কলকাতা: কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল আর অশ্বিনকে। দিল্লি ক্যাপিটালসের পরের ম্যাচ আগামীকাল, শুক্রবার। প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস। অশ্বিনের বদলি হিসাবে প্রথম একাদশে খেলার ব্যাপারে যাঁর দক্ষতায় লগ্নি করতে চাইছে দিল্লি টিম ম্যানেজমেন্ট, সেই অমিত মিশ্র ১৫৭ উইকেট-সহ আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় দ্বিতীয়। আর স্পিনারদের মধ্যে প্রথম। কারণ, সর্বোচ্চ উইকেটপ্রাপক পেসার লাসিথ মালিঙ্গা (১৭০)। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসাবে তিন-তিনটি হ্যাটট্রিক রয়েছে লেগস্পিনারের সাফল্যের ঝুলিতে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে দুবাই থেকে এবিপি আনন্দ-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন অমিত।

প্রশ্ন: আইপিএলের ইতিহাসে ১৫৭ উইকেট রয়েছে আপনার ঝুলিতে। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় দু’নম্বরে। রয়েছে তিনটি হ্যাটট্রিক। আপনি কি বিশ্বাস করেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুধুই ব্যাটসম্যানদের খেলা?

অমিত মিশ্র: দেখুন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সব সময়ই প্রচুর রান ওঠে। তবে সেই রানের পুঁজি অক্ষত রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দায়িত্ব বোলারদেরই। টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফর্ম্যাট যেখানে সময় কম, ওভার কম। একজন বোলারের হাতেও থাকে মাত্র চার ওভার। প্রথম ওভার থেকেই ছন্দে থাকার একটা চাপ থাকে। তাই কাজটা কঠিন হয়ে যায়।



প্রশ্ন: প্রথম মরসুম থেকে আইপিএলে খেলছেন। স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট আপনারই। এই সাফল্যের চাবিকাঠি কী?

অমিত: বোলার হিসাবে সব সময় চেষ্টা করে যেতে হয়। লেগে থাকতে হয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হয়। কারণ আধুনিক ক্রিকেট ক্রমাগত বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক মুহূর্তে কিছু না কিছু পরিবর্তন চলতেই থাকছে। ব্যাটসম্যানরা প্রত্যেক দিন অভিনব শট খেলছে। তাদের থামাতে গেলে বোলারদের বৈচিত্র আয়ত্ত করতেই হবে। আমি বরাবর সে দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। সেই পদ্ধতিই অবলম্বন করে যাব।



প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ক্রিকেটার প্রায় ৬ মাস মাঠের বাইরে কাটিয়েছেন। কেউ কেউ ছন্দ হারানোর আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। সেরকম কোনও সংশয় নিজের বোলিং নিয়ে কি কখনও তৈরি হয়েছিল?

অমিত: নিঃসন্দেহে ছন্দ পিরে পেতে সময় লাগে। তবে আমরা প্রায় একমাস হয়ে গেল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পৌঁছে গিয়েছি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কয়েকটা প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলেছি। সকলকেই নিজের ছন্দ ফিরে পেতে সাহায্য করেছে প্রস্তুতি শিবির ও ম্যাচগুলো। ম্যাচে খুব একটা সমস্যা হবে না বলেই আমার ধারণা।

প্রশ্ন: দিল্লির হয়ে আইপিএলে আপনার ৯৭টি উইকেট রয়েছে। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ১০০ উইকেট নেওয়ার হাতছানি নিশ্চয়ই খুব বড় একটা প্রেরণা...

অমিত: অবশ্যই এটা একটা বড় প্রেরণা। মরসুম শুরুর আগে এটা ভাবলেই খুব আত্মবিশ্বাসী লাগছে। সত্যি কথা বলতে কী, আমি রেকর্ড কিংবা মাইলফলকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না। এত বছর ধরে আমার দক্ষতায় আস্থা রাখায় আমি দিল্লি ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে কৃতজ্ঞ। দলের হয়ে অবদান রাখতে পেরেছি বলে আমি খুব খুশি।



প্রশ্ন: ৩৭ বছর বয়সে সাফল্যের জন্য এত ছটফটানি বড় একটা দেখা যায় না...

অমিত: প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা আলাদা আনন্দ আছে। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারার মধ্যে একটা অসাধারণ তৃপ্তি আছে। যে দলেই খেলি না কেন, এই জোড়া সন্তোষের কারণেই আমি একই উদ্যমে খেলে চলেছি।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন সাড়ে তিন বছর আগে। কখনও মনে হয়নি যে আপনার ক্রিকেটীয় দক্ষতা জাতীয় দলে ঠিকমতো কাজে লাগানো হল না?

অমিত: দেখুন, দেশের হয়ে হোক বা রাজ্যের হয়ে, যে দলেই খেলি না কেন, সব সময় নিজের সেরাটা দিয়েছি। নিজের ফিটনেসের ওপর জোর দিয়েছি। জাতীয় দলে কখনও আমাকে প্রয়োজন হলে আমি সব সময় তৈরি।



প্রশ্ন: আইপিএলের কথায় আসা যাক, কোন দল ফেভারিট?

অমিত: সত্যি বলতে কী, কোনও একটা দলকে বেছে নেওয়া কঠিন। কারণ বেশিরভাগ দলই এবার কিছু পরিবর্তন করেছে আর আগের চেয়েও তারা এখন অনেক বেশি ভারসাম্যযুক্ত। আর কোনও দলই এবার ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পাবে না। তাই সকলে এক জায়গায় থেকেই টুর্নামেন্ট শুরু করেছে।

প্রশ্ন: কোচ হিসাবে পেয়েছেন রিকি পন্টিংকে। যিনি ক্রিকেট কেরিয়ারে ছিলেন আগ্রাসী। পন্টিংয়ের প্রশিক্ষণে খেলার অভিজ্ঞতা কীরকম?

অমিত: রিকি কোচ হিসাবে খুব খোলামেলা। সকলের কথা মন দিয়ে শোনে। সিনিয়রদের পাশাপাশি নবাগতদেরও সমান গুরুত্ব দেয়। এতে দলগত সংহতি আরও মজবুত হয়েছে। দলে দারুণ প্রাণশক্তি আমদানি করেছে রিকি। সবসময় জেতার কথা বলে। ওর প্রশিক্ষণে দলের সকলে দারুণ ইতিবাচক থাকে।



প্রশ্ন: আইপিএলে কোনওদিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দিল্লি। তাতে কি প্রত্যাশার চাপ এবার আরও বেশি?

অমিত: আমার ধারণা গত বছরের আইপিএলে আমাদের পারফরম্যান্স দিল্লি ক্যাপিটালসকে নিয়ে সমর্থকদের অনেক বেশি আশাবাদী করে তুলেছে। আমরা জানি কখনও আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তবে আমরা একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগচ্ছি। আইপিএল লম্বা টুর্নামেন্ট। অনেক চড়াই-উতরাই থাকে। তাই শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন কে হবে, সেটা নিয়ে এখন থেকেই বেশি ভাবা ঠিক নয়।