সন্দীপ সরকার, কলকাতা: এ যেন সেই আইপিএলের (IPL) শুরুর দিকের ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens)।
যেখানে বল ঘুরবে। লাফাবে। থমকে আসবে। স্পিনাররা দেখে ঠোঁট চাটবেন।
যে পিচে সুনীল নারাইন আতঙ্ক-সম। একটা সময় ঘরের মাঠে ম্যাচ মানে কলকাতা নাইট রাইডার্সের নকশাই ছিল, প্রথমে ব্যাট করো। স্কোরবোর্ডে দেড়শো রান তোলো। আর তারপর এগিয়ে দাও দলের স্পিনারদের। কখনও সুনীল নারাইন। কখনও অজন্তা মেন্ডিস। সচিত্র সেনানায়েকে। জয়ের অব্যর্থ মন্ত্র।
তবে ২০১৫ সালে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ান ডে ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার পর মাঠের আমূল সংস্কার হয়। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্রিকেট প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তারপরই বদলে যায় ইডেনের পিচ।
যে মাঠে এক সময় স্পিনারদের বল ছোবল মারত, সেখানে এখন পেসারদের রমরমা। বল পড়ে সাঁ সাঁ যায়। গতির সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বাউন্সের দোসরও।
যদিও বৃহস্পতিবারের কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ যে বাইশ গজে খেলা হল, তাতে সেই পুরনো ইডেনের ঝলক। বল ফের ঘুরছে। লাফাচ্ছে। থমকে আসছে। আর সেই পিচে প্রথমে ব্যাট করার মতো আশীর্বাদও পেয়ে গেল কেকেআর। রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। হয়তো রাতের শিশিরের কথা ভেবে।
কেকেআরও টস জিতলে নির্ঘাৎ ব্যাটিংই নিত শুরুতে। ফিরে যেত পুরনো ফর্মুলায়। সাধে কি আর নীতীশ রানা টসের পর বলে ফেললেন, 'এরকম উইকেটেই ম্যাচ খেলতে চাই আমরা।'
শুরুতেই দুই ওপেনার ফিরলেন। তবে রুখে দাঁড়ালেন বেঙ্কটেশ আইয়ার ও নীতীশ। তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রান যোগ করলেন দুজনে।বেঙ্কটেশ আইয়ার প্রথম ১২ বলে করেছিলেন মাত্র ২ রান। যা দেখে গ্যালারি থেকে শুরু করে প্রেসবক্স, সর্বত্র বলাবলি শুরু হয়ে গেল, বেঙ্কটেশ আদৌ ফিট তো?
সেই বেঙ্কটেশই এরপর নিজমূর্তি ধরলেন। পরের ৩০ বলে করলেন ৫৫ রান। মাত্র ৩৯ বলে হাফসেঞ্চুরি। ইডেনের যে পিচে বল পড়ে থমকে ব্যাটে আসছে, স্ট্রোক খেলা কঠিন বলে মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও, সেখানে কেকেআরের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে রইলেন বেঙ্কটেশ। চলতি টুর্নামেন্টে যাঁর একটি সেঞ্চুরি রয়েছে।
৪২ বলে ৫৭ রানের ইনিংসে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা মারলেন বেঙ্কটেশ। তাঁর জন্যই শুরুর ব্যর্থতা ভুলে ভদ্রস্থ রান তুলতে পারল কেকেআর। ১৭ বলে ২২ রান করলেন নীতীশ। কেকেআর তুলল ১৪৯/৮। ম্যাচ জিততে ১৫০ করতে হবে রাজস্থানকে।
রাজস্থান বোলারদের মধ্যে সেরা যুজবেন্দ্র চাহাল। বৃহস্পতিবার আইপিএলে ইতিহাস গড়লেন হরিয়ানার লেগস্পিনার। নীতীশ রানাকে ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে আইপিএলে ১৮৪ শিকার হয়ে গেল চাহালের। পরে আরও তিনটি উইকেট নিলেন। সব মিলিয়ে ১৮৭ উইকেট হয়ে গেল চাহালের। ভেঙে দিলেন ডোয়েন ব্র্যাভোর রেকর্ড। চাহালই এখন আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
পরীক্ষা এবার কেকেআর স্পিনারদের। নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী, সুয়াশ শর্মার সঙ্গে অনুকূল রায়কেও খেলাচ্ছে কেকেআর। চার স্পিনারে বাজিমাত সম্ভব?