কলকাতা: মঙ্গলবার রাত থেকে আলোচনাটা শুরু হয়ে গিয়েছে যুবরাজ সিংহের একটা ট্যুইটের পর। বিশ্বের প্রথম পেসার হিসাবে টেস্টে ছশো উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা জেমস অ্যান্ডারসনকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্যুইট করেছিলেন ভারতের তারকা ফাস্টবোলার যশপ্রীত বুমরাহ। সেই ট্যুইটারের প্রত্যুত্তরে যুবি লেখেন, ‘তোমার টার্গেট ৪০০!! অন্ততপক্ষে।’


যুবরাজের ট্যুইট দেখে দেশের ক্রিকেটমহলে জোর আলোচনা শুরু হয়ে যায়, বর্তমান ভারতীয় দলের পেসারদের পক্ষে অ্যান্ডারসনের কীর্তি স্পর্শ করা কি আদৌ সম্ভব? যুবি নিজে কেনই বা বুমরাহ-র সামনে চারশো উইকেটের লক্ষ্যমাত্রা রাখলেন! তাহলে কি ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারও মেনে নিচ্ছেন যে, আর যাই হোক, টেস্টে ছশো উইকেটের ক্লাবে পৌঁছতে পারবেন না ভারতের এখনকার জোরে বোলাররা!



ভারতের প্রাক্তন পেসাররা অবশ্য একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন যে, টেস্টে ৬০০ উইকেট নেওয়া জাতীয় দলের এখনকার পেসারদের পক্ষে ভীষণ কঠিন। জাভাগাল শ্রীনাথ যেমন। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৫১ উইকেট রয়েছেন প্রাক্তন ডানহাতি পেসারের। ১১ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ৬৭ ম্যাচে নিয়েছেন ২৩৬ উইকেট। আপাতত আইসিসি-র ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শ্রীনাথ। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বলছিলেন, ‘অ্যান্ডারসনের রেকর্ড অভাবনীয়। ওকে অভিনন্দন জানাই। বর্তমান ভারতীয় দলের পেস বোলিং বিভাগ খুব ভাল। যশপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, প্রত্যেকেই একে অপরের চেয়ে আলাদা। সব মিলিয়ে খুব বৈচিত্রময় পেস বোলিং বিভাগ। তবে ছশো উইকেট নেওয়া ভীষণ কঠিন কাজ।’



একসময় শ্রীনাথের সঙ্গেই ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ সামলেছেন বেঙ্কটেশ প্রসাদ। বুমরাহ-শামিদের অ্যান্ডারসনের কীর্তি স্পর্শ করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রাক্তন বোলিং পার্টনারের সুরেই প্রসাদ ফোনে বললেন, ‘১৫৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে অ্যান্ডারসন। দারুণ কৃতিত্ব। ভারতের এখনকার পেসারদের পক্ষে দেড়শো টেস্ট খেলে ফেলা সহজ হবে না।’



অ্যান্ডারসনের ছশোর মাইলফলকে পৌঁছনোর নেপথ্যে প্রধাণ কারণ ফিটনেস, মনে করেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার কারসন ঘাউড়ি। বলছিলেন, ‘৩৮ বছর বয়স অ্যান্ডারসনের। ১৭ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। এখনও ফর্মের তুঙ্গে। বুমরাহ-শামিরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। জিমির কীর্তি ওদের কারও পক্ষে স্পর্শ করা কঠিনই হবে।’



পরিসংখ্যানও প্রাক্তন তারকাদের মতকে সমর্থন করছে। দেখা যাচ্ছে, ১৫৬ টেস্টে ৬০০ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডারসন। তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালে। লর্ডসে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে। তারপর ১৭ বছর টানা টেস্ট খেলে চলেছেন সদ্য ৩৮ পেরনো ব্রিটিশ তারকা। ভারতের বর্তমান দলের পেসারদের মধ্যে ৩২ ছুঁই ছুঁই ইশান্ত শর্মা ১৩ বছরের কেরিয়ারে খেলেছেন ৯১টি টেস্ট। উইকেট সংখ্যা ২৯৭। অ্যান্ডারসনের চেয়ে ৩০৩ উইকেট পিছিয়ে! শামির বয়স প্রায় ৩০ বছর। সাত বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন। ৪৯ টেস্টে নিয়েছেন ১৮০ উইকেট। অ্যান্ডারসনের চেয়ে ৪২০ উইকেট কম! ৩২ পেরিয়ে যাওয়া উমেশ ৯ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ৪৬ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪৪ উইকেট। ৩০ বছর পেরিয়ে যাওয়া ভুবনেশ্বর কুমারের ২১ টেস্টে উইকেট সংখ্যা মাত্র ৬৩! বাকিদের চেয়ে বয়স অনেকটাই কম বুমরাহর। ২৬ পেরিয়েছেন আমদাবাদের ডানহাতি ফাস্টবোলার। তাঁকেই এখন ভারতের সেরা পেস-অস্ত্র মনে করা হয়। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরাও তাঁর গতি, স্যুইং আর বিষাক্ত ইয়র্কার নিয়ে সন্ত্রস্ত থাকেন। যদিও বুমরাহ ১৪ টেস্টে ৬৮ উইকেট নিয়েছেন। আরও ১০-১২ বছর টেস্ট খেললেও তাঁর পক্ষে আরও ৫৩২ উইকেট নেওয়া ভীষণ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন প্রাক্তন তারকারা।



দেশের হয়ে ৩৯ টেস্টে ১০৯ উইকেট নেওয়া ঘাউড়ি বলছেন, ‘পেসারদের শারীরিক ধকল অনেক বেশি হয়। তাই চোট আঘাতের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। শ্রীনাথ থেকে শুরু করে জাহির খান, চোট আঘাত সকলকেই ভুগিয়েছে। অ্যান্ডারসনের নজির তাই সত্যিই অনবদ্য।’ আর ৩৩ টেস্টে ৯৬ উইকেট নেওয়া প্রসাদ বলছেন, ‘পেসারদের ফর্মের তুঙ্গে থেকে শুধু প্রচুর উইকেট নিলেই হয় না, ফিটনেসে জোর দিতে হয়। কাঁধে, পিঠের পেশিতে, কোমর বা হাঁটুতে প্রবল চাপ পড়ে। সব ধকল সামলে অ্যান্ডারসনের ছশো উইকেট ক্লাবে ঢুকে পড়া সত্যিই বিস্ময়কর।’