কলকাতা: হায়দরাবাদে ডেভিড ওয়ার্নারের (David Warner) নেতৃত্বে নাটকীয় জয় দিল্লি ক্যাপিটালসের (DC)। কলকাতায় বিদায় বার্তা দিয়ে গেলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? আইপিএলের সেরা পাঁচ খবর এক ঝলকে।


দিল্লির জয়


ম্যাচের শেষে দুজনকে ধন্যবাদ দিতে পারেন ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner)। যাঁর কাছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ আর পাঁচটা ম্যাচের চেয়ে আলাদা। হায়দরাবাদ মানে উপেক্ষার জবাব দেওয়ার ম্যাচ। অপমানের হিসেব নেওয়ার লড়াই। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় যে লড়াই কার্যত হারতে বসেছিলেন অস্ট্রেলীয় তারকা।


হারলেন না, বরং ওয়ার্নার হাসিমুখে মাঠ ছাড়লেন দু'জনের জন্য। একজন অক্ষর পটেল। গুজরাতের অলরাউন্ডার দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে ৩৪ রান করলেন। তাঁর জন্যই প্রথমে ব্যাট করে ১৪৪/৯ স্কোর তুলতে পারল দিল্লি ক্যাপিটালস। পরে বল হাতেও দুরন্ত বাঁহাতি স্পিনার। ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান করচ করে তুলে নিলেন ২ উইকেট। তাঁর শিকার ময়ঙ্ক অগ্রবাল ও এইডেন মারক্রাম। হায়দরাবাদের সেরা দুই ব্যাটার।


দ্বিতীয়জন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেন বাংলার হয়ে। সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায় তাঁকে কিনেছিল দিল্লি। বাংলা থেকে কেউ আইপিএলের নিলামে এত টাকা পাননি। সেই মুকেশ কুমার যখন শেষ ওভার বল করতে এলেন, ম্যাচ জিততে ১৩ রান চাই হায়দরাবাদের। ক্রিজে মার্কো জানসেন। যিনি বিগহিটার। সঙ্গী ওয়াশিংটন সুন্দর। ১১ বলে ২০ রান করে যিনি বিধ্বংসী ছন্দে ছিলেন। শেষ ওভারে বাংলার পেসার মাত্র ৫ রান খরচ করলেন। নিশ্চিত করে দিলেন, ২ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়বে দিল্লি।


রাহানের জবাব


কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) শিবিরে একটা অভিশাপ বারবার তাড়া করে ফেরে। কোনও ক্রিকেটারকে ছেড়ে দেওয়া হলে অন্য দলে গিয়ে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতিয়ে দেন। সূর্যকুমার যাদবকে দেখুন। শুভমন গিলকে দেখুন। কুলদীপ যাদবেরও পুনর্জন্ম হয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালসে গিয়ে।


সেই তালিকায় নবতম সংযোজন অজিঙ্কা রাহানে (Ajinkya Rahane)। যাঁকে এ মরসুমের জন্য রিটেন করেনি কেকেআর। মিনি অকশনে তাঁকে কিনেছিল সিএসকে। আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে দলের অধিনায়ক, সেখানে টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা গায়ে সেঁটে যাওয়া ক্রিকেটারও ল্যাপ স্কুপ মারবেন। তিন নম্বরে নেমে ২৯ বলে অপরাজিত ৭১ রান করে দিয়ে যাবেন। ধোনির ব্যাটিং দেখতে মুখিয়ে থাকা গ্যালারি দেখবে, মহানায়কের মঞ্চের আলো কেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন একজন, যাঁকে আইপিএলে পার্শ্বচরিত্র দিতে গিয়েও অনেকে দুবার ভাববেন।


সেই রাহানের ব্যাটিং বিক্রমে প্রথমে ব্যাট করে সিএসকে তুলেছিল ২৩৫/৪। কেকেআরকে কার্যত একপেশেভাবে হারানোর পর পুরনো দলকে কটাক্ষ করতেও ছাড়লেন না রাহানে। কেকেআরের উপেক্ষার জবাব? ম্যাচের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসে রাহানে বেশ অপ্রত্যাশিতভাবে বললেন, 'আমি চাই মুখ নয়, আমার ব্যাট কথা বলুক।'


