কলকাতা: অঙ্ক বলছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) বুধবার যুবভারতী ক্রীড়ঙ্গনে পাঞ্জাব এফসি-কে হারিয়ে লিগ ডাবল করতে পারলে প্লে অফে জায়গা পাকা করে ফেলবে এবং লিগ শিল্ড জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ম্যাচে তাদের চাই আর দশ পয়েন্ট। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনার (Jose Molina) মাথায় চলছে শুধু তিন পয়েন্টের অঙ্ক, যা প্রতি ম্যাচের আগেই তিনি কষে থাকেন।
পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে বাগান-কোচ যখন শোনেন আর দশ পয়েন্ট পেলে এ মরশুমেও লিগ শিল্ড তাঁদের হবে, তখন বেশ অবাকই হন তিনি। বলেন, “তাই নাকি! এই হিসাবটা আমার জানা ছিল না। কাল জিতলে প্লে-অফে উঠব, তাও আমি জানি না। আমার মাথায় একটাই হিসেব ঘুরছে, তিন পয়েন্টের হিসেব। আমার কাছে কালকের তিন পয়েন্টই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর চেয়ে বেশি আর কিছুই ভাবছি না”।
সেই পরবর্তী ম্যাচের প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি-কে নিয়ে তিনি বলেন, “পাঞ্জাব এফসি ওদের শেষ ম্যাচে একেবারে শেষ মিনিটে গোল করে বেঙ্গালুরুকে হারানোর পর অবশ্যই আমাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা শক্তিশালী আমি জানি। তবে আশা করি, আমরাও ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে ভাল খেলব। তিন পয়েন্ট জিততেই নামব। তিন দিন আগেই ম্যাচ খেলেছি আমরা। দলের ছেলেদের পরের ম্যাচের জন্য তৈরি করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ”।
তবে এই ম্যাচে চোট ও কার্ড সমস্যার জন্য মোহনবাগান পাবে না মাঝমাঠের দুই নির্ভরযোগ্য তারকা অনিরুদ্ধ থাপা ও আপুইয়াকে। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার টম অলড্রেডও খেলতে পারবেন না কার্ড সমস্যার জন্য। তবে চোটের জন্য গত ম্যাচে খেলতে না পারা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ খেলতে পারবে, এমন সম্ভাবনার কথাই বলছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “আশা করি আলবার্তো কাল খেলবে। ও পুরোপুরি অনুশীলন করেছে। টম, আপুইয়া, থাপার অভাব অনুভব করব। আসলে আমি চাই দলের সবাই খেলার জন্য তৈরি থাকুক। কেউ খেলতে না পারলে খারাপ লাগে। থাপা এখনও সেরে উঠছে। এখন ও খেলার জন্য তৈরি নয়। মাঠে নেমে দৌড় শুরু করতে ওর এখনও দিন দুয়েক লাগবে”।
চলতি লিগে সেটপিসে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে মোহনবাগান এসজি, যা নিয়ে প্রশংসিতও হচ্ছেন তাদের কোচ -ফুটবলাররা। সেটপিসে সাফল্যের এই রহস্য জানতে চাইলে মোলিনা বলেন, “সেটপিস আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য আমরা সেটপিসের অনুশীলন করি নিয়মিত। সেজন্যই সেটপিসে ভাল করছি আমরা। এ জন্য আমাদের দীর্ঘদেহী খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব রয়েছে। মনবীর, টম, শুভাশিস, দীপেন্দু, আলবার্তো। এরিয়াল ডুয়ালেও ওরা যথেষ্ট দক্ষ। তবে ওরা আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছে”।
সবুজ-মেরুন কোচের দাবি, তাঁর দল প্রতি ম্যাচে সর্বোচ্চ স্তরের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে, তাই অনেকে যে বলছেন, মোহনবাগান কোনও ম্যাচে শুরুতে গোল করতে পারলে অনেক আত্মবিশ্বাস পায় এবং অনেক গোল করে, তা ঠিক নয় বলেই মনে করেন তিনি। বলেন, “শুরুতে গোল করলেই আমরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি, এ কথা ঠিক না। কারণ, আমরা পুরো আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামি। এর চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়া সম্ভব না। তবে আমরা শুরুতে গোল দিলে সম্ভবত প্রতিপক্ষ আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করে এবং এতে আমরাই সাহায্য পাই। তবে দল গোল না পেলে আমি উদ্বিগ্ন হই না। কোনও ম্যাচে অনেক গোল হতে পারে। কোনও ম্যাচে কম। শেষ মুহূর্তেও গোল করে যদি জিততে পারি, তা হলেও খুব খুশি হই আমি। জেতাটাই বড় কথা। অবশ্য গোল না খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ”।
পাঞ্জাব এফসি-র কোচ জেসন কামিংসকে সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় বলায় উচ্ছ্বসিত নন মোলিনা। বলেন, “জেসন অবশ্যই ভাল খেলোয়াড়। ওর খেলায় আমি খুবই খুশি। তবে আমরা দল হিসেবে খেলি। আমরা বিপজ্জনক দল হতে চাই। কোনও একজন খেলোয়াড়কে বিপজ্জনক করে তুলতে চাই না। আমি চাই আমার পুরো দলই প্রতিপক্ষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠুক। কারণ, আমি ফুটবলকে দলগত খেলা হিসেবেই দেখি। গোটা দলকে যথাসম্ভব শক্তিশালী করে তুলতে চাই”।
দলের অজি বিশ্বকাপার ও স্ট্রাইকার জেমি ম্যাকলারেন গত চার ম্যাচে গোল পাননি। যা নিয়ে মোলিনা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। বলেন, “ম্যাকলারেন খুবই ভাল খেলোয়াড়। যথেষ্ট ভাল খেলছে। পরিশ্রম করছে। হয়তো আমাদের দল ওকে গোল করায় সাহায্য করতে পারছে না। খারাপ সময় চলছে বা ফর্মে নেই, এটা ঠিক না। মোহনবাগানে এটা ওর প্রথম বছর। আরও কয়েক দিন যেতে দিন। ও অবশ্যই গোল পাবে। আমরা ওকে সাহায্য করছি। সব স্ট্রাইকারকেই সাহায্য করছি, যাতে ওরা আরও গোল করতে পারে। তবে স্ট্রাইকারদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি”।
দলের গোলকিপার বিশাল কয়েথ, যিনি গত ম্যাচে আইএসএলে ৫০ তম ক্লিন শিট রাখার রেকর্ড গড়েন, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাগান-কোচ। বলেন, “বিশালের দারুণ পারফরম্যান্স। প্রতিদিন দারুন উন্নতি করছে ও। দলকে দারুন ভাবে সাহায্য করছে। মরশুমের শুরুতে আমি বলেছিলাম, কেউ যদি আমাকে দলের গোলকিপার বদলাতে বলে, আমি রাজি হব না। কারণ, বিশালই আমার প্রথম পছন্দ। এখন তো এই ব্যাপারে আমি আরও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছি”।
বুধবার আপুইয়া ও থাপার অভাব পূরণ করার বড় দায়িত্ব যাঁর ওপর পড়তে চলেছে, সেই সহাল আব্দুল সামাদ বলেন, “আপুইয়া, থাপার কাছ থেকে আমরা যা পাই, তা শুধু ওরাই দিতে পারে। আমরা শুধু আমাদের কাজ করতে পারি। খেলায় ফোকাস করতে পারি। দলকে জিততে সাহায্য করতে পারি। একশো শতাংশ দিতে পারি। সেই চেষ্টাই করব”।
তবে এ বার সহালের দৃষ্টিনন্দন ড্রিবল বেশি দেখা যাচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ বার আমি একটু অন্য ভূমিকায় খেলছি। এ বার আমরা ৪-৪-২-এ খেলছি, যার মাঝখানে থাকছি আমি। সে জন্যই বেশি ড্রিবল করতে পারছি না। ড্রিবল করতে আমি ভালবাসি ঠিকই। তবে দলের জন্য এই পরিবর্তন আনতেই হয়েছে আমাকে”।
শিল্ডজয় থেকে আর দশ পয়েন্ট দূরে তারা, এখনও পাঁচটি ম্যাচ রয়েছে তাদের হাতে। গতবারের চেয়ে সহজ পরিস্থিতিতেই রয়েছে তারা, যা শুনে সহালের মন্তব্য, “দূর থেকে হয়তো আমাদের পরিস্থিতিটা সহজ মনে হচ্ছে আপনাদের। কিন্তু আমরা জানি ঠিক কতটা কঠিন এই পরিস্থিতি। জয়ের পর হয়তো আমরা বলি, সহজেই জিতলাম। কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা লড়াই করতেই মাঠে নামি। এ বারেও তা-ই করছি। শিল্ড, কাপ সবই জিতে এই মরশুমকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। এই সময়ে যে কোনও দলকে খুবই মনোনিবেশ করতে হয় এবং নম্র থাকতে হয়। মরশুমের শুরু থেকেই আমরা তা-ই থেকেছি। শীর্ষে থাকতে গেলে এটাই দরকার”।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: নিশ্চিত হতে পারে প্লে-অফ, মোহনবাগানের সামনে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে সর্বকালীন ইতিহাসের গড়ার সুযোগ