কলকাতা: ‘হার্টের রোগ হলে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষকে যে সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হয়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে। তিনি পছন্দের বিরিয়ানি খেতে পারবেন না। পোস্তর বড়া খেতে পছন্দ করেন সৌরভ। কিন্তু সেটাও আপাতত বন্ধ। কারণ, ডিপ ফ্রায়েড কিছু খেতে বারণ করেছেন চিকিৎসকরা। মাটনও আপাতত বন্ধ। তবে সৌরভকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কতদিন ঘরে আটকে রাখা যাবে, সেটা বড় প্রশ্ন। কারণ, আর পাঁচজন বাঙালির মতো সৌরভও আড্ডাপ্রিয়। তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। সকালে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যেমন চা খেতে ভালবাসেন, তেমনই সন্ধেবেলা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। সচিন তেন্ডুলকরকে যেমন গলফ খেলতে বা শৈলশহরে ছুটি কাটাতে দেখা যায়, সৌরভ কোনওদিনই তেমন জীবনযাপন করতে পারবেন না। তিনি আর পাঁচজন বাঙালির মতোই আড্ডা দেওয়া, বেশি কাজ করা, চ্যালেঞ্জিং কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পছন্দ করেন। তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চান। অধিকাংশ ক্রিকেটারেরই খেলা ছাড়ার পর পছন্দের পেশা হল ধারাভাষ্য। কিন্তু সৌরভ একাধিকবার জানিয়েছেন, তাঁর ধারাভাষ্য দিতে ভাল লাগে না। কারণ, এর মধ্যে চ্যালেঞ্জিং কিছু নেই। সেই কারণেই দাদাগিরির অ্যাঙ্করিং বেছে নেন সৌরভ। সেখানে তিনি একটিও ইংরাজি শব্দ ব্যবহার করেন না। অমিতাভ বচ্চনের কউন বনেগা ক্রোড়পতি দেখে এটা শিখেছেন সৌরভ। পুরোপুরি বাংলা বলে তিনি জেলার বাঙালিদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতে চেয়েছেন। তিনি দ্রুত শেখেন। বড় সেলিব্রিটিরা সাধারণত নিজেদের বদল করতে চান না। তাঁদের মনে হয়, যেটা করছেন সেটাই ঠিক। কিন্তু সৌরভ নিজেকে প্রয়োজনে বদলে নেন। এই কারণেই তিনি এত সফল।
‘বাড়ির লোকজন বিশ্রাম নিতে বললেও, তাঁকে হয়তো দ্রুত কাজে ফিরতে দেখা যাবে। কারণ, এটাই তাঁর স্বভাব। ৩২টা ব্র্যান্ডের এন্ডোর্সমেন্ট করে তিনি বছরে ৯০ কোটি টাকা আয় করেন। প্রতিটি ব্র্যান্ডের জন্য বছরে তিন-চারদিন করে সময় দিতে হয়। এতেই লেগে যায় ১৩০ দিন। এছাড়া দাদাগিরির শ্যুটিং আছে, বিসিসিআই-এর সভাপতি হিসেবে কাজ আছে, নিজের ব্যবসাও আছে। সব দায়িত্বই ভালভাবে পালন করতে চান সৌরভ।’
এই প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। ২০১১ সালে লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন মধ্যাহ্নভোজের সৌরভ আমাকে বলেন, ‘তুই দ্রুত আমাকে একটা কলাম লিখে দিতে পারবি? সেই সময় তিনি স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের জন্য কলাম লিখতেন। আমি বললাম, তুমি আমাকে আইডিয়াটা বলে দাও, আমি লিখে দেব। আমার মনে হয়েছিল, তিনি প্রচণ্ড ব্যস্ত। তাই আমাকে লিখে দিতে বলছেন। কিন্তু তিনি বললেন, আমি বলে যাব, তুই ল্যাপটপে টাইপ কর। তার মানে তিনি নিজের কাজ নিজেই করেন। তাঁর এই প্রবণতা আছে। তিনি নিজের কলামের প্রতিটি লাইন লেখেন। তিনি কোনও টিভি চ্যানেলের হয়ে কাজ করলে সপ্তাহের শেষে জানতে চান, টিআরপি ঠিক আছে তো? কাজের প্রতি নিষ্ঠার জন্যই তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পক্ষে গুটিয়ে থাকা মুশকিল। সেই কারণেই বাড়ির লোকজন চিন্তায়। সবাই চাইছেন, সৌরভ বিশ্রাম নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে তারপর কাজে ফিরুন। কিন্তু আর পাঁচজন প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতো জীবনযাত্রা সৌরভের নয়। সেই কারণেই অনেকে তাঁকে রাজনীতিতে চাইছে। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সৌরভই। বিজেপি চাইবে সৌরভ রাজনীতিতে আসুন, আবার তৃণমূল চাইবে না তিনি আসুন। এই নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকবে। তবে আগামী কয়েকদিন সৌরভ কেমন থাকেন, সেটাও দেখতে হবে। তিনি কত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, সেটাই এখন দেখার। রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁকে ঘরে আটকে রাখা মুশকিল। কারণ, তিনি সবসময় নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন।’
সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন, আড্ডা পছন্দ করেন, সৌরভকে ঘরে আটকে রাখা মুশকিল
Kuntal Chakraborty
Updated at:
07 Jan 2021 08:44 PM (IST)
Sourav Ganguly may join work very soon because he loves to be involved in the jobs. | হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। চিকিৎসকরা আপাতত তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই নিয়ম মেনে চলবেন তিনি? সৌরভকে দীর্ঘদিন কাছ থেকে দেখছেন এবিপি আনন্দের ক্রীড়া সাংবাদিক কুন্তল চক্রবর্তী। তিনি সৌরভ সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।
NEXT
PREV
খেলা (sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -