কলকাতা: প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার তুলসীদাস বলরাম (Tulsidas Balaram)। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন নার্সিংহোমে। তবে আর পারলেন না। জীবনযুদ্ধে পরাজিতই হতে হল ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী তারকা ফুটবলারকে। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়-চুনি গোস্বামীর পর এবার চলে গেলেন তাঁদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। কিংবদন্তির ফুটবলারের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।


দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান


বাইপাসের ধারে এক নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। আজ দুপুরে প্রয়াত হন। চুনী, পিকে, বলরাম। ভারতীয় ফুটবলের অপ্রতিরোধ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। ময়দানে যাঁরা পরিচিত ছিলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর নামে। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ও চুনী গোস্বামী। এবার চলে গেলেন তাঁদের এক অভিন্নহৃদয় বন্ধু তুলসীদাস বলরাম। প্রাক্তন ফুটবলারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অরুণ ঘোষের কথায় ধুরন্ধর ফরোয়ার্ড বলরামের শুধু সামনে নয়, তাঁর মাথার পিছনেও যেন দু'টো চোখ ছিল।


১৯৫৭-তে নিজামের শহর থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় আসেন বলরাম। সই করেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। লাল হলুদের হয়ে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত মাঠ কাঁপিয়েছেন তিনি। ১৯৬১-তে বলরামের নেতৃত্বেই কলকাতা লিগ ও আইএফএ শিল্ড জেতে লাল হলুদ। ২৩ টি গোল করে সেই বছর বলরামই হন সর্বোচ্চ স্কোরার। শুধু ক্লাবের জার্সিই নয়, দেশের জার্সিতেও কিন্তু ফুল ফুটিয়েছেন তারকা ফরোয়ার্ড। ১৯৫৮ সালের এশিয়ান গেমসে হংকংয়ের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ফুটবল খেলেন বলরাম। তাঁর গোল ও অ্যাসিস্টেই ৫-২-এ হংকংকে হারায় ভারত।


চার বছর পর জাকার্তা এশিয়ান গেমসে সোনাজয়েও তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ হারায় ভারতীয় দল। এর আগে ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিক্সেও বলরাম ভারতের হয়ে অনবদ্য পারফর্ম করেন। 'গ্রুপ অফ ডেথে' ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ও পেরুর সঙ্গে ছিল ভারতীয় দল। প্রথম ম্যাচে ভারতীয় দল হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ২-১ পরাজিত হলেও, গোল করেন বলরাম। দ্বিতীয় ম্যাচে ফ্রান্সকে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করে ভারত। সেই ম্যাচেও বলরামে পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। দুর্ভাগ্যবশত শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৯৬৭-তে অবসর নেন বলরাম। ময়দান ছাড়লেও পিকে, চুনী ও বলরাম, ত্রিমূর্তির বন্ধুত্ব কিন্তু অটুটই ছিল।


শোকাচ্ছন্ন সুব্রত


জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ২৭ ম্যাচে ১০টি গোল করেছেন বলরাম। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত সুব্রত ভট্টাচার্য। প্রাক্তন ফুটবলার অকপটে মেনে নিচ্ছেন, তাঁর ফুটবল কেরিয়ারে বলরামের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাক্তন তারকা ফুটবলার বলেন, 'আজকের দিনে সুব্রত যে সুব্রত হয়েছে, তার পিছনে বলরামের অনেক অবদান। আমাকে ওঁ বিএনআরে সই করিয়েছিল। রেলের চাকরিটাও ওঁর সুবাদেই পাওয়া। আমি গরিব পরিবারের ছেলে ছিলাম। রেলে আমার চাকরি পাওয়ার কথাটা প্রথম শুনে আমার মা কেঁদে ফেলেছিলেন। ওঁর ঋণ আমি কোনওদিনও শোধ করতে পারব না।' 


আরও পড়ুন: শাহবাজ-অভিষেকের লড়াই সত্ত্বেও ১৭৪ রানে প্রথম ইনিংস শেষ বাংলার