চেন্নাই: ১২ বছর আগে মে মাসের এক রাত। কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) আর আইপিএল (IPL 2024) ট্রফির মাঝে দাঁড়িয়েছিল প্রবল পরাক্রমী চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের (MS Dhoni) বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৭ মে-র সেই ফাইনালে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছিলেন কেকেআরের উইকেটকিপার মনবিন্দর সিংহ বিসলা। চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে তাঁর ৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের সুবাদে ধোনিদের ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেকেআর।
১২ বছর পর ২৬ মে সেই চিপক স্টেডিয়ামেই ফের একবার আইপিএল ফাইনাল (IPL Final) খেলতে নামছে কেকেআর। আর সেই ফাইনালেও কাকতালীয়ভাবে কেকেআরের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন এক উইকেটকিপারই। রহমানউল্লাহ গুরবাজ়। যিনি কোয়ালিফায়ার ওয়ানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ব্যাটিং ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন। রবিবার ফাইনালে গুরবাজ কি ১২ বছর আগের বিসলা হয়ে উঠতে পারবেন?
মা আফগানিস্তানের এক হাসপাতালে ভর্তি। অসুস্থ মায়ের পাশে থাকতে আইপিএলের মাঝেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন গুরবাজ়। আইপিএলে তখন কেকেআরের জার্সিতে ইনিংস ওপেন করতে নেমে প্রতিপক্ষ বোলারদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন ফিল সল্ট। সুনীল নারাইনের সঙ্গে যিনি শুরুতেই বিপক্ষকে কোণঠাসা করে ফেলছিলেন নিয়ম করে। তবে আইপিএলের অন্তিম পর্বে সল্টকে পাচ্ছে না কেকেআর। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে যোগ দিতে হয়েছে সল্টকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি সিরিজ খেলবে ইংল্যান্ড। যে সিরিজে ইংল্যান্ডের অন্যতম ভরসা সল্ট।
বাধ্য হয়েই শাহরুখ খান-জুহি চাওলার দলকে বিকল্প ওপেনিং জুটি তৈরি করতে হয়েছে। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে চলতি আইপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলেছেন গুরবাজ়। তিনিই নারাইনের সঙ্গে নাইটদের ইনিংস ওপেন করেছিলেন। সেই ম্যাচে রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২০ বলে ৪৪ যোগ করে প্রতিপক্ষ শিবিরকে চাপে ফেলে দিয়েছিল গুরবাজ়-নারাইন জুটিই।
আর সেই ম্যাচ জিতে ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করার পরই গুরবাজ় জানিয়েছিলেন, তাঁর মা হাসপাতালে শয্যাশায়ী। গুরুতর অসুস্থ। মায়ের পাশে থাকতেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। সল্টকে দেশে ফিরে যেতে না হলে হয়তো এবারের আইপিএলে আর খেলতেই হতো না বছর বাইশের তারকাকে। তবে কেকেআরের ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি। ভারতে ফিরে নাইটদের ওপেনিংয়ের হাল ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন কেকেআর ক্রিকেটারেরা। নাইট শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্র্যাক্টিসে বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করেছেন গুরবাজ়। বেশিরভাগ বলই উড়িয়েছেন গ্যালারিতে। আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছক্কা মেরেছেন। যা দেখে নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট উৎফুল্ল। রবিবার ফাইনালেও গুরবাজের ব্যাট চলতে শুরু করলে বিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, অ্যাডভ্যান্টেজ কেকেআর।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরিও রয়েছে আফগান তরুণের। সঙ্গে সাতটি হাফসেঞ্চুরি। আইপিএলেও ঈর্ষণীয় রেকর্ড। ১২ ম্যাচে জোড়া হাফসেঞ্চুরি রয়েছে গুরবাজের। স্ট্রাইক রেটও ১৪০ ছুঁই ছুঁই।
দলের প্রতি দায়বদ্ধতার নজির গড়েছেন গুরবাজ়। মায়ের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলছেন। আর মাঠে নিংড়ে দিচ্ছেন নিজেকে। আফগানিস্তানের হাসপাতালে শয্যাশায়ী তাঁর অসুস্থ মা-ও হয়তো প্রার্থনা করছেন, ফাইনালে রোশনাই ছড়াক ছেলের ব্যাট। ১২ বছর পর চিপকে ফের এক উইকেটকিপারের হাত ধরেই মায়াবী রাত ফিরুক গৌতম গম্ভীর-শ্রেয়স আইয়ারদের শিবিরে।
আরও পড়ুন: সুনীলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা ভারতের, কারা সুযোগ পেলেন?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।