ইসলামাবাদ: প্যারিস অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব মোট ৭ অ্যাথলিটের মধ্যে কার সমস্ত খরচ বহন করা হবে? অলিম্পিক্স শুরুর আগে বেশ ধন্দে ছিলেন পাকিস্তানের ক্রীড়া কর্তারা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, আর্শাদ নাদিম (Arshad Nadeem) ও তাঁর কোচ সলমন ফৈয়জ বাটের (Salman Fayyaz Butt) বিমানের টিকিটের খরচ বহন করা হবে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খানেওয়াল গ্রামের ২৭ বছরের অ্যাথলিট জ্যাভলিনে অলিম্পিক্স রেকর্ড গড়ে যেন আস্থার মর্যাদা রাখলেন। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে পাকিস্তানের প্রথম অ্যাথলিট হিসাবে ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা জিতলেন নাদিম।
তবে নাদিমের সফর সহজ ছিল না। বাবা নির্মাণকর্মী। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় নাদিম। অভাবের সংসারে শরীরের প্রয়োজন মতো খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতেন নাদিম। বছরে একবারই মাংস জুটত অ্যাথলিটের। ঈদ আল আধার দিন (Eid al-Adha)। জ্যাভলিন থ্রোয়ের মতো স্পোর্টস, যেখানে শরীরের শক্তির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে থাকে, সেখানে নির্ধারিত ডায়েট মেনে চলাও ছিল নাদিমের কাছে বিলাসিতা। জানিয়েছেন তাঁর দাদা শাহিজ আজ়িম।
প্যারিস অলিম্পিক্সে ৬ ফিট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার পাক অ্যাথলিট দ্বিতীয় থ্রোয়ে ৯২.৯৭ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেন। তাতেই বাজিমাত। অলিম্পিক্স রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন নাদিম। দ্বিতীয় হন ভারতের নীরজ চোপড়া। যাঁকে আদর্শ মনে করেন পাক জ্যাভলিন থ্রোয়ার।
ভারতে নীরজ চোপড়ার খরচ বহন করে একাধিক সংস্থা। অথচ নাদিমের একটা সময় জ্যাভলিন কেনার অর্থ ছিল না। তাঁর বাবা মহম্মদ আশরাফ সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, 'লোকের কোনও ধারণাই নেই কীভাবে ও এই জায়গায় পৌঁছেছে। কীভাবে গ্রামবাসী ও আত্মীয় পরিজনেরা ওকে অর্থসাহায্য করতেন যাতে করে ও অন্য শহরে টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পা প্র্যাক্টিস করতে যেতে পারে।'
পাকিস্তানের যে সাত অ্যাথলিট অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বাকি ৬ জন ফাইনালের যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেননি। নাদিম ফাইনালে ওঠার পরই তাঁর পরিবারের সদস্যরা, স্ত্রী, দুই সন্তান মিলে উৎসব করেন। মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
তবে নাদিমের সাফল্য রাতারাতি আসেনি। গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো জিতেছিলেন। ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে জিতেছিলেন সোনা। ৯০.১৮ মিটার জ্যাভলিন ছুড়েছিলেন।
নীরজকেই গুরু মানেন নাদিম। কয়েক মাস আগে একটু নতুন জ্যাভলিন কিনে দেওয়ার জন্য পাক কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানিয়েছিলেন নাদিম। এগিয়ে এসেছিলেন নীরজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাদিমারে দাবি শেয়ার করে তাঁর পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছিলেন নীরজ। গুরু তথা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সেই আস্থারও যেন মর্যাদা দিলেন পাক অ্যাথলিট।