কলকাতা: রাজস্থান রয়্যালসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আইপিএলের (IPL) ফাইনালে পৌঁছে গেল গুজরাত টাইটান্স (GT)। সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জোর অনুশীলন বিরাট কোহলির। আইপিএলের সারাদিনের সব খবর এক ঝলকে।


কিলার মিলার


ট্রেন্ট বোল্টের (Trent Boult) প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে যখন স্যুইংয়ে পরাস্ত হয়ে শূন্য রানে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha), গোটা গ্যালারিতে যেন শোকের ছায়া। ঘরের মাঠে জবাব দেওয়ার মঞ্চে জ্বলে উঠবেন বঙ্গ তারকা, অনেকেই সেটা মনে করেছিলেন। পারলেন না ঋদ্ধিমান।


রাজস্থান রয়্যালসের (Rajasthan Royals) ১৮৮/৬ তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে গুজরাত টাইটান্সের (Gujarat Titans) দরকার ছিল ১৬ রান। বল ছিল প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর হাতে। যিনি তার আগে পর্যন্ত ৩ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচ করেছিলেন। গুজরাত শিবিরে সকলের চোখেমুখে উৎকণ্ঠা।


পরের তিন বলে তিনটি ছক্কা মেরে ম্যাচের রং পাল্টে দিলেন ডেভিড মিলার। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের জন্য ক্রিকেটবিশ্ব যাঁকে চেনে কিলার মিলার নামে। তিন বল বাকি থাকতে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে ফেলল গুজরাত। ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে হার্দিক পাণ্ড্যরা পৌঁছে গেলেন আইপিএল ফাইনালে। ঘরের মাঠে ট্রফি জয়ের সুযোগ হার্দিকদের সামনে। কারণ, ২৯ মে আইপিএলের ফাইনাল আমদাবাদের নবনির্মিত মোতেরা স্টেডিয়ামে।


মিলার ৩৮ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত রইলেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৫টি ছক্কা। ইডেনে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের স্মৃতি ফেরালেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেনে বেন স্টোকসকে শেষ ওভারে পরপর চারটি ছক্কা মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ব্র্যাথওয়েট। শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মেরে গুজরাতকে ফাইনালে তুললেন মিলার। যিনি গত আইপিএলেও খেলেছেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। হার্দিক ২৭ বলে ৪০ রানে অপরাজিত রইলেন। অবিচ্ছেদ্য চতুর্থ উইকেটে ৬১ বলে ১০৬ রান যোগ করলেন মিলার ও হার্দিক।


ঋদ্ধির সমর্থক


ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) ক্লাব হাউস লাগোয়া সি ব্লকের তিন নম্বর বক্স। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলেন। পরনে সাদা জিনস, কালো টি শার্ট। পাশে বসে মেয়ে। রাজস্থান রয়্যালসের একটি করে উইকেট পড়ছে, আর দুজনে মিলে গলা ফাটাচ্ছেন। প্রার্থনা করছেন গুজরাত টাইটান্সের (GT) জয়ের।


দেবারতি সাহা। গুজরাত টাইটান্সের তারকা ঋদ্ধিমান সাহার স্ত্রী। মেয়ে আনভিকে নিয়ে মঙ্গলবার ইডেনে এসেছিলেন আইপিএল (IPL) প্লে অফ দেখতে। কর্পোরেট বক্স থেকেই গলা ফাটালেন গুজরাতের সমর্থনে।


এবিপি লাইভকে দেবারতি বলছিলেন, 'এই প্রথম ক্রিকেটারদের পরিবারের জন্য নির্ধারিত বক্স ছাড়া অন্যত্র বসে খেলা দেখছি। আসলে আমি বায়ো বাবলে নেই। তাই দলের অন্যান্য ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারছি না।'


ছেলের বয়স মাত্র ২ বছর। একরত্তিকে আর মাঠে আনার ঝক্কি নেননি দেবারতি। তবে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। বলছিলেন, 'গতকালই মিয়ার (মেয়ের ডাকনাম) জন্মদিন গেল। বাড়িতে ছোটখাট অনুষ্ঠান হয়েছে। শহরে থেকেও বায়ো বাবল ছেড়ে বেরতে পারবে না বলে ঋদ্ধি বাড়িতে আসতে পারেনি। ভিডিও কলে কথা বলেছে।'


কোহলির সাধনা


গোটা শহর তখন ইডেনমুখো (Eden Gardens)। ক্রিকেটের নন্দনকাননে আইপিএলের (IPL) প্রথম কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি গুজরাত টাইটান্স ও রাজস্থান রয়্যালস (GT vs RR)। ম্যাচ দেখতে দুপুর থেকেই ট্রেনে-বাসে ভিড়।


তিনি তখন ভিড়ভাট্টা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে। সল্ট লেকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে নীরব সাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন।


তিনি বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। অধরা আইপিএল ট্রফি জয়ের লক্ষ্যে যিনি প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখছেন না। মঙ্গলবার বিকেলে সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে নিজেকে নিংড়ে দিলেন।


করোনাকালে এখন যে কোনও টুর্নামেন্টের মতোই আইপিএলেও হচ্ছে জৈব সুরক্ষা বলয়ে। ক্রিকেটারদের ধারেকাছেও কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠও বলয়ের মধ্যেই রয়েছে। সেখানে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, লখনউ সুপার জায়ান্টসের টিমবাস ঢোকা ও বেরনোর সময়টুকু ছাড়া গেট বন্ধ। তবু শহরে বিরাট, আর ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা থাকবে না, তা আবার হয় নাকি!


বিরাটকে এক ঝলক দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে শুরু করে কোহলির সমর্থকদের একাংশও। সল্ট লেক ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের ফাঁক গলে দেখা গেল, নেটে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন কোহলি। পুল-কাট-ড্রাইভ, কিছুই বাদ গেল না তাঁর ব্যাটিং অনুশীলন থেকে। স্পিনারদের বলে স্টেপ আউট করে ছক্কাও মারলেন। যা জেনে উচ্ছ্বসিত হতে পারেন কোহলি ভক্তরা। আরসিবি-র শেষ ম্যাচে ৭৩ রান করে ফর্মে ফিরেছেন। নেটে যে ছন্দে ব্যাট করলেন, ম্যাচে তার অর্ধেক করতে পারলেও প্রতিপক্ষ শিবিরের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন।


আরও পড়ুন: কবে থেকে শুরু কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ? এক নজরে বিশ্বকাপের সূচিপত্র