কলকাতা: মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-সুরেশ রায়না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন চলতি অগাস্টেই। এবার খেলা ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন দেশের অন্যতম সেরা টেবিল টেনিস তারকা পৌলমী ঘটক। তাঁর অবসর ঘোষণার সঙ্গে ভারতীয় টেবিল টেনিসে এক বর্ণময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হল।



বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে পৌলমী বললেন, ‘সুদীর্ঘ কেরিয়ার আমার। ১৩ বছর বয়স থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলছি। তাই অবসর ঘোষণা আমার কাছে খুব আবেগের মুহূর্ত। বাবা-মা আমার জন্য অনেক ত্যাগ করেছেন। ওঁদের জন্যই আমি এতদূর আসতে পেরেছি। প্রত্যেক ক্রীড়াবিদেরই অবসরের কিছু কারণ থাকে। তা নাহলে কেউ ভালবাসার জিনিস ছাড়বে কেন! চোটআঘাত আর সময়ের সমস্যা আমার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ। একশো শতাংশ দিতে পারছিলাম না। তাই এই সিদ্ধান্ত। কোনও অনুশোচনা নেই।’



নিজে খেলা ছাড়লেও, টেবিল টেনিসকে ছাড়ছেন না ৩৭ বছরের পৌলমী। বললেন, ‘আমার সামনে অন্য একটা লক্ষ্য রয়েছে। ভূমিকাটা শুধু বদলাচ্ছে। টেবিল টেনিসেই থাকব। কোচিং করাব। দেশের জন্য লড়াই করব কোচ হিসাবে। নতুন চ্যালেঞ্জ। কোচ হিসাবেও নিজের সেরাটা দেব।’



মাত্র ৯ বছর বয়সে খেলা শুরু। দীর্ঘ কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত কোনটা? পৌলমী বলছেন, ‘একটা মুহূর্ত বেছে নেওয়া কঠিন। প্রথমবার সিনিয়র ন্যাশনাল টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভুলব না। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম। তবে বয়স এত কম ছিল যে, ব্যাপারটার তাৎপর্যই বুঝিনি। কমনওয়েলথ গেমসে অনেক পদক জিতেছি। তবে ২০১০ সালে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে দেশের মাটি থেকে পদক জেতা অন্যতম সেরা মুহূর্ত। পদকের ম্যাচে লাস্ট পয়েন্টটা যখন জিতেছিলাম, কী আনন্দ! যখন পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে পদক নিচ্ছি, আর জাতীয় সঙ্গীত বাজছে, সেই মুহূর্তটা অবিস্মরণীয়। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অর্জুন পুরস্কার নেওয়াও এক দারুণ অভিজ্ঞতা। রাষ্ট্রপতি ভবনে যখন আমার সাফল্যের বিবরণ দেওয়া হচ্ছিল, আবেগে চোখে জল এসে গিয়েছিল।’



কোচ পৌলমীর লক্ষ্য কী হবে? ‘চাকরি সামলে যতটা সময় পাব, অ্যাকাডেমিতে দেব। টেবিল টেনিসে যদি কোনও পদক পায় ভারত, সেটা যেন আমার প্রশিক্ষণে কোনও বাঙালিই পায়। এশীয় পর্বে আমরা পদক পাচ্ছি। অলিম্পিক্সে এশীয় দেশগুলিই পদক পায়। এশীয় পর্যায়ে আমরা ওদের হারাচ্ছি। টেবিল টেনিসে ভারতের অলিম্পিক্স পদক জয় আর বেশি দূরে নয়,’ বলছিলেন আশাবাদী পৌলমী। যোগ করলেন, ‘ব্যাডমিন্টনে পুল্লেলা গোপীচন্দ যেমন একটা ছাদের তলায় সব কিছু করছে, সেরকম কিছু ভাবতে হবে। রাজডাঙ্গায় আমার অ্যাকাডেমি রয়েছে। আমার আর সৌম্যদীপের (স্বামী তথা টেনিস খেলোয়াড় সৌম্যদীপ রায়) আর একটা অ্যাকাডেমি রয়েছে। বাচ্চা ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করছি। তৃণমূল স্তরে কাজ করতে চাই। তাতেই টেনিসকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারব।’