ম্যাঞ্চেস্টার: ভারত বনাম পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচের চাপ এতটাই প্রবল যে অনেক সময় খেলোয়াড়রাও নিজেদের সামলে রাখতে পারেন না। আর ১৬ বছর আগে ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচের আগে এমনই একটা ঘটনার কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেললেন হরভজন সিংহ। সেঞ্চুরিয়নে ওই ম্যাচ চলাকালে একে অপরের ওপর কাঁটা চামচ নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হয়েছিল হরভজন ও মহম্মদ ইউসুফ।
এখন সেই ঘটনার কথা মনে করে হেসে ফেললেন ভারতীয় অফস্পিনার স্বীকার করেছেন যে, এটা এতটাই কদর্য রূপ ধারণ করেছিল যে, ওয়াসিম আক্রম, রাহুল দ্রাবিড় ও জাভাগল শ্রীনাথের মতো সিনিয়র প্লেয়াররা এসে তাঁদেরকে আলাদা করতে হয়েছিল।
ওই ম্যাতে সচিন তেন্ডুলকরের দুরন্ত ৯৮ রানের ইনিংস স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেইসঙ্গে মাঠের বাইরে দুটি ঘটনার কথাও মনে থাকবে।
প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান ২৭০-এর বেশি রান করেছিল। ওই সময় এই রান যথেষ্ট ভালো বলেই মনে করা হত। তাই রান তাড়ার আগে ভারত চাপে ছিল।
এরইমধ্যে হরভজনের সঙ্গে মহম্মদ ইউসুফের মধ্যে ঝামেলা বেঁধে গিয়েছিল। হরভজন জানিয়েছেন, পুরোটাই একটা রসিকতাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত কদর্য রূপ ধারণ করে। ওই ম্যাচে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং অনিল ভাই (কুম্বলে) খেলছিলেন। কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ভালো রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমি একটু হতাশ হয়েছিলাম এবং প্রথম একাদশে না থাকলে এমনটা হতেই পারে। মধ্যাহ্নভোজের সময় আমি একটা টেবিলে বসেছিলাম এবং ইউসুখ ও শোয়েব আখতার আমাদের টেবিলের সোজা কমন এরিয়া বরাবর অন্য একটা টেবিলে বসেছিলেন। আমরা পঞ্জাবিতে কথা বলছিলাম এবং একে অপরের সঙ্গে লাগছিলাম। এরইমধ্যে ইউসুফ একটা ব্যক্তিগত টিপ্পনি কাটেন এবং আমার ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করেন। আমিও মুখের মতো জবাব দিই। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা দুজনেই হাতে কাঁটাচামচ নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হই।
১৬ বছর আগের ওই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন ভাজ্জি।কিন্তু ঘটনাটি তখন আদৌ মজাদার ছিল না। হরভজন বলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে রাহুল (দ্রাবিড়) ও শ্রী (জাভাগল শ্রীনাথ) আমাকে আটকান আর ওয়াসিম ভাই ও সাইদ ভাই ইউসুফকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যান। দুই দলের সিনিয়ররা এই ঘটনায় বিরক্ত হয়েছিলেন এবং আমাদেরকে তাঁরা বলেছিলেন যে, এটা একেবারেই সঠিক আচরণ নয়।


ভাজ্জি বলেছেন, ১৬ বছর কেটে গিয়েছে। এখন ইউসুফের সঙ্গে দেখা হলে ওই ঘটনা নিয়ে আমরা হেসে ফেলি।
ভারতীয় দলের স্পিন আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ার ছিলেন হরভজন। তিনি বলেছেন, ২০১১-র বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও প্রচুর চাপ ছিল। মোহালির ওই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু এনে দিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।

হরভজন বলেছেন, ওই ম্যাচটা ছিল একেবারেই আদালা। মোহালি আমার ঘরের মাঠ। দর্শক, মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই চাইছিল যাতে আমরা ম্যাচটা জিতি। হাইপটা এতটাই প্রবল ছিল তখন।
পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। শাহিদ আফ্রিদির বই-তেও এ কথার উল্লেখ রয়েছে।
হরভজন বলেছেন, মাঠের বাইরে তাঁদের বন্ধুত্ব থাকলেও মাঠের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উভয় দলের প্লেয়ারদেরই চাগিয়ে তোলে।
ভাজ্জি বলেছেন, আমার সঙ্গে শাহিদ ও শোয়েব (আফ্রিদি)-র ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ঘুরেছি, খেয়েছি। আমরা একই ভাষায় কথা বলেছি, আমাদের পছন্দের খাবর, গান সহ বিভিন্ন বিষয়ে মিল রয়েছে। কিন্তু মাঠে নামলেই সেই বন্ধুত্ব উধাও হয়ে যেত।