হ্যামিলটন: সুপার ওভারের ম্যাচের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। গত বছরের একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপের ফাইনালে লর্ডসে শেষমুহুর্তের সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা কিউই সমর্থকদের কাছে কখনও ভোলার নয়। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে দুই দলই সমান ২৪১ রান করে। এরপর একদিনের ক্রিকেটের প্রথম সুপার ওভারে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। সুপার ওভারও টাই হয়েছিল। কিন্তু বাউন্ডারি সংখ্যার নিরিখে ইংল্যান্ডকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই নিয়ম ঘিরে বিতর্ক কম হয়নি। যদিও বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে।
২০২০-র জানুয়ারিতেও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে পরিবর্তন কিছু ঘটল না। ভারতের বিরুদ্ধে চলতি টি ২০ সিরিজের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হল হ্যামিলটনে তৃতীয় ম্যাচ জিততেই হল তাদের। কিন্তু সুপার ওভারে বেশিরভাগ সময় আধিপত্য বজায় রেখেও হারতে হল তাদের।
সুপার ওভারে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ব্যাট হাতে দলকে নেতৃত্ব দেন। নিউজিল্যান্ডের রান তাড়ার সময় প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনিই। খেলেছিলেন ৯৫ রানের তুখোড় ইনিংস। সুপার ওভারে জসপ্রিত বুমরাহর বলে একটি ছয় ও একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। ওই ওভারে ১৭ রান করে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচে এদিন বল হাতে সফল হননি বুমরাহ। চার ওভারে ৪৫ রান দেন। সুপার ওভারে অবশ্য তাঁর ওপরেই আস্থা রাখেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।
এরপর ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় সুপার ওভারে প্রথম চার বলে ৮ রান হওয়ার পর মনে হয়েছিল সিরিজে কামব্যাক করতে চলেছে ২-০ পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড। কিন্তু রোহিত শর্মা টিম সাউদির শেষ দুই বলে জোড়া ছয় মেরে ভারতকে জয় এনে দেন।
সুপার ওভারে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রান করল ভারত।
ভারত এই ম্যাচ জিতে ৩-০ এগিয়ে সিরিজ পকেটে ভরল। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি ২০ সিরিজ জিতছে ভারত।
এর আগে ইংল্যান্ড অকল্যান্ডে সুপার ওভারে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। মাত্র ছয়মাসের মধ্যে বিশ্বকাপের ফাইনাল সহ ৩ বার সুপার ওভারে হারল নিউজিল্যান্ড।
২০১৯-এর নভেম্বরে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড টি ২০ সিরিজের নির্ণায়ক ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল সুপার ওভারে। ১৪৬ রানে দুই দলের টাই হওযার পর ইংল্যান্ড সুপার ওভারে ১৭ রান করেছিল। কিন্তু জবাবে সুপার ওভারে মাত্র সাত রান তুলতে পেরেছিল নিউজিল্যান্ড।
সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ড


ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে প্রথম টাই ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। ২০০৬-এর ওই ম্যাচে অকল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড-উভয় দলই ১২৬ রান করেছিল। বোল আউট (৩-০)-এর মাধ্যমে ওই ম্যাচে হারতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে।
টি ২০ ক্রিকেটে সুপার ওভার চালু হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড সবচেয়ে বেশি সুপার ওভার খেলেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হেরেছে।
২০০৮-এ অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড ( ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৫৫) ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০ ওভারে আট উইকেটে ১৫৫)এর কাছে সুপার ওভারে হেরে গিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার ওভারে করে ১ উইকেটে ২৫। নিউজিল্যান্ড করে ১ উইকেটে ১৫ রান।
২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ড সুপার ওভারে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। ওই ম্যাচে উভয় দলই ২১৪ রান করে। সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ড করে ৯ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া করে ১ উইকেটে ছয় রান।
২০১২-র সেপ্টেম্বরে টি ২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড সুপার ওভারে হেরে যায় শ্রীলঙ্কার কাছে। ওই ম্যাচে উভয় দলই ১৭৪ রান করে। সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কা করে ১ উইকেটে ১৩। নিউজিল্যান্ড করে ১ উইকেটে ৭।
২০১২-র অক্টোবরে টি ২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচ সুপার ওভারে হারে নিউজিল্যান্ড। ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯.৩ ওভারে ১৩৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড ২০ ওভারে করে ৭ উইকেটে ১৩৯। সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ১৯ রান। নিউজিল্যান্ড করে ১৭ রান।
এরপর গত বছরের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের কাছে এবং ২০২০-র জানুয়ারিতে সুপার ওভারে ভারতের কাছে হারল নিউজিল্যান্ড।