সচিন ৫০


১৯৮৯ সালে ভারতের পাকিস্তান সফর। বিপক্ষে তিন স্পিডস্টার। যাঁদের মধ্যে একজন, ইমরান খান (Imran Khan) ততদিনে কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে। বাকি দুজন, ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) ও ওয়াকার ইউনিস। যাঁদের বলা হচ্ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ফাস্টবোলার। সঙ্গে কিংবদন্তি স্পিনার আব্দুল কাদির। সেই সিরিজেই ভারতের জার্সিতে অভিষেক এক বিস্ময় বালকের। মাত্র ১৬ বছর বয়স। কিন্তু কী অফুরন্ত সাহস! শিয়ালকোট টেস্টে ওয়াকারের বাউন্সারে নাক ফাটল। জাভেদ মিয়াঁদাদ স্লেজিং শুরু করলেন। টলানো গেল না। রক্তাক্ত নাক নিয়ে হাফসেঞ্চুরি করলেন। 


পরের ২৪ বছর বিশ্বক্রিকেটকে শাসন করলেন সেদিনের সেই লড়াকু যোদ্ধা। গোটা বিশ্ব যাঁকে চিনেছে সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) নামে। কুর্নিশ করেছে তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে। একবাক্যে সকলে স্বীকার করে নিয়েছেন, ডন ব্র্যাডম্যানের পর এত বড় মাপের ব্যাটসম্যান আর আসেননি। যাঁকে দেখে পরবর্তীকালে স্বয়ং ব্র্যাডম্যান বলেছিলেন, আরে! এ ছেলে তো আমার মতো ব্যাট করে। 


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। কিংবদন্তি সচিন সোমবার পূর্ণ করলেন জীবনের হাফসেঞ্চুরি। পঞ্চাশ পূর্ণ হল মাস্টার ব্লাস্টারের। ক্রিকেট ঈশ্বরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবার্তার ঢল নেমেছে। ক্রিকেটার থেকে চলচ্চিত্র জগতের সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ, সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে 'হ্যাপি বার্থ ডে সচিন'-এ মুখরিত।


পঞ্চাশ পূর্ণ করছেন বলে এবারের জন্মদিন ভীষণ স্পেশ্যাল। কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছিল সেলিব্রেশন। রমরমিয়ে চলছে আইপিএল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর সচিন। দিন দুয়েক আগে ওয়াংখেড়েতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচের মাঝে স্টেডিয়ামেই পালন করা হয়েছিল তেন্ডুলকরের পঞ্চাশতম জন্মদিন। সোমবার সকাল থেকে দেশে, গোটা বিশ্বে উৎসবের আবহ।


ধোনির মুখে বাংলা


প্রায় ১৮ বছর আগের ঘটনা। সাল ২০০৫। শ্যামবাজার ক্লাবের হয়ে কলকাতায় পি সেন ট্রফি (P Sen Trophy) খেলে গিয়েছিলেন তিনি। ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে তাঁর ১২৬ বলে অপরাজিত ২০৭ রানের ইনিংস শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।


সেই ইনিংসের কথা এখনও ভোলেননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। ঠিক যেমন বিস্মৃত হননি শ্যামবাজার ক্লাব ও তাদের সদস্য-সমর্থকদের কথাও। রবিবার ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR vs CSK) পর্যুদস্ত করার পর স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। মাঠেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় সিএবি কর্মী তথা শ্যামবাজার ক্লাবের সদস্য চিরঞ্জীব মণ্ডলের। হেসে কথা বলেন ধোনি। তাঁর কাছে আব্দার করা হয়, ইডেন গার্ডেন্সের মাঠকর্মীরা ছবি তুলতে চান। অমায়িক ধোনি রাজি হয়ে যান। প্যাড-গ্লাভস ড্রেসিংরুমে রেখে ফের মাঠে হাজির হয়ে যান ছবি তোলার অনুরোধ রক্ষায়।


ধোনি-দর্শনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত চিরঞ্জীব। বলছিলেন, 'শ্যামবাজার ক্লাবের হয়ে পি সেন ট্রফি খেলে গিয়েছিলেন ধোনি। সেই থেকেই সুসম্পর্ক। রবিবার ম্যাচের শেষে অনুরোধ করেছিলাম, মাঠের মালিরা আপনার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়। এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। সকলের সঙ্গে ছবি তুললেন।' যোগ করলেন, 'ধোনি কিছুই ভোলেন না। ওইটুকু সময়ের মধ্যে আমার মেয়ের খোঁজ নিয়েছেন।'


