সিরাজকে বিসিসিআই বলেছিল, চাইলে তিনি দেশে ফিরে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে থাকতের পারেন। কিন্তু সিরাজ ‘না’ বলে দেন। দেশের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে আগুন ঝরানো বোলিং করে প্রয়াত বাবার স্বপ্নপূরণের শপথ নেন মনে মনে। মাঠে নেমে প্রমাণ করে দেন, তাঁর সংকল্প কতটা নিখাদ, গভীর। ব্যাকআপ বোলার থেকে দলের বোলিং আক্রমণের সামনের সারির অস্ত্র হয়ে ওঠেন। প্রথম টেস্টে বেঞ্চে বসে থাকতে হলেও দ্বিতীয় টেস্টে দলে জায়গা পান চোট–আঘাতের জেরে গোটা সিরিজ থেকেই ছিটকে যাওয়া মহম্মদ সামির জায়গায়। সুযোগের সদ্ব্যবহার করায় ব্যর্থ হননি সিরাজ। জীবনের প্রথম টেস্টেই মেলবোর্নের মাঠে ৫ উইকেট তুলে নেন। ভারত ৮ উইকেটে জেতে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তৃতীয় টেস্টে ২টি উইকেট পান। কিন্তু চতুর্থ টেস্টে আবার ঝলসে ওঠেন বল হাতে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে একটি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি উইকেট তুলে নিয়ে ক্যাঙ্গারু-বাহিনীর শিরদাঁড়া ভেঙে দেন। গাব্বায় ৩২৮ রানের টার্গেট তাড়া করে পূজারা, শুভমন, ঋষভরা প্রাণপণ লড়াইয়ে ৩ উইকেটে যে জয় ছিনিয়ে আনে, তাতে সিরাজের অবদানও কম নয়। বুমরা, সামির মতো তারকা বোলারদের অভাব টের পেতে দেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত এই সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট সংগ্রহকারী হন ২৬ বছরের তরুণ।
ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা হলেও সিরাজের কিন্তু বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা একটুও কমেনি, স্বাভাবিক ভাবেই। তাই ঘরে ফিরে দলের বাকিরা বিশ্রাম নিতে যে যার বাড়ি চলে গেলেও তিনি সামসাবাদে রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা রওনা দেন খৈরতাবাদে, যেখানে চিরতরে শায়িত রয়েছেন তাঁর বাবা। জীবনে বাবার ভূমিকার উল্লেখ করে সিরাজ আগেই বলেছেন, তিনিই তাঁর শক্তির উত্স। সিরাজের কথায়, জীবনে আমার সবচেয়ে বড় সমর্থককে হারালাম। আমার ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নেওয়ায় ওঁরই সবচেয়ে বেশি সমর্থন ছিল। এটা আমার কাছে বিরাট ক্ষতি। এই পৃথিবীতে না থাকুন, আমার সঙ্গে সবসময়ই থাকবেন উনি।
৫ ফেব্রুয়ারি চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের ৪ টেস্টের সিরিজ শুরু হচ্ছে। প্রথম দুটি টেস্টে ভারতীয় দলে তাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে।