গুয়াহাটি: প্রায় আড়াই বছর পরে গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে (Barsapara Cricket Stadium) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরেছিল। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে ভারতের শেষ ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গিয়েছিল। এই ম্যাচেও বরুণদেবের বিঘ্ন ঘটানোর সম্ভাবনা ছিল বটে। তবে বৃষ্টি নয়, সাপ ও বাতিস্তম্ভের আলোর জেরেই ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি (IND vs SA 2nd T20I) ম্যাচে বিঘ্ন ঘটল। 


মাঠে সাপের প্রবেশ


ভারতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারে ম্যাচ প্রথমবারের জন্য স্থগিত হয়। মাঠের মধ্যে হঠাৎই এক সাপ ঢুকে পড়ায়ই যত কাণ্ড। কয়েকজন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার বিষয়টি ম্যাচের আম্পায়ারদের নজরে আনেন। এই ঘটনার পরেই দ্রুত মাঠের কর্মীরা মাঠে জরুরি সরঞ্জাম নিয়ে ঢুকে পরিস্থিতি সামাল দেন। বেশ খানিকটা সময় বন্ধ থাকে খেলা। সেই সময় অবশ্য পানীয় বিরতির ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। পরে মাঠ কর্মীরা সেই সাপটিকে নিয়ে মাঠের বাইরে বের হয়ে যাওয়ার পরেই পুনরায় আবার খেলা চালু হয়। তবে এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের সময়ও ফের একবার খেলা বেশ খানিকটা সময়ের জন্য় বন্ধ রাখতে হয়।


নিভল বাতিস্তম্ভ


এবার অবশ্য সাপ নয়, এবার বিঘ্ন ঘটায় বাতিস্তম্ভ। ম্যাচ চলাকালীনই হঠাৎ করে মাঠের একটি বাতিস্তম্ভের আলো নিভে যায়। বেশ খানিকটা সময় এর জেরেও খেলা বন্ধ থাকে। মাঠের কর্মীরা অবশ্য তৎপর থাকায় খুব বেশি বিলম্ব হয়নি। আলো ফিরে আসতে আবারও শুরু হয় ম্যাচ। ম্যাচে এই দুই বিঘ্ন অবশ্য ম্যাচের উত্তেজনায় বিন্দুমাত্র ভাটা ফেলতে পারেনি। দুই দল মিলে ভাল ব্যাটিং পিচে এদিন মোট ৪৫০-র অধিক রান তোলে। দর্শকরা প্রচুর ছয়, চার উপভোগ করার সুযোগ পান। শেষমেশ ১৬ রানে ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের সিরিজও নিজেদের নামে করে ভারত। এই প্রথম দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া।


ম্যাচের বিবরণ


এদিনে ম্যাচে প্রথমে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। তবে তাঁর বোলাররা তাঁকে কাঙ্খিত সাফল্য এনে দিতে পারেনি। দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত ও কেএল রাহুল ৯৬ রানের বড় পার্টনারশিপে ভারতের হয়ে মজবুত ভিত গড়ে দেন। সেই ভিতেই ইমারত গড়েন সূর্যকুমার যাদব ও বিরাট কোহলি। রোহিত এদিন ৪৩ ও রাহুল ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন। নিজের পর পর দুই ওভারে দুই ওপেনারকেই সাজঘরে ফেরান প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ।


কিন্তু এদিন সূর্যকুমার বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন। তিনি প্রমাণ করে দিলেন কেন তিনি আইসিসির ক্রমতালিকায় টি-টোয়েন্টিতে দুই নম্বর ব্যাটার। মাত্র ১৮ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন সূর্যকুমার যাদব। কাগিসো রাবাদা ১৫তম ওভারে তো ২২ রান তোলেন সূর্য। তার সুবাদেই হু হু করে স্কোরবোর্ডে ভারতের রান বাড়তে থাকে। বিরাট কোহলি শুরুটা দেখে শুনে করলেও, 'ডেথ ওভার'-এ তিনিও নিজের শট খেলা শুরু করেন। কোহলি ও সূর্য তৃতীয় উইকেটে শতাধিক রানের পার্টনারশিপও গড়েন। তবে দুর্ভাগ্যবশত ভুল বোঝাবুঝির জেরে মাত্র ২২ বলে ৬১ রান করেই রান আউট হতে হয় সূর্যকুমারকে। কোহলি অবশ্য ৪৯ রানেই অপরাজিত থেকে যান। দীনেশ কার্তিক ১৭ রান করেন ভারত তিন উইকেটের বিনিময়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৩৭ রান তোলে।


ব্যাটারদের দাপটে ভারত ২৩৭ রান তোলার, দক্ষিণ আফ্রিকা সবসময়ই চাপে ছিল। তবে কুইন্টন ডি কক এবং ডেভিড মিলার (David Miller) অনবদ্য দুই ইনিংস খেলে রামধনুর দেশকে ম্যাচ জেতানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন বটে। ডি কক ৬৯ রান করেন। ১০৬ করেন মিলার। তবে তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২২১ রানই তুলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৬ রানে ম্যাচ জেতে ভারতীয় দল। ভারতের হয়ে এদিন নতুন বলে আবারও প্রভাবিত করেন অর্শদীপ সিংহ। নিজের ইনিংসের প্রথম ওভারেই রাইলি রুসো ও তেম্বা বাভুমাকে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। তবে শেষের দিকে চাপের মুখে একাধিক নো বল করে ফেলেন তরুণ বোলার। নিজের চার ওভারে ৬২ রান খরচ করেন তিনি। 


আরও পড়ুন: ভারতীয় হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে অনন্য রেকর্ড গড়লেন বিরাট কোহলি