কলকাতা: মাথার ওপর হাতটা অনেকটা সাপের ফণার মতো করে তোলা থাকত। তিনি দৌড়ে আসতেন। গোটা ইডেন গার্ডেন্সে যেন পিন পড়লেও আওয়াজ পাওয়া যাবে। বল তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে কোনদিকে বাঁক নেবে, বুঝেই উঠতে পারতেন না ব্যাটাররা। কখনও অফস্টাম্প থেকে লেগস্টাম্পে। কখনও লেগস্টাম্প থেকে অফস্টাম্পে। কখনও আবার সবাইকে ধোঁকা দিয়ে সোজা। কোনওটা নীচু হতো। কোনওটা লাফাত। ব্যাটার বোকা বনে যেতেন। উইকেট খুইয়ে বসতেন। আর গ্যালারির শব্দব্রহ্ম যেন শোনা যেত গোটা শহরে।


সেই অযোধ্যা আর নেই। সেই রামও নেই। সুনীল নারাইন (Sunil Narine) যেন এখন অতীতের ছায়া। বোলিং অ্যাকশন বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর থেকেই বলের ধার কমেছে। ভারও। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুটি ট্রফি দিয়েছেন। ২০১২ সালে কেকেআর যেবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ডেরায় গিয়ে সিএসকে-কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল, নারাইন নিয়েছিলেন ২৪ উইকেট। পরের বছর নিয়েছিলেন ২২ উইকেট। ২০১৪ সালে ফের চ্যাম্পিয়ন নাইটরা। সেবারও বাইশ গজে নারাইন নারাইন...। ক্যারিবিয়ান স্পিনার নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।


সেই নারাইনই গত আইপিএলে ১৪ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। তবু তাঁকে আক্রমণ করতে ভয় পেতেন ব্যাটাররা। দ্বিধায় ভুগতেন। যদি ফের স্টাম্প নড়ে যায়। বা উইকেটের সামনে পায়ে আছড়ে পড়ে। যে কারণে ওভার প্রতি মাত্র ৫.৫৭ রান করে খরচ করেছিলেন নারাইন। এবার সেই কোষাগারেও বর্গি হানা। ১০ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ৭ উইকেট। ইকনমি? ৮.৭৬। যে নারাইনকে একটা বাউন্ডারি মেরে ব্যাটাররা কলার তুলে ঘুরে বেড়াতেন, সেই স্পিনারের বলে এখন চার-ছক্কার বন্যা।


ক্যারিবিয়ান স্পিনারের রহস্য কি ভেদ করে ফেলেছেন ব্যাটাররা?


ওয়াসিম জাফর বলছেন, 'পরিসংখ্যান তো সকলের হাতেই আছে। যত বেশি খেলা হবে, কোনও বোলারকে খেলা তত বেশি সহজ হয়ে যাবে। ২-৩ মরসুম খেলে ফেললে খুব একটা রহস্য বেঁচে থাকে না।' জাতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার যোগ করেছেন, 'নারাইনকে কৃতিত্ব দিতে হবে। এতদিন ধরে ওর রহস্য কেউ ভেদ করতে পারেনি বলে। এই মরসুমটা ওর ভাল কাটছে না। তবে ও অসাধারণ পারফর্মার।' নারাইনের সমালোচনাতেও নারাজ পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং কোচ। বলছেন, 'বুঝতে হবে যে, এখনও পর্যন্ত আইপিএলে খেলা বোলারদের মধ্যে অন্যতম সেরা ও।'


কেউ কেউ বলছেন, যবে থেকে ইডেনের উইকেটের চরিত্র বদলেছে, তবে থেকে নারাইন বর্ণহীন। একটা সময় ছিল ইডেন মানেই নাইটদের চেনা ফর্মুলা - প্রথমে ব্যাট করো। ১৪০ রান বোর্ডে তুলে দাও। তারপর মন্থর পিচে স্পিনের ফাঁদে প্রতিপক্ষকে নাকানি চোবানি খাওয়াও। যদিও পাল্টে যাওয়া উইকেটের চরিত্রের সঙ্গে ইডেনে কেকেআরের স্ট্র্যাটেজিও বদলে গিয়েছে। এখন পেসাররাও সমান গুরুত্ব পান নাইট শিবিরে। যদিও এবার মরসুমের শুরু থেকেই ছবিটা বেশ আলাদা। কিছুটা যেন পুরনো ঝলক। কেকেআরের এবারের সেরা অস্ত্র স্পিনাররাই। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী ও সুয়াশ শর্মার স্পিন ত্রিফলা প্রতিপক্ষকে বিঁধলে কেকেআর জিতছে। ঘায়েল করতে না পারলে কেকেআর হারছে। নারাইন ছন্দে নেই। তবু তাঁর গুরুত্ব কমছে না। 


ইডেনে বল ঘুরতে শুরু করলে কি ফের টগবগিয়ে উঠবে নাইটদের সেরা স্পিন-অস্ত্র? ফের রহস্যের জাল বুনবেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার?