হায়দরাবাদ: শেষ খেতাব (IPL 2023) প্রায় ৭ বছর আগে। ২০১৬ সালে। ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে ফাইনালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (Sunrisers Hyderabad)। তারপর থেকে ট্রফি নেই। রয়েছে শুধু অন্তর্দ্বন্দ্ব। কখনও ওয়ার্নারকে বাদ দিয়ে কেন উইলিয়ামসনকে অধিনায়ক করা হয়েছে। কখনও সংঘাত হয়েছে রশিদ খানের সঙ্গে। গতবার আট নম্বরে শেষ করেছিল। প্লে অফের যোগ্যতা পায়নি। এবার অবশ্য খোলনলচে বদলে মাঠে নামছে হায়দরাবাদ। কোচ করা হয়েছে কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাকে (Brian Lara)। অধিনায়ক হয়েছেন এডেন মারক্রাম। কেমন হয়েছে এবারের দল? নিমেষে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অস্ত্র রয়েছে হাতে? সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হাল হকিকত নিয়ে হাজির এবিপি লাইভ।
শক্তি
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সবচেয়ে বড় শক্তি দলের পেস বোলিং আক্রমণ। রয়েছেন তরুণ তুর্কি উমরন মালিক ও অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমার। ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে নিয়মিতভাবে বল করেন উমরন। জম্মু-কাশ্মীরের পেসারকে দেখে মুগ্ধ ডেল স্টেন, শোয়েব আখতারের মতো বিশ্বের তাবড় প্রাক্তন ফাস্টবোলাররা। গত আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি পেসার। যার মধ্যে এক ম্যাচে ৫ ও আরেক ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। স্ট্রাইক রেট? ১৩.৪১। কার্যত প্রত্যেক ২ ওভারের ব্যবধানে উইকেট তুলেছেন উমরন। আইপিএলে বল হাতে বরাবরের ভরসা ভুবনেশ্বর কুমার। দুদিকে বল স্যুইং করাতে পারেন। যে কোনও পিচে বিপজ্জনক। নতুন বলের পাশাপাশি ডেথ ওভারেও ধারাল। গত আইপিএলে ওভার প্রতি মাত্র সাড়ে সাত করে রান খরচ করেছিলেন। সঙ্গে রয়েছেন টি নটরাজন। তামিলনাড়ুর পেসার গত আইপিএলে ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। গতির বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের পরীক্ষা নেবেন হায়দরাবাদের পেসাররা।
ব্যাটিংয়ে ভরসা রাহুল ত্রিপাঠির ফর্ম। গত আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ৪১৩ রান করেছিলেন। তিন নম্বরে নামেন। গত আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ৪৪ বলে ৭৬ রান করে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।
পাঞ্জাব কিংস ছেড়ে দেওয়ার পর ময়ঙ্ক অগ্রবালকে দলে নিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলে ১১৩ ম্যাচে ২৩২৭ রান। ১টি সেঞ্চুরি ও ১২টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে কর্নাটকের তারকার। বড় ইনিংস গড়তে ময়ঙ্কের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকবে হায়দরাবাদ।
দুর্বলতা
আরসিবি-র সবচেয়ে বড় কাঁটা অনভিজ্ঞতা। নীতিশ কুমার রেড্ডি, উপেন্দ্র সিংহ যাদব, সনবীর সিংহ, সমর্থ ব্যাস, ময়ঙ্ক ডগর, বিভরান্ত শর্মা, আদিল রশিদ, আকিল হোসেন, হ্যারি ব্রুক – আইপিএলে এখনও পর্যন্ত অভিষেক হয়নি, এরকম এক ঝাঁক ক্রিকেটার রয়েছেন দলে। ময়ঙ্ক মারকাণ্ডে, অনমোলপ্রীত সিংহ, হেনরিক ক্লাসেন, আব্দুল সামাদ, গ্নেন ফিলিপ্স, ফজলহক ফারুকি, কার্তিক ত্যাগী, দলের প্রচুর ক্রিকেটার মরসুমের সব ম্যাচও খেলেননি। কেউ খেলেছেন ৩টি ম্যাচে, কেউ ৫টি।
ওয়াশিংটন সুন্দর ছাড়া আর বিশ্বমানের কোনও স্পিনার নেই দলে। রশিদ খানের বিকল্প পাওয়া যায়নি। স্লগ ওভারে চার-ছক্কা মেরে ২-১ ওভারে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বিগহিটারের অভাব ভোগাতে পারে দলকে।
এক্স-ফ্যাক্টর
হায়দরাবাদের সবচেয়ে বড় এক্স-ফ্যাক্টর ব্রায়ান লারার মগজাস্ত্র। ক্রিকেট মাঠে যাঁর কীর্তি অবিস্মরণীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২৩৫৮ রান। ৫৩ সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মহাতারকা দলের মেন্টর আগেও ছিলেন। এবার কোচ হিসাবে প্রথম। নতুন অধিনায়ক। সঙ্গে এক ঝাঁক তরুণ তুর্কি। সবাইকে নিয়ে জয়ের রসায়ন তৈরি করার চ্যালেঞ্জ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির সামনে। সঙ্গে পেস বিভাগের বৈচিত্রও সম্পদ হায়দরাবাদের। উমরন মালিকের গতি, ভুবনেশ্বরের স্যুইং, নটরাজনের অভ্রান্ত লাইন-লেংথ। প্রতিপক্ষ ব্যাটিংয়ের কঠিন পরীক্ষা নেবেন ত্রয়ী।
গেমচেঞ্জার
৬ বলে ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারেন উমরন মালিক। আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ভারতীয় পেসার। স্পিডোমিটার দেখলে চমকে উঠতে হয়। গত আইপিএলের দ্রুততম বলটি করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন। ঘণ্টায় ১৫৭.৩ কিলোমিটার গতিতে। তারপর শুধুই উমরন ম্যাজিক। গত আইপিএলে প্রথম দশটি দ্রুততম বলের মধ্যে আটটিই বেরিয়েছিল উমরনের হাত থেকে। তাঁর দ্রুততম বলটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৭ কিলোমিটার। গত আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়েছিলেন। যে কোনও ব্যাটিং বিভাগকে গতির আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতেন পারেন জম্মু-কাশ্মীরের তরুণ।
প্রথমে ডেকান চার্জার্স, পরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, মোট দুবার সুদৃশ্য ট্রফি গিয়েছে নিজামের শহরে। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে মুকুটহীন হায়দরাবাদ। গত মরসুম দুঃস্বপ্নে কেটেছে। টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল। এবার কি নতুন কোচ-অধিনায়ক জুটির হাত ধরে ট্রফি জিতবে হায়দরাবাদ? অনভিজ্ঞ দল নিয়ে কেমন পারফর্ম করেন মারক্রামরা, দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন: প্রথম ম্যাচে জঘন্য হার, তবু বুমরাকে নিয়ে হাহুতাশ করতে রাজি নন রোহিত