কলকাতা: শনিবার ডুরান্ড কাপ (Durand Cup 2024) ফাইনালের প্রথমার্ধে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant)। যার ফলে বিরতিতে তারা দু’গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২-এ শেষ করে ও টাই ব্রেকারে শেষ পর্যন্ত হেরে যায়। নর্থইস্ট ইউনাইটেড বিরতির পরে যে ভাবে পাল্টা লড়াইয়ে ফিরে এসে দু’টি গোল শোধ করে, তা এক কথায় অসাধারণ। 


প্রথমার্ধের ওই দাপুটে ফুটবলের পর দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের ফুটবলারদের এমন দুর্বল পারফরম্যান্স দেখে অবাক সমর্থকেরা। অনেকেই জানতে চেয়েছেন কেন এমন হল। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনার (Jose Molina) কাছেও এর কোনও ব্যাখ্যা নেই। শনিবার ম্যাচের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রথমার্ধে আমাদের পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কোনও কিছুই আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। সব কিছুই বেঠিক হয়েছে। প্রায়ই বলের দখল হারিয়েছি আমরা। ওরা আমাদের বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল। দুটো গোলও শোধ করে দেয় ওরা। পেনাল্টি শুট আউটে ভাগ্য আমাদের সঙ্গ দেয়নি। আমার পক্ষে বোঝা কঠিন, কেন এমন হল। ব্যাখ্যা দেওয়া আরও কঠিন।' 


ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে সে দিন শুরু থেকেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলে মোহনবাগান এসজি। রক্ষণ থেকে আক্রমণ, সব বিভাগেই তারা নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ছাপিয়ে যায়। এই টুর্নামেন্টে যে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে ফাইনালে উঠেছে তারা, প্রথমার্ধে নর্থইস্টের খেলা দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। মোহনবাগানের দাপটে তা প্রায় ম্লান হয়ে যায়। 


নর্থইস্ট ইউনাইটেড তাদের চেনা মেজাজে ফিরে আসে বিরতির পর। পেনাল্টি থেকে জেসন কামিংস ও সাহাল আব্দুল সামাদের গোলে এগিয়ে থাকা সবুজ-মেরুন বাহিনীকে দ্বিতীয়ার্ধে কার্যত নিজেদের অর্ধে আটকে রেখে নাগাড়ে আক্রমণ চালিয়ে যান জিথিন এমএস, আলাদ্দিন আজারে, নেস্টর আলবিয়াখরা। দ্বিতীয়ার্ধ দশ মিনিট গড়ানোর পরেই মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে দু’টি গোলই শোধ করেন আজারে ও সুপার সাব গিলেরমো ফার্নান্ডেজ।


দ্বিতীয়ার্ধে দলের এই অধঃপতন দেখে অবশ্যই চিন্তায় পড়েছেন কোচ মোলিনা। তিনি বলেন, 'আমি অবশ্যই খুশি নই। কারণ, আমি একটা ভাল ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছিলাম। ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আইএসএলে যেতে চেয়েছিলাম। তবে ফুটবলে কখনও জয় আসে, কখনও হার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, আমাদের পরিশ্রম করে যেতে হবে, যাতে ক্রমশ উন্নতি করা যায়। আমি এই মানসিকতা নিয়েই কাজ করি।' 


তবে এই ‘ভুল’-এর জন্য তিনি দলের ফুটবলারদের দোষ দিতে রাজি নন। বরং সব দায় নিজের কাঁধেই নেন মোলিনা। সবুজ মেরুন কোচ বলেন, 'দলের ছেলেদের দোষ দেব না। ভুল আমারই হয়েছে। আমার ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই হারতে হয়েছে আমাদের। পুরো দায়ই আমার। দলের কেউই খুশি নয়। কোনও দলই হারতে চায় না। তবে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। প্রতি ম্যাচে দু’গোল খাওয়া চলবে না। আমাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আজকের মতো প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলার পর দ্বিতীয়ার্ধে জঘন্য খেললাম, এ রকম চলবে না।' 


বিরতির পর সহালের জায়গায় অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেত্রাতোসকে নামান মোহনবাগান কোচ। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁকে নামানো হয়, তা সফল হতে দেননি নর্থইস্টের ফুটবলাররা। প্রথমার্ধে মোহনবাগানের যে দাপট দেখা গিয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধে সেই দাপট দেখা যায় নর্থইস্টের খেলায়। দ্বিতীয়ার্ধে নর্থইস্টকে অনেক বেশি আগ্রাসী ও আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। ফলে মোহনবাগান রক্ষণ বেশ চাপে পড়ে যায়।


পেত্রাতোসকে শুরু থেকে না নামিয়ে বিরতির পর গোলদাতা সহালকে বসিয়ে তাঁকে নামানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অনেকে। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে মোলিনা বলেন, 'দ্বিতীয়ার্ধে দিমিকে নামাই যাতে আমাদের আক্রমণে আরও ধার বাড়ে। কিন্তু আমি যে পরিকল্পনা করে ওকে নামিয়েছিলাম, তা কার্যকর হয়নি। এটা আমারই ভুল সিদ্ধান্ত বলতে পারেন।' 


তবে দলকে তিনি ভুল ফরমেশনে খেলিয়েছেন, তা মানতে রাজি নন স্প্যানিশ কোচ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '৩-৫-২-এ খেলে মোটেই ভুল করিনি আমরা। ফরমেশন যাই হোক না কেন, আমরা যদি ভাল খেলি, তা হলে সাফল্য আসবেই। তার প্রমাণ তো প্রথমার্ধে দিয়েছে আমাদের ছেলেরা। প্রথমার্ধে আমাদের দল দুর্দান্ত খেলেছে। এই সময়ে পাঁচ গোল করতে পারতাম আমরা। কারণ, প্রত্যেকেই একসঙ্গে ভাল খেলছিল, সঠিক পথে এগোচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে যা একেবারও হয়নি।'


মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২। ১৩ সেপ্টেম্বর ঘরের মাঠে গতবারের ফাইনালিস্ট মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। ডুরান্ড ফাইনালের প্রভাব লিগে ও এএফসি-র আসরেও পড়বে বলে মনে করেন না মোলিনা। সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, 'আমার কাছে সব টুর্নামেন্টই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সে আইএসএল হোক বা এএফসি। প্রতি ম্যাচেই জার্সির সন্মান বজায় রাখার জন্য আমরা খেলি। পরের ম্যাচগুলোও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে। নিজেদের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করব। সম্ভাব্য সেরা দলই মাঠে নামাব।' 


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: 'তোর ভয় নেই বোন, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি', ফাইনালেও একই সুর যুবভারতীর গ্যালারিতে