কলকাতা: বৃহস্পতিবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং, আইপিএলে প্রীতি জিন্টার দলে এবার শাহরুখ খান!


তবে এই শাহরুখ সেই শাহরুখ নন। পঞ্জাব কিংসে মোটেও বীর-জারা জুটিকে দেখা যাবে না। বরং মাঠে এখনও কিংগ খান ও তাঁর ‘জারা’ একে অপরের প্রতিপক্ষ।


তাহলে বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের নিলাম থেকে যে শাহরুখ খানকে কিনে নিল পঞ্জাব কিংস! এই শাহরুখ ক্রিকেটার। পুরো নাম, এম শাহরুখ খান। তবে বাজিগরের সঙ্গে যোগও রয়েছে। বলিউডের বাদশার নামেই তাঁর নামকরণ যে।


শুক্রবার সেই কাহিনি নিজেই শোনালেন ক্রিকেটার শাহরুখ। বিজয় হাজারে ট্রফি খেলতে তিনি আপাতত ইনদওরে। শনিবার টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি তামিলনাড়ু ও পঞ্জাব। তার আগের দিন ইনদওর থেকে ফোনে তামিলনাড়ু দলের অন্যতম ভরসা শাহরুখ বললেন, ‘আমার মাসি শাহরুখ খানের অন্ধ ভক্ত। মাসির কথাতেই আমার নাম শাহরুখ খান রাখা হয়েছিল। আমি নিজেও শাহরুখের বড় ফ্যান। ওঁর সব সিনেমা ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখার চেষ্টা করি।’


শাহরুখ-প্রীতির বন্ধুত্ব বলিউডের অন্যতম চর্চিত বিষয়। দুজনে মিলে দিয়েছেন একাধিক হিট ফিল্ম। সবচেয়ে সফল বীর-জারা। আইপিএলে দুই বন্ধু দুই ক্রিকেট দলের মালিক। তাই কলকাতা-পঞ্জাব ম্যাচ বরাবরই বীর-জারার লড়াইয়ের তকমা পেয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার শাহরুখ খানকে কেনার পর থেকে বলাবলি হচ্ছে, এবার জারার দলে বীর! এমনকী, পঞ্জাব কিংস তাদের অফিশিয়াল ট্যুইটার অ্যাকাউন্টেও কিংগ খানের হাত প্রসারিত করার বিখ্যাত পোজ পোস্ট করে লিখেছে, শাহরুখ এবার আমাদের!


কেমন লাগছে এই তুলনা? ক্রিকেটের শাহরুখ বলছেন, ‘শাহরুখ খানের সঙ্গে আমার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বলে খুব গর্ব হচ্ছে। তবে আমি একজন ক্রিকেটার। মাঠে নেমে আমার কিছু দায়িত্ব থাকে। সেটা মন দিয়ে করতে চাই। ক্রিকেট মাঠে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে চাই। অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে চাই না। প্রীতি জিন্টার দলে খেলব ভেবে উচ্ছ্বসিত। পাশাপাশি বাস্তবের মাটিতে পা রাখছি। প্রীতি ম্যাম আমাকে দলে নিয়েছেন। পঞ্জাব কিংসকে জিতিয়ে তার মান রাখতে হবে।’


বাবার ছোটখাট ব্যবসা। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণে সব সময় পাশে থেকেছেন শাহরুখের মা। ক্রিকেট শুরু কীভাবে? ‘চেন্নাইয়ের তিরপকে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের নীচে টেনিস বলে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা তৈরি হওয়া। তারপর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়া। তারপর তামিলনাড়ুর অনূর্ধ্ব ১৩ দলে সুযোগ পাই। তখনই আমার প্রথম মনে হয়, ক্রিকেটকেই তো পেশা করতে পারি,’ বলছিলেন শাহরুখ। যোগ করলেন, ‘বাড়ির খুব সাহায্য পেয়েছি। মা অনেক সাহায্য করেছেন। পাশে থেকেছেন। ওরা এখন খুব খুশি।’


নামের পাশাপাশি শাহরুখকে নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে কারণ, নিলামে তাঁর ন্যূনতম মূল্য ছিল ২০ লক্ষ টাকা। সেখান থেকে বিক্রি হয়েছেন ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায়! কারণও রয়েছে। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে তামিলনাড়ুকে চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্যে ছিল শাহরুখের ঝোড়ো ব্যাটিং। সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টিতে ইডেনে বিশাল বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন। সঙ্গে অফস্পিন বলও করেন। ভেবেছিলেন এত দাম পাবেন? শাহরুখ বলছেন, ‘না ভাবিনি। এই দিনটির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। গতবারও আইপিএলের নিলামে নাম নথিবদ্ধ করিয়েছিলাম। তবে দল পাইনি। এবার পেলাম। আশা করছি এবার সুযোগের মর্যাদা দিতে পারব। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছি। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।’


নিলামে বিক্রি হওয়ার পর থেকে শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসছেন। শাহরুখ বলছেন, ‘প্রচুর মেসেজ পেয়েছি। তামিলনাড়ু দলের সকলেও খুব খুশি। দীনেশ কার্তিক খুব উৎসাহ দেয়। সাহায্য করে। তামিলনাড়ু দলের সতীর্থরা সকলে উচ্ছ্বসিত।’ যোগ করছেন, ‘যেটা সবচেয়ে ভাল পারি, সেটাই আইপিএলে করতে চাই। আর সেটা হল ক্রিজে গিয়ে ঝোড়ো ব্যাটিং করা। দলকে ম্যাচ জেতানো। ম্যাচ ফিনিশ করে আসা। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে নামি। দলকে ম্যাচ জেতানোই লক্ষ্য। তিনটে না চারটে, কটা ছক্কা মারলাম সেটা বড় কথা নয়। ফিনিশারের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। পাওয়ার হিটিং গুরুত্বপূর্ণ। আমি লম্বা। শারীরিকভাবে শক্তপোক্ত। সেই শক্তি মাঠে কাজে লাগাতে চাই। ব্যাট হাতে বড় ছক্কা মারতে চাই।’


পঞ্জাব কিংসে কিংবদন্তি অনিল কুম্বলের প্রশিক্ষণে খেলার সুযোগ। শাহরুখ বলছেন, ‘অনিল কুম্বলে স্যার দারুণ ভদ্রলোক। পঞ্জাব কিংসের ট্রায়ালে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কিংবদন্তি। ওঁর প্রশিক্ষণে খেলতে মুখিয়ে রয়েছি।’


আপাতত বাইশ গজের বাজিগর হয়ে ওঠার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাহরুখ খান।