কলকাতা: ছিলেন দাদার বন্ধু। কখন যেন ভাইয়েরও বন্ধু হয়ে উঠলেন। আর সেই বন্ধুত্ব এমনই জমাট বাঁধল যে, একজন হাসপাতালে ভর্তি থাকলে অন্যজন হাসপাতালকেই অস্থায়ী ঠিকানা করে ফেলেন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সবার আগে উপকারী বন্ধুকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে ভোলেন না দ্বিতীয় জন।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (Joydeep Mukherjee)। পারিবারিক আলাপ, মাঠের বন্ধুত্ব কখন যেন আত্মীয়তায় পরিণত হয়েছে। শুক্রবার পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন মহারাজ। লন্ডনে পালিত হল তাঁর জন্মদিন। আর সেই বিশেষ দিনে প্রবাসে হাজির হয়ে গেলেন জয়দীপও।
সেখান থেকেই এবিপি লাইভকে প্রাক্তন ক্রিকেটার জয়দীপ বললেন, 'আমরা পারিবারিক বন্ধু। আমার বাবা, অভিনেতা দিলীপ মুখোপাধ্যায় ও মহারাজের বাবা চণ্ডী কাকা (চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায়) বন্ধু ছিলেন। সৌরভ ঠিক আমার খেলার মাঠের বন্ধু নয়, তার অনেক আগে থেকেই আলাপ। ওর দাদা স্নেহাশিস আসলে আমার বন্ধু ছিল। আমরা এক ব্যাচের ছেলে। একসঙ্গে স্কুল ক্রিকেট ও অনূর্ধ্ব ১৫ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছি। সৌরভকে বরং রাজের (স্নেহাশিসের ডাকনাম) ভাই হিসাবেই চিনতাম। মিষ্টি দেখতে ছেলে। ও নিজেও ক্রিকেট খেলত। তবে ওর ফুটবলে বেশি আগ্রহ ছিল। আমি রাজের জন্মদিনে গেলে বা আমার জন্মদিনে ওরা এলে রাজের ভাই হিসাবেই দেখতাম।'
সৌরভকে কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকে দেখছেন। নানা চড়াই উৎরাই সামনে থেকে দেখেছেন। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়ান ডে অভিষেক। তারপর জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া। ১৯৯৬ সালে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন। কী ছিল সৌরভের সেই কামব্যাকের মূলমন্ত্র? জয়দীপ বলছেন, '১৯৯২ সালে ওয়ান ডে অভিষেক হলেও আমার মনে হয় ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো যতটা তৈরি হওয়ার দরকার ছিল ততটা তৈরি হয়নি। তবে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফি, ইরানি ট্রফি, দলীপ ট্রফি, ইন্ডিয়া এ-র হয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলেছে। ভারত এ দলের হয়ে অনেক সফর করেছে। তাতেই ওর প্রস্তুতি ঠিকঠাক হয়। তারপরই সৌরভের দুরন্ত প্রত্যাবর্তন।'
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামটা শুনলে প্রথম কোন শব্দটা মাথায় আসে? 'সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামটা শুনলে ক্রিকেট মাঠে প্রথমে মনে হয় সাহস ও দুর্দান্ত প্রতিভা। আর মানুষ হিসাবে বলি, ও অত্যন্ত ভাল মানুষ। সেটাই সবাই মনে রাখে। প্লেয়ার আসে, প্লেয়ার চলে যায়, মানুষ থেকে যায়,' বলছিলেন জয়দীপ।
সৌরভ খেতে ভালবাসেন। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেও। ঘরোয়া আড্ডায় সৌরভ কেমন? জয়দীপ বলছেন, 'সৌরভের সঙ্গে রাতের পর রাত জমিয়ে আড্ডা হয়। জন্মদিনের দিনই রাত সাড়ে তিনটে বেজে গেল। জমিয়ে আড্ডা চলছিল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় ক্রিকেট থাকে। তবে সঙ্গে পরিবার থাকে বলে পুরোটা ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয় না। আলোচনা অন্যান্য দিকেও গড়িয়ে যায়। তারপর হঠাৎ ঘড়িতে দেখি সাড়ে তিনটে বা চারটে বাজে। মনে হয়, এই রে, কাল সকালে অনেক কাজ। এবার তো ঘুমোতে হবে। কালকে সকালে উঠে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে।' যোগ করলেন, 'তবে খুব বেশি বাইরে বেরোই না। কারণ, সারাক্ষণই বাইরে বাইরে থাকতে হয়। যখন কলকাতায় থাকি বা একই শহরে থাকি তখন বাড়িতে বসে আড্ডাটা আমাদের দুজনেরই ভীষণ প্রিয়।'
ক্রিকেট মাঠে সৌরভের সাফল্যের নেপথ্যে কী? জয়দীপের পর্যবেক্ষণ, 'ওর এত প্রতিভা ছিল যে, সাফল্য পেতই। ভগবান ওর মধ্যে ক্রিকেট ভরে দিয়েছে। তবে ক্রিকেটারের সাপোর্ট সিস্টেম হল তার পরিবার। সৌরভের বাবা, মা, দাদা, ডোনা, সানা মিলে সেই সাপোর্ট সিস্টেমের কাজ করেছে। এদের ছাড়া সৌরভ সাফল্য পেত না।'
আরও পড়ুন: 'বাবাকে কোনওদিন এত স্নায়ুর চাপে ভুগতে দেখিনি', হার না মানা বন্ধু সৌরভের গল্প শোনালেন বৈশালি