কলকাতা: নামের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি, আর তাতেই একজন ক্রিকেটারের কেরিয়ারের ১০টা বছরের অপূরণীয় ক্ষতি। পাঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) হরপ্রীত সিংহ ভাটিয়ার (Harpreet Singh Bhatia) সঙ্গে ঠিক এমনটাই হয়েছে। এক সংবাদ সংস্থা তাঁর সঙ্গে হরমীত সিংহের নাম গুলিয়ে ফেলায় দীর্ঘ এক দশক আইপিএলে তাঁকে খেলতে দেখা যায়নি। ঠিক কী ঘটেছিল হরপ্রীতের সঙ্গে?


অপূরণীয় ক্ষতি


২০১২ সালে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার হরমীত সিংহ, অন্ধেরি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গাড়ি চালানোর জন্য গ্রেফতার হন। তবে ভুল করে এক সংবাদ সংস্থা এই খবর প্রকাশের সময় হরমীতের বদলে হরপ্রীত সিংহের নাম তাঁদের প্রতিবেদনে লেখে। পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের ভুল শুধরে নিলেও, হরপ্রীতের কেরিয়ারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। এই প্রতিবেদনের ফলে ২০১০ সালে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হরপ্রীতকে তাঁর তৎকালীন ফ্র্যাঞ্চাইজি পুণে ওয়ারিয়ার্স নিজেদের দল থেকে ছেঁটে ফেলে। একদা ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসাবে গণ্য হওয়া হরপ্রীতকে পরবর্তী পাঁচ বছর আর কোনও আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁদের দলে নেয়নি। হরপ্রীত নিজেও পরবর্তীকালে এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনের একটি সামান্য ভুলই যে তাঁর কেরিয়ারকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে, সেকথাও স্বীকার করেন তিনি।


পুণের হয়ে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামার পাঁচ বছর পর সরফরাজ খানের বদলি হিসাবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর হরপ্রীতকে দলে নেয় বটে, তবে তিনি একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এরপর আরও ছয় বছরের অপেক্ষা। কেকেআরের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের পর এ মরসুমে অবশেষে তিনি পাঞ্জাব কিংসের হয়ে আবার আইপিএলে (IPL 2023) মাঠে নামার সুযোগ পান। এই দুই ম্যাচের মধ্যে ১০ বছর ৩২৫ দিনের দীর্ঘ ব্যবধান ছিল। আইপিএলে আর কোনও ক্রিকেটারের দুই ম্যাচের মধ্যে এতদিনের ব্যবধান নেই।


আরও পড়ুন: এই পেঁয়াজ কাটলেও চোখে আসে না জল! রয়েছে আরও গুণ, জেনে নিন কী কী?


পাঞ্জাব কিংসের হয়ে এই মরসুমে কিন্তু বেশ নজরও কেড়েছেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ২৮ বলে ৪১ রানের একটি ঝাঁ চকচকে ইনিংস খেলেন হরপ্রীত। অর্জুন তেন্ডুলকরের বিরুদ্ধে এক ওভারে চার বলে ১৮ রান করে সবার নজরে চলে আসেন তিনি। স্য়াম কারানের সঙ্গে ৯২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে জিততেও সাহায্য করেন হরপ্রীত। হরপ্রীতের এই ইনিংসই ব্যাট হাতে তাঁর দক্ষতা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছত্তিশগড়ের হয়ে খেলা এই তারকার রেকর্ড বেশ ভাল।


দুর্দান্ত রেকর্ড


প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হরপ্রীত ৭৫টি ম্যাচে ৪৮.১২ গড়ে মোট ৪৯০৯ রান করেছেন। ১৫টি শতরান করার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর দখলে। লিস্ট এ-তে  ৪৫.১১ গড়ে ৮৪ ম্যাচে ৩০২৩ রান করেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তাঁর পারফরম্যান্স কিন্তু একদমই খারাপ নয়। বিশ ওভারের ক্রিকেটে ৮০টি ম্যাচে ১২৪.৬৮-র স্ট্রাইক রেটে হরপ্রীতের দখলে রয়েছে ২২৭৮ রান। তবে গত মরসুমের বিজয় হাজারে ট্রফিতে নজরকাড়া পারফরম্যান্সই কিন্তু তাঁকে পাঞ্জাব দলে জায়গা পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছে। তিনি বিজয় হাজারের সাত ম্যাচে ছত্তিশগড়ের হয়ে ৯৪.৩৩ স্ট্রাইক রেটে  মোট ৫১৬ রান করেন। 


পরিসংখ্যানগত দিক থেকে হরপ্রীত বড় বড় তারকাদের গোল দিতে পারবেন। কে বলতে পারে, সেই প্রতিবেদনে ভুল নাম লেখা না হলে হয়তো এই প্রতিভাবান ব্যাটার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলে ফেলতেন। তবে ৩১ বছর বয়সি হরপ্রীতের কাছে এখনও খানিকটা সময় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সূর্যকুমার যাদব, রাহুল ত্রিপাঠীরা ৩০-র আশেপাশে এসেও জাতীয় দলে অভিষেক ঘটানোর সুযোগ পেয়েছেন। আইপিএল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্স কিন্তু হরপ্রীতের জন্যও জাতীয় দলের দরজা খুলে দিতে পারে। 


আরও পড়ুন: অধিনায়ক হিসাবে এক দশক পার, রাজস্থানের বিরুদ্ধে ম্যাচ রোহিতকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত মুম্বইয়ের