নয়াদিল্লি: বোমা ফাটালেন ডোপ টেস্টে অনূত্তীর্ণ হওয়ার দরুন আসন্ন অলিম্পিক্স থেকে কার্যত বাইরে হয়ে যাওয়া নরসিংহ যাদব। দেশের অন্যতম সেরা এই কুস্তিগীরের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এর নেপথ্যে তিনি স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)-এর চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলেছেন তিনি। যদিও, সব অভিযোগ খারিজ করেছে সাই।


৫ অগাস্ট থেকে বসছে রিও অলিম্পিকের আসর। যেখানে ৭৪ কেজি বিভাগের কুস্তিতে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল কুস্তিগীর নরসিংহ যাদবের। অলিম্পিকে যাওয়ার আগে সোনিপতের শিবিরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নরসিংহ। কিন্তু, হঠাৎই ডোপ বিতর্কে সব গোলমাল হয়ে যায়।

ন্যাশনাল অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির (নাডা) পক্ষ থেকে যে টেস্ট করা হয়েছিল, সেই টেস্টেই ফেল করেন নরসিংহ৷ নাডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ স্যাম্পেলের পর নরসিংহের বি স্যাম্পেল টেস্টেও নিষিদ্ধ মিথানডিয়েনন পাওয়া গিয়েছে৷

শুধু তাই নয়, যখন নরসিংহের বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় দেশজুড়ে, তখনই রবিবার নাডার তরফে জানানো হয়, একই পরীক্ষায় ধরা পড়েছেন নরসিংহের রুমমেট সন্দীপ তুলসী যাদবও। নাডার দাবি, সন্দীপেরও দুটি স্যাম্পলই পজিটিভ বেরিয়েছে।

এরপরই, সোমবার বিতর্কে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আসরে নেমে পড়েন নরসিংহ। তাঁর দাবি, চক্রান্ত করেই তাঁকে এই মিথানডিয়েনন দেওয়া হয়, যাতে তিনি অলিম্পিকের আসরে যেতে না পারেন। নরসিংহ বলেন, প্রথমে অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। তারপর তাঁর প্রাণহানির সংশয় রয়েছে বলে রিপোর্ট দেয় সিআইডি। আর এখন ডোপ-বিতর্ক। কুস্তিগীরের দাবি, তিনি কোনওদিন নিষিদ্ধ ওষুধ বা নেননি।

এদিকে, ডোপ-বিতর্কে নতুন মাত্রা দিয়েছেন সাইয়ের রাঁধুনি চন্দন, যিনি নরসিংহের জন্য খাবার তৈরি করতেন। তাঁর দাবি, ৫ জুন রাতে ক্যান্টিনে রান্নার সময় টমেটো আনতে মাত্র এক মিনিটের জন্য সেখান থেকে বেরিয়ে স্টোররুমে যান তিনি। ফিরে এসে দেখেন, তাওয়া থেকে অনর্গল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

রাঁধুনি যোগ করেন, ধোঁয়ার প্রকোপ এতটাই ছিল যে, গোটা রান্নাঘর ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। চন্দনের আরও দাবি, আশপাশের ছেলেদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, এক যুবক রান্নাঘরে ঢুকে তাওয়ায় কিছু একটা ঢেলেই চলে যায়। এরপরই অনর্গল ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে।

সেদিন রাতের খাবার খাননি নরসিংহ ও তাঁর রুমমেট সন্দীপ তুলসী যাদব। নরসিংহর প্রশ্ন, সেদিন জেনে ফেলায় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু এই ঘটনা যে তার আগে ঘটেনি, তার নিশ্চয়তা কোথায়? গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভারতীয় কুস্তিগীর। নরসিংহ যাদবের পাশে দেশের কুস্তি ফেডারেশনও। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে তারা। ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজভূষণ সিংহ জানান, গোটা ঘটনাটি তারা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে। একইসঙ্গে, নাডা ও বিশ্ব কুস্তি সংস্থা (ফিলা)-কেও অবগত করা হয়েছে।

ফেডারেশনের প্রধান জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক সাই কর্মকর্তা সহ বেশ ক্রীড়াবিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন নরসিংহ। ব্রিজভূষণের দাবি, গত একমাসে নরসিংহের ওপর তিন-তিনবার ডোপ পরীক্ষা হয়েছে, যা চক্রান্তের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাশাপাশি, সন্দীপের রুমমেটেরও একই পরীক্ষায় ধরা পড়াটাও সন্দেহজনক।

ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে অনড় নরসিংহর কোচও। তাঁর দাবি, মিথানডিয়েনন শরীরের মাংসপেশী বাড়াতে সাহায্য করে। যা অনেকসময় বডি-বিল্ডারদের ব্যবহার করতে দেখা যায়। নরসিংহর কোচের দাবি, এক্ষেত্রে জেনেশুনে মিথানডিয়েনন নেবেন না নরসিংহ। কারণ, মাসল বাড়ালে তো শরীরের ওজনও বাড়বে। সেক্ষেত্রে আবার ওজন বেড়ে তা ৭৪ কেজির বেশি হয়ে গেলে কুস্তির যে বিভাগে নরসিংহর লড়াই করার কথা, সেখান থেকেই তো ছিটকে যাবেন তিনি।

রাঁধুনির কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর কেন ফেডারেশনের দ্বারস্থ তাঁরা হননি এই প্রশ্নের জবাবে নরসিংহ বলেন, বুলগেরিয়া যাওয়ার তাড়াহুড়ো থাকায় বিষয়টি তাঁরা সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই সময় জানাতে পারেননি৷ উল্টোদিকে, যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাই। ওই আধিকারিক তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ও সমস্যায় পড়েছে। এখনও নরসিংহকেই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।

গোটা বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু করছে জাতীয় ডোপ বিরোধী সংস্থা-নাডার শৃঙ্খলারক্ষা প্যানেল। যাদের রায়ের উপর ঝুলে নরসিংহর চূড়ান্ত রিও-ভবিষ্যৎ। নাডা ডিরেক্টর জেনারেল নবীন অগ্রবাল জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মেথানডিয়েনোন মেলায় নরসিংহের উপস্থিতিতেই তাঁর বি-নমুনা খোলা হয় এবং সেটিও পজিটিভ হওয়ায় নিয়ম মেনে ভারতীয় অলিম্পিক কমিটি তাঁকে সাময়িক নির্বাসনে পাঠিয়েছে।

এই কাণ্ডের পর নরসিংহ যাদবের অলিম্পিক যাওয়ার সুযোগ কার্যত নেই বলে ইঙ্গিত দেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গয়াল। তিনি বলেন, নরসিংহের মামলাটিও বিশ্ব অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা)-র নিয়মানুসারেই হবে। তবে, নরসিংহকে নিজের বক্তব্য পেশ করার সব সুযোগ দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, আগামী বুধবার এই মামলার চূড়ান্ত শুনানির বন্দোবস্ত করবে নাডা। তারপর সম্ভবত বৃহস্পতিবার রায় দেবে।

ডোপিং বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর নরসিংহের জায়গায় সুশীল কুমারের সুযোগ পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা (আইওএ)। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল রাজীব মোহতা জানিয়েছেন, তার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অলিম্পিকে অ্যাথলিটদের নামনথিভুক্ত করার সময় শেষ হয়ে গিয়েছে৷ আইওএ-র ইঙ্গিতেই স্পষ্ট, যদি বাকি রিপোর্টে নরসিংহ যাদব দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে এবার রিও অলিম্পিকে কুস্তির ৭৪ কেজি বিভাগে প্রতিযোগীহীন হয়েই থাকবে ভারত৷