আমদাবাদ: তাঁর জীবন কাহিনি নিয়ে নির্মিত ছবি 'এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি'- তে একটি গান রয়েছে, 'কৌন তুঝে ইউ প্য়ায়ার কারেগা। জ্যয়সে ম্যাঁ ইউ করতা হুঁ'। গতকালের পর থেকে সোশ্য়াল মিডিয়া খুললে একটা বিষয় পরিষ্কার যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে কে কত বেশি ভালবাসেন, তার যুযুধান চলছে। ক্রিকেট খেলে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর এই মানুষটা শুধু একজন ক্রিকেটার নন। একজন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। যেই প্রতিষ্ঠানের সবাই ছাত্র হতে চান। সবাই মাহিমন্ত্রে দীক্ষিত হতে চান। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক হিসেবে পঞ্চমবার ট্রফি জিতে নিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আলবিদা জানিয়েছিলেন তিন বছর আগে আচমকাই। এবার কি হলুদ জার্সিতেও...?


আবেগের সমুদ্রে কোনওদিনই ডুব দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। কাল যখন গোটা ভারতবাসীর হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল, তখনও ডাগ আউটে ক্যামেরার লেন্স দেখাচ্ছে ভাবলেশহীন মুখেই বসে বছর একচল্লিশের 'যুবক'। গত প্রায় দু দশকের ওপরে ঠিক যেভাবে নির্লিপ্ত থেকে একের পর মাইলস্টোন পেরিয়ে এসেছেন, একের পর এক ট্রফি জিতে এসেছেন। তবে দিনের শেষে তিনিও তো মানুষ। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারেন যে ব্যাট-বলের ২২ গজের সাম্রাজ্যে আর বেশিদিন তার থাকা হবে না। সময় ফুরিয়েছে, আজ না হয় কাল যেতেই হবে। তাই হয়ত চাইলেও চোখের জল আটকাতে পারেননি এবার। নিজেই জানালেন সে কথা। ধোনি বলছিলেন, ''আমি জানি যে আমার কেরিয়ারের শেষ পর্যায় চলছে। এখানে প্রথম ম্য়াচ যেদিন খেলতে এসেছিলাম এবার, সেদিন মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে গোটা গ্যালারি ধোনি ধোনি বলে চিৎকার করছিল। আমার চোখ তখন ছলছল করছে। কিছুক্ষণের জন্য ডাগ আউটে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম। নিজের মনকে বোঝাই যে, এই সময়টা আমাকে উপভোগ করতে হবে।''


২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্য়াচ খেলেছিলেন। সেই ম্যাচও বৃষ্টিবিঘ্নিত ছিল। এবারের আইপিএলে ফাইনালও কি কাকতালীয় ভাবে দুদিনে গড়াল বৃষ্টির জন্য। তবে কি....? ২ বারের বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক যদিও কিছুটা আশার আলো দেখিয়ে গেলেন। ম্যাচ শেষে হাসিমুখেই জানালেন, ''পরিস্থিতির বিচারে এটাই অবসর নেওয়ার সেরা সময়। আমি এ মরসুমে যেখানেই গিয়েছি, সেখানে খেলতে গিয়ে এত ভালবাসা, সমর্থন পেয়েছি যে এর পরে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেওয়াটা সহজ। আমার কাছে কঠিন কাজ হল আরও নয় মাস খাটা খাটনি করে নিজেকে নয় মাস ধরে প্রস্তুত করা এবং আরও একটি আইপিএল মরসুম খেলা। সত্যি বলতে অনেকটাই আমার শরীরের ওপর নির্ভরশীল। আমার কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ছয়-সাত মাস রয়েছে। আমার জন্য এটা সহজ হবে না। তবে এটা আমার তরফ থেকে সকলের জন্য একটা উপহার হবে। সকলে আমার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছেন, তার জন্য আমারও তাঁদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়াটা কর্তব্য।''


আগামী কয়েকটা মাস ধোনি ভক্তরা হয়ত অপেক্ষাতেই থাকবেন.. যদি তিনি আবার আসেন, যদি তিনি ফের মাঠে নামেন, যদি আবার হেলিকপ্টার শটে বল গ্য়ালারিতে আছড়ে পড়ে।