কলকাতা: সদ্য জাতীয় দলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফিরেছেন| অথচ দিল্লির রঞ্জি ট্রফির দলে সুযোগ পাননি| প্রতিভাবান তরুণ মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, চিন্তায় ছিলেন ব্যক্তিগত কোচ, বন্ধু ও পরিজনেরা| এমনকী, দিল্লির প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার অজয় জাডেজা উৎসাহ দেওয়ার জন্য সেই তরুণকে বলেছিলেন, 'নেটে নেমে পড়| ভাবিস না| প্র্যাক্টিসে আরও জোর দে|'


তরুণ তুর্কির জবাব অবশ্য স্তম্ভিত করে দিয়েছিল জাডেজাকে| প্রাক্তন ক্রিকেটারকে দলে সুযোগ না পাওয়া তরুণ বলেছিলেন, 'আমি ভেঙে পড়ছি না| যেদিন দরকার পড়বে, এরা বাড়ি থেকে ডেকে নেবে|'

সেদিনের সেই তরুণ মঙ্গলবার ব্রিসবেনে ব্যাট হাতে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের কাণ্ডারি| ঋষভ পন্থ| যিনি গাব্বায় প্রবল চাপের মুখে ১৩৮ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছেন| তাঁর ব্যাটের দৌরাত্ম্যেই গাব্বায় ৩২ বছর পর টেস্টে পরাজয়ের লজ্জা হজম করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে| ভারতের টেস্ট ও সিরিজ জয়ের পর ছাত্রের কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত ঋষভের ছোটবেলার কোচ তারক সিংহ| আশিস নেহরা থেকে শুরু করে শিখর ধবন, ভারতীয় ক্রিকেটে একের পর এক তারকার উত্থান ঘটেছে তাঁর হাত ধরে| সেই তারক দিল্লি থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, 'ও বরাবরই চাপের মুখে শান্ত থাকে| অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফিরে রাজ্য দলে বঞ্চিত হয়েছিল| কিন্তু নিজের ওপর আস্থা হারায়নি| ও জানত একদিন সুযোগ পাবেই| সেই মরসুমেই বাংলার বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল ওর|'

বরাবরই ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ঋষভ| তবে তা মাঝে মধ্যে বিপত্তিও ঘটিয়েছে| ক্রিজে সেট হয়ে গিয়েও আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন| যা তাঁর ক্রিকেটীয় ভবিষ্যৎকেও ধাক্কা দিয়েছে| কঠোর হাতে সেই পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে কোচকে| তারক বলছেন, 'ও বরাবরই নিজের দক্ষতায় বিশ্বাসী| তবে অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে অনেকবার আউট হয়েছে| আমার কাছে বকুনিও খেয়েছে| ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে দুটো নিশ্চিত সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছে| অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সিডনিতে সেঞ্চুরির সুযোগ নষ্ট করেছে| ও নিজেও বিমর্ষ ছিল| সিডনি থেকে ফোন করে বলেছিল, স্যার, এই সিরিজের ওপর আমার কেরিয়ারের অনেক কিছু নির্ভর করে আছে| আমি ওকে বলি, ইনিংস সাজাতে শেখো| তুমি মারকাটারি ব্যাটিং করলে লোকে বাহবা দেবে| তবে উইকেট ছুড়ে দিলে কেউ ক্ষমা করবে না| তার চাইতে শুরুতে দেখে খেলো| সংযত থাকো| সেট হয়ে গিয়ে শট খেলো| আগ্রাসী ব্যাটিং করো| তবে শুরুতে সাবধান|'

তারকের পরামর্শে কাজ হয়েছে| মঙ্গলবার যার প্রতিফলন দেখা গেল গাব্বায়| শুরুর দিকে হাওয়ায় কোনও শট খেলেননি ঋষভ| মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউডদের বাউন্ডারি মেরেছেন| তবে মাটি ঘেঁষা শটে| একমাত্র নাথান লায়ন ছাড়া কাউকে তুলে মারেননি| পুরস্কার দলকে জেতানো ইনিংস| তারক বলছেন, 'চাপের মুখে অটল আর শান্ত থাকার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে ওর| কথা বলতে ভালবাসে| স্টাম্পসের পিছনে দাঁড়িয়ে কিপিং করার সময় স্পাইডারম্যান গাইতে পারা মনে হয় ওর পক্ষেই সম্ভব| তবে এর ইতিবাচক দিক হল, চাপ ওকে কাবু করতে পারে না| কঠিন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ায় না| ঋষভ এখন অনেক পরিণত| ভারতকে আরও ম্যাচ জেতাবে|'