ধোনির এটাই শেষ আইপিএল কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। অনেকে ধরেই নিয়েছেন, একচল্লিশের ধোনিকে হয়তো শেষবার চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে বাইশ গজে দেখা যাচ্ছে। ধোনি নিজেও জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। হায়দরাবাদে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। রবিবার কেকেআরের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর ইডেনে দাঁড়িয়েও বলে যান যে, কলকাতার মানুষ হয়তো তাঁকে বিদায় জানাতে মাঠ ভরিয়েছিলেন।


ম্যাচের শেষে পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেও সেই বিষাদের সুরই শোনা গিয়েছে ধোনির গলায়। একটা সময় খড়্গপুরে রেলের টিসি হিসাবে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন। স্ত্রী সাক্ষীও কলকাতায় মেয়ে। শহরের জামাই বাংলা জানেন। বলতেও পারেন। চিরঞ্জীব বলছিলেন, 'আমি ধোনিকে বাংলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, খেলোয়াড় হিসাবে ইডেনে এটাই শেষ তো? ধোনি বাংলাতেই বললেন, সম্ভবত এটাই শেষ ম্যাচ।' 


প্লে অফের দৌড়


কলকাতা নাইট রাইডার্সকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে ষোড়শ আইপিএলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে চেন্নাই সুপার কিংস। পরপর তিন ম্যাচ জিতেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। ৭ ম্যাচের মধ্যে ৫টি জয়। ১০ পয়েন্ট পেয়ে প্লে অফের দৌড়ে এই মুহূর্তে অনেকটাই এগিয়ে সিএসকে।


পয়েন্ট টেবিলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল, ৮ পয়েন্ট করে পেয়েছে ৫টি দল। শুধুমাত্র রান রেটের সামান্য় হেরফেরে তারা রয়েছে কেউ দুইয়ে, কেউ ছয় নম্বরে।


পয়েন্ট টেবিলে রাজস্থান রয়্যালস রয়েছে দুই নম্বরে। ৭ ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতেছেন সঞ্জু স্যামসনরা। রাজস্থানের ঝুলিতে রয়েছে ৮ পয়েন্ট। নেট রান রেট +০.৮৪৪। লখনউ সুপার জায়ান্টস রয়েছে তিন নম্বরে। ৭ ম্যাচ খেলে ৪টি জিতেছেন কে এল রাহুলরা। তাঁদেরও পয়েন্ট ৮। তবে নেট রান রেটে সামান্য পিছিয়ে থাকার কারণে রাজস্থানের চেয়ে এক ধাপ পিছিয়ে রয়েছেন রাহুলরা। লখনউয়ের নেট রান রেট +০.৫৪৭। 


পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে রয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্স। ৬ ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতেছেন হার্দিক পাণ্ড্যরা। তাঁদেরও পয়েন্ট ৮। তবে সমান পয়েন্টে থাকা বাকি চার দলের চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলেছেন হার্দিকরা। তাঁদের নেট রান রেট ভাল। +.২১২। ৭ ম্যাচ খেলে বিরাট কোহলিদেরও পয়েন্ট ৮। ৪টি ম্যাচ জেতার সুবাদে। তবে নেট রান রেটে রাজস্থান, লখনউ ও গুজরাতের চেয়ে একটু পিছিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। কোহলিদের নেট রান রেট -০.০০৮।


ছয় নম্বরে রয়েছেন স্যাম কারানরা। তাঁর দল পাঞ্জাব কিংস ৭ ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিতেছেন। হেরেছেন ৩টি ম্যাচে। কারানদের ঝুলিতেও ৮ পয়েন্ট। তবে রান রেটে সামান্য পিছিয়ে পাঞ্জাব। - ০.১৬২। 


৬ ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। পয়েন্ট টেবিলে সাত নম্বরে রোহিত শর্মারা। তাঁদের পয়েন্ট ৬। রোহিতদের নেট রান রেট - ০.২৫৪। কলকাতা নাইট রাইডার্স রয়েছে আট নম্বরে । ৭ ম্যাচে মাত্র ২টি জিতেছেন নীতীশ রানারা। ৪ পয়েন্ট রয়েছে কেকেআরের সাফল্যের ঝুলিতে। তালিকার শেষ দুটি দল হল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট) ও দিল্লি ক্যাপিটালস (৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট)।