কলকাতা: টানা ছয় ম্যাচে জয়হীন মহমেডান এসসি-র (Mohammedan Sporting) সামনে এখন বিশাল পরীক্ষা। এক তো নিজেদের দল গোছাতে হবে, আনতে হবে এমন কয়েকজন ফুটবলার, যাঁরা গোল করতে পারেন। তার পরে তাদের জয়ে ফিরতে হবে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য। দুটোর কোনওটাই সহজে আসার নয়, যতক্ষণ না তাদের অ্যাটাকররা গোল করতে পারছেন।
গত পাঁচটি ম্যাচে মাত্র দু’টি গোল করেছে সাদা-কালো ব্রিগেড। সব মিলিয়ে তাদের গোলসংখ্যা পাঁচ। চলতি লিগে নিজেদের গোলসংখ্যার দিক থেকে তারা যেমন সবার নীচে, তেমনই লিগ টেবলেও সবার নীচে। ইস্টবেঙ্গল ও হায়দরাবাদ তাদের ওপরের দুই স্থানে। ফলে রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভের সামনে এখন সেরা ছয়ে ওঠার চেয়ে দলকে জয়ে ফেরানোর লক্ষ্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আইএসএলে (Indian Super League ) একটি জয় পাওয়া যে কতটা কঠিন, তা তারা গত ছ’টি ম্যাচেই বুঝে নিয়েছে। প্রতি ম্যাচের শুরুটা আশা জাগিয়ে করলেও ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে তারা। মনে হচ্ছে ৯০ মিনিট সমান তীব্রতায় খেলার ক্ষমতাই নেই দলটার। এ পর্যন্ত ১০১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে মহমেডান। কিন্তু গোল করতে পেরেছে মাত্র পাঁচটি থেকে। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলা তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
শুধু গোল মিস নয়, দু’টি পেনাল্টিও মিস করেছেন তাদের দুই বিদেশী সিজার মানজোকি ও কার্লোস ফ্রাঙ্কা। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ফিনিশ করতে না পারার রোগ তাদের সব ম্যাচেই ভোগাচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে না পারলে রবিবারও জয়ে ফেরা কঠিন হবে মহমেডানের। দলটার মধ্যে লড়াকু মনোভাব রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই লড়াই তারা ৬০-৭০ মিনিটের বেশি করতে পারছে না। ফলে শেষ দিকে তাদের প্রতিপক্ষরা খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় গোলও তুলে নিচ্ছে। এতে পরিবর্তন না এলে লিগ টেবলের নীচের দিকেই থেকে যেতে হবে তাদের।
যেমন গত ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রধমার্ধে কোনও গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ ও ৬৬ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় অর্জন করে নেয় দ্বিতীয় আইএসএল মরশুমে খেলা পাঞ্জাবের দলটি। সে দিনও তাদের সমস্যায় ফেলে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করা এবং বিরতির পর তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়ার রোগ। এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বার বেশিরভাগ ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে কলকাতার দলকে। ফুটবলের সবচেয়ে জরুরি বিষয়ই যে দলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা, সেই দলের সাফল্যে ফেরা মোটেই সোজা কাজ না।
অন্যদিকে, গতবারের কাপজয়ী মুম্বই সিটি এফসি-ও যে দারুণ খেলছে, তা বলা যায় না। তবে মহমেডানের চেয়ে যে তাদের সংখ্যা ও অবস্থান অনেকটাই ভাল, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ১০ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন ন’নম্বরে। ছ’নম্বরে থাকা জামশেদপুর এফসি-র সঙ্গে তাদের দূরত্ব চার পয়েন্টের। অর্থাৎ রবিবার জিতলে তারা সেরা ছয়ের দোরগোড়ায় চলে যাবে। এই অবস্থায় কলকাতা থেকে তিন পয়েন্ট নিয়েই ঘরের ফেরার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠবে আরব সাগরপাড়ের ক্লাব, এটাই স্বাভাবিক।
গত তিনমাস ধরে দলটার মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। চলতি লিগের শুরু থেকেই এই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তাদের। শুরুর দিকে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থাকার পর এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয় পেলেও, তার পরের ম্যাচে ফের ওডিশার বিরুদ্ধে হোঁচট খায় (১-১) তারা। গত ম্যাচে ওডিশার বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে তারা। অর্থাৎ কলিঙ্গবাহিনীকে এ বার হারাতে পারল না পিটার ক্রাতকির দল। তার আগে হায়দরাবাদকে ১-০-য় হারায় তারা। অথচ তার আগেই পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৩-০-য় জয় পায় মুম্বই। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারানোর পর দ্বিতীয় সপ্তাহে চেন্নাইনের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে। সুতরাং রবিবার ঘরের মাঠে যদি কিছুটা হলেও উন্নতি করে মহমেডান, তা হলে তাদের পক্ষে পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব।
শনিবারের দুই ম্যাচের আগে পর্যন্ত মুম্বই সিটি এফসি-ই লিগের একমাত্র দল, যারা যত গোল করেছে, তত গোল করেওছে। তাদের করা ১৩টি গোলের মধ্যে পাঁচটিই গ্রিক ফরোয়ার্ড নিকোলাওস ক্যারেলিসের। তরুণ ডিফেন্ডার নাথান রড্রিগেজ ও ডাচ মিডফিল্ডার ইওল ফান নিফ দু’টি করে গোল করেছে। অথচ ১১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে তারা। সবচেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেছেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে (১৪টি)। কিন্তু মাত্র একটি গোল করতে পেরেছেন ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন ছাঙতে। দলের সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট তিনিই করেছেন।
কারেলিস ছাড়া বাকি দুই অ্যাটাকার ছাঙতে ও বিক্রম প্রতাপ সিং এখনও গতবারের মতো ফর্মে আসেননি। গোলের জন্য একা কারেলিসের ওপরই বেশিরভাগ নির্ভরশীল মুম্বই-বাহিনী। তবে মাঝমাঠ ও রক্ষণ থেকে উঠে এসে একাধিক গোল করেছেন রড্রিগেজ, ফান নিফরা। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক।
আরও পড়ুন: ভক্তদের বাঁচানোর জন্য দৌড়ে এলেন, ম্যাচ হারলেও মন জিতে নিলেন হার্দিক
মুম্বইয়ের এই আক্রমণ রোখা মহমেডানের কাছে কঠিন পরীক্ষা। তবে তাদের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার জোসেফ আজেই ও গৌরব বোরা চোটের কারণে দলের বাইরে। তাঁদের ফরোয়ার্ড সি জার মানজোকিও গত ম্যাচে চোট পেয়ে এই ম্যাচে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় কতটা লড়াই করতে পারবে তারা, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: স্কুলে গিয়েছেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত, গুকেশের জন্য কাজ ছেড়ে দেন বাবা! যেন রূপকথার কাহিনি
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।