কলকাতা: করোনার কোপ এবার ঘরোয়া ক্রিকেটে। অতিমারির জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল খেলাধুলো। দেশের মাটিতে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে সদ্য শুরু হয়েছে ক্রিকেট। তবে রঞ্জি ট্রফি করা সম্ভব হবে না বলে রাজ্য সংস্থাগুলোকে বকলমে জানিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সম্প্রতি দেশে ও বিদেশে টেস্টে ভারতীয় দলের সাফল্যের নেপথ্যে বারবার কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিকাঠামো ও রঞ্জি ট্রফির প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে। সেই রঞ্জি ট্রফিই হবে না এবার। দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যশালী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিরাট কোহলিদের দলের সাপ্লাই লাইন?


দ্বিধাবিভক্ত প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। অরুণ লালের মতো কেউ কেউ বলছেন, সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি বা বিজয় হাজারে ট্রফি না করে রঞ্জি করলে উপকৃত হতো ভারতীয় ক্রিকেট। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, রঞ্জি ট্রফি না হওয়ায় ভারতীয় দলের সাপ্লাই লাইন ধাক্কা খাবে। আবার অশোক মলহোত্রর মতো কেউ কেউ আবার বলছেন, রঞ্জি ট্রফি না হলেও ফারাক পড়বে না। আইপিএল এবং ভারতীয় এ দলের সিরিজ খেলে এখনকার তরুণ ক্রিকেটারেরা তৈরি হয়ে যায় বলেই মত তাঁর।

বাংলার কোচ তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার অরুণ লাল বললেন, 'রঞ্জি ট্রফি না হওয়াটা বিরাট বড় ক্ষতি। চারদিনের ক্রিকেটই তো একজন ক্রিকেটারের চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি করে। পাশাপাশি এখন বোর্ড সারা দেশে এত ভাল পরিকাঠামো তৈরি করেছে যে, দারুণ সব ক্রিকেটার উঠে আসছে। আমার তো মনে হয় সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি বা বিজয় হাজারে ট্রফি না হয়ে রঞ্জি হলে ভাল হতো।' অরুণ যোগ করছেন, 'বায়ো বাবল নিয়ে এত কড়াকড়িরই বা কী আছে! সব কিছুই তো এখন নর্ম্যাল হয়ে যাচ্ছে। নিউ নর্ম্যালে ট্রেন-বাস চালু হয়ে গিয়েছে। জৈব সুরক্ষা বলয়েরও প্রয়োজন নেই বলে আমার মনে হয়।'

বাংলার রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বলছেন, 'ভারত যে টেস্টে এত ভাল খেলছে, নতুন ছেলেরা চাপের মুখেও এত ভাল পারফর্ম করছে, তার নেপথ্যে রঞ্জি ট্রফি। রঞ্জি না হলে ভারতের সিনিয়র দলের সাপ্লাই লাইন কিছুটা ধাক্কা খাবেই।' যদিও এই ধারণায় বিশ্বাসী নন অশোক মলহোত্র। জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলছেন, 'রঞ্জি ট্রফি না হওয়াটা হতাশাজনক। তবে ভারতীয় দলের সাপ্লাই লাইনে প্রভাব পড়বে না। এখন আইপিএল খেলে খেলে ছেলেরা তৈরি হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আইপিএলে তরুণ ক্রিকেটারেরা তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে থাকে। তাদের প্রস্তুতি সামনে থেকে দেখার সুযোগ পায়। তাতেই তারা তৈরি হয়ে যায়। পাশাপাশি জাতীয় এ দলের হয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকে এখন তরুণদের সামনে। এই ম্যাচগুলো খেলে তৈরি হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।'

তবে করোনা পরিস্থিতিতে ৩৮ দল নিয়ে প্রায় তিন মাস ব্যাপী চারদিনের ফর্ম্যাটে রঞ্জি ট্রফি আয়োজন যে বোর্ডের পক্ষে অসম্ভব, তা মেনে নিয়েছেন প্রত্যেকে। অরুণ লাল বলছেন, 'মেহাত নিরূপায় হয়ে রঞ্জি বাতিল করতে হল। খারাপ লাগছে। তবে কী করা যাবে।' সম্বরণ বলছেন, 'তিন মাস ধরে বায়ো বাবলে এতগুলো দলের এত ক্রিকেটারকে রেখে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা কার্যত অসম্ভব। অতিমারির কারণে এবার আর কিছু করার ছিল না।' আর মলহোত্র বলছেন, 'এবার যা কিছু হচ্ছে সবই ব্যতিক্রমী। এরকম অতিমারি পরিস্থিতি আমরা কি কোনওদিন দেখেছি নাকি! খেলা যে শুরু হয়েছে, সেটাই বড় ব্যাপার। রঞ্জি ট্রফি এবার না হয় বাদই গেল।'