চেন্নাই: চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL 2023) প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট (Mohun Bagan Supergiants), শনিবার রাতে ম্যাচটি চলাকালীন এ কথা বলে না দিলে বোঝার কোনও উপায়ই ছিল না। যে আত্মবিশ্বাস ও আধিপত্য নিয়ে চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এ দিন রাজত্ব করে মোহনবাগান এসজি, তাতে একবারও মনে হয়নি এটি তাদের প্রতিপক্ষ চেন্নাইনের ঘরের মাঠ। 


শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপুটে ফুটবল খেলে এ দিন দু’বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইন এফসি-কে ৩-১-এ হারাল গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এসজি। চলতি লিগে টানা তৃতীয় জয় পেল তারা। এ দিন ২২ মিনিটের মাথায় দিমিত্রিয়স পেট্রাটস প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধের বাড়তি সময়ের তৃতীয় মিনিটে ব্যবধান বাড়ান জেসন কামিংস। দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক থেকে গোল করে ব্যবধান কমান রাফায়েল ক্রিভেলারো। কিন্তু পরবর্তী মিনিটেই গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন মনবীর সিং। 


দলের এই তিন গোলেই অ্যাসিস্ট করেন সহাল। এ দিন নিজের সেরা ফর্মে ছিলেন কেরালা থেকে আসা এই তারকা মিডফিল্ডার। টানা ৯০ মিনিট ধরে অসাধারণ খেলেন তিনি। প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় তিনি রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টি করেন। তিন গোলদাতাকে কার্যত গোল সাজিয়ে দেন তিনি। 


টানা তৃতীয় জয়ের ফলে ন’পয়েন্ট নিয়ে লিগতালিকার শীর্ষেই রয়ে গেল মোহনবাগান এসজি। কিন্তু টানা তৃতীয় চেন্নাইন এফসি লিগ তালিকার সর্বশেষ স্থানে নেমে গেল। তিন ম্যাচে এই নিয়ে আট গোল খেল তারা। এই দিনই প্রথম লিগে গোলের খাতা খুললেও তাদের গোল-পার্থক্য সবচেয়ে খারাপ (-৭)। 


লিগের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেও এ দিন তিন ব্যাকেই খেলা শুরু করে মোহনবাগান এসজি। ৩-৪-১-২ ছকে সামনে কামিংস ও পেট্রাটস এবং পিছনে শুভাশিস, হ্যামিল ও আনোয়ারকে দিয়ে শুরু করান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। মাঝমাঠে নেতৃত্বে ছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা। বুমৌস একটু এগিয়ে ছিলেন। দুই উইংয়ে কোলাসো ও মনবীর এবং মাঝখানে থাপার সঙ্গে সহাল। অন্য দিকে, রহিম আলিকে একেবারে সামনে রেখে যে দল সাজায় চেন্নাইন, তাতে রক্ষণে চার প্রহরী ছিলেন।  


শুরু থেকেই এ দিন আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে কলকাতার দল। তবে প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও শট গোলের লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। তাদের রক্ষণে তিন ফুটবলার থাকায় চেন্নাইনের দুই উইঙ্গার নিমথোই মিতেই ও ফারুখ চৌধুরি সামনে অনেকটা জায়গা ফাঁকা পেয়ে যান এবং একাধিকবার দুই দিক দিয়ে হানা দেওয়ার চেষ্টা করেন। মাঝমাঠ থেকে তাদের সাহায্যের জন্য বারবার উঠে আসেন ক্রিশ্চিয়ান বাত্তোচিও ও কোনর শিল্ডস। কিন্তু প্রতিবারই তাদের আটকে দেন আনোয়ার, হ্যামিলরা। 


অন্য দিকে, চেন্নাইনের গোল এরিয়ায় বুমৌস, পেট্রাটস ও কামিংসের ত্রয়ী এ দিন বরাবরের মতোই বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন। দু’দিক দিয়ে কোলাসো ও মনবীর এবং পিছন থেকে সহালও বারবার হানা দিচ্ছিলেন বিপক্ষের বক্সে। বেশ কয়েকবার সুযোগ হাতছাড়া করার পর ২২ মিনিটের মাথায় ছবির মতো সাজানো গোলে দলকে এগিয়ে দেন পেট্রাটস। তবে গোলটির বেশিরভাগ কৃতিত্বই সহালের। বক্সের ডান দিক থেকে তিনি যে মাঝারি উচ্চতার মাপা ক্রসটি করেন পেট্রাটসের উদ্দেশ্যে, তাতেই মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন অস্ট্রেলীয় তারকা (১-০)। 


অ্যাটাকিং থার্ডে এ দিন অসাধারণ খেলেন সহাল। প্রথমার্ধে একবার তিনি গোলের প্রায় সামনে থেকে বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন এবং আর একবার তাঁর গোলমুখী শট গোলকিপার শমীক মিত্রর গায়ে লেগে গোলে ঢোকার ঠিক আগে তা ক্লিয়ার করেন আকাশ সাঙ্গওয়ান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ফের তিনি বক্সের ডানদিক থেকে মাটি ঘেঁষা ক্রস দেন বক্সের মাঝখানে থাকা পেট্রাটসকে। কিন্তু এ বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তিনি। সহালকে সামলাতে এ দিন হিমশিম খেয়ে যান চেন্নাইনের ডিফেন্ডাররা। ২০২১-এর জানুয়ারির (কেরালা ব্লাস্টার্স) পর এ দিনই প্রথম টানা ৯০ মিনিট খেলেন সহাল এবং পুরো সময়েই তিনি ছিলেন অনবদ্য।  


ম্যাচের শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিয়ে সহাল বলেন, “কোচই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন আক্রমণে এতটা আগ্রাসী হয়ে ওঠার জন্য। মাঝমাঠে নেমে বল নিয়ন্ত্রণে রাখারও চেষ্টা করেছি। স্বাধীন ভাবে খেলার সুযোগ পাচ্ছি এই দলে। সে জন্যই ক্রমশ উন্নতি করতে পারছি। প্রতি ম্যাচে আমাদের দলের প্রত্যেকের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে এবং তা ম্যাচেও প্রতিফলিত হচ্ছে। আমি নিজের খেলায় খুশি। নতুন দলের সতীর্থদের সঙ্গে খেলা খুবই উপভোগ করছি আমি”। 


                                                                                                                                                                                                    তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল