়ার্প এফসি-র মতো নামী ক্লাবে সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলেন। 


গত মরশুমে মহমেডান স্পোর্টিংকে তিনি এক ধারাবাহিক দল তৈরি করে তোলেন, যাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ রক্ষণ ছিল প্রশংসার যোগ্য। ফলে তাদের রক্ষণে চিড় ধরানো ছিল বেশ কঠিন কাজ। গত আই লিগে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছিল তারাই। রুশ ফুটবল কৌশলবিদের ফুটবল দর্শনে সেট পিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার ফলে নিজের দলকে তিনি সেট পিসে পারদর্শী করে তোলার চেষ্টা করেন। ফলে দল বাছাইয়ের সময়ও দীর্ঘদেহী ফুটবলারদের গুরুত্ব দেন তিনি। 


মহমেডান স্পোর্টিং-এর আইএসএল সূচি (২০২৪) 


১৬ সেপ্টেম্বর- বনাম নর্থইস্ট (হোম), ২১ সেপ্টেম্বর- বনাম এফসি গোয়া (হোম), ২৬ সেপ্টেম্বর- বনাম চেন্নাইন এফসি, ৫ অক্টোবর- বনাম মোহনবাগান এসজি, ২০ অক্টোবর- বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স (হোম), ২৬ অক্টোবর- বনাম হায়দরাবাদ এফসি (হোম), ৯ নভেম্বর- বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি, ২৭ নভেম্বর- বনাম বেঙ্গালুরু এফসি (হোম), ২ ডিসেম্বর- বনাম জামশেদপুর এফসি, ৬ ডিসেম্বর- বনাম পাঞ্জাব এফসি , ১৫ ডিসেম্বর- বনাম মুম্বই সিটি এফসি (হোম), ২২ ডিসেম্বর- বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স, ২৭ ডিসেম্বর- বনাম ওডিশা এফসি। (ম্যাচগুলি শুরু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে)।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: 'ওরা যেখানেই খেলবে, সমর্থন পাবে', মহামেডান প্রথমবার আইএসএল খেলার সুযোগ পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছেত্রী