মুম্বই: ১৯৮৯ সালে ভারতের পাকিস্তান সফর। বিপক্ষে তিন স্পিডস্টার। যাঁদের মধ্যে একজন, ইমরান খান (Imran Khan) ততদিনে কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে। বাকি দুজন, ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) ও ওয়াকার ইউনিস। যাঁদের বলা হচ্ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিমান ফাস্টবোলার। সঙ্গে কিংবদন্তি স্পিনার আব্দুল কাদির। সেই সিরিজেই ভারতের জার্সিতে অভিষেক এক বিস্ময় বালকের। মাত্র ১৬ বছর বয়স। কিন্তু কী অফুরন্ত সাহস! শিয়ালকোট টেস্টে ওয়াকারের বাউন্সারে নাক ফাটল। জাভেদ মিয়াঁদাদ স্লেজিং শুরু করলেন। টলানো গেল না। রক্তাক্ত নাক নিয়ে হাফসেঞ্চুরি করলেন। 


পরের ২৪ বছর বিশ্বক্রিকেটকে শাসন করলেন সেদিনের সেই লড়াকু যোদ্ধা। গোটা বিশ্ব যাঁকে চিনেছে সচিন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) নামে। কুর্নিশ করেছে তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে। একবাক্যে সকলে স্বীকার করে নিয়েছেন, ডন ব্র্যাডম্যানের পর এত বড় মাপের ব্যাটসম্যান আর আসেননি। যাঁকে দেখে পরবর্তীকালে স্বয়ং ব্র্যাডম্যান বলেছিলেন, আরে! এ ছেলে তো আমার মতো ব্যাট করে। 


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। কিংবদন্তি সচিন সোমবার পূর্ণ করলেন জীবনের হাফসেঞ্চুরি। পঞ্চাশ পূর্ণ হল মাস্টার ব্লাস্টারের। ক্রিকেট ঈশ্বরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছাবার্তার ঢল নেমেছে। ক্রিকেটার থেকে চলচ্চিত্র জগতের সেলিব্রিটি, রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ, সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে 'হ্যাপি বার্থ ডে সচিন'-এ মুখরিত।


পঞ্চাশ পূর্ণ করছেন বলে এবারের জন্মদিন ভীষণ স্পেশ্যাল। কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছিল সেলিব্রেশন। রমরমিয়ে চলছে আইপিএল। মুম্বপই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর সচিন। দিন দুয়েক আগে ওয়াংখেড়েতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচের মাঝে স্টেডিয়ামেই পালন করা হয়েছিল তেন্ডুলকরের পঞ্চাশতম জন্মদিন। সোমবার সকাল থেকে দেশে, গোটা বিশ্বে উৎসবের আবহ।


দীর্ঘ ২৪ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারে অনন্য রেকর্ড জমা পড়েছে সচিনের সাফল্যের ঝুলিতে। ৬৬৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচে চোখধাঁধানো ৩৪ হাজার ৩৫৭ রান। সচিন তেন্ডুলকারই ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটার যাঁর ঝুলিতে রয়েছে একশো আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটে ৫১ শতরানের পাশাপাশি ২০০ ম্যাচে ১৫ হাজার ৯২১ রান রয়েছে মাস্টার ব্লাস্টারের। যা এখনও বিশ্বরেকর্ড। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ৪৯ সেঞ্চুরি-সহ ১৮,৪২৬ রান। সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে।


সচিনের চওড়া ব্যাটে আস্থা রাখত আসমুদ্রহিমাচল। মাস্টার ব্লাস্টার ক্রিজে থাকলে ভরসায় বুক বাঁধতেন ভারতীয়রা। শারজায় মরুঝড়কে নিষ্প্রভ করে দেওয়া জোড়া সেঞ্চুরি হোক বা শ্যেন ওয়ার্ন-শোয়েব আখতারদের ব্যাট হাতে শাসন, সচিন মানেই রূপকথা।


সচিনের পঞ্চাশতম জন্মদিনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বীরেন্দ্র সহবাগ, শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সকলে। পিছিয়ে নেই চলচ্চিত্র জগতের তারকারাও। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ম্যাচ চলাকালীন তাঁকে মাঠে দেখলে এখনও ভরা গ্যালারি গর্জন করে ওঠে, স্যাচিন... স্যাচিন...। যে আওয়াজ গোটা দেশকে বছরের পর বছর সম্মোহিত করে রেখেছে। তিনি খেলা ছাড়ার দশ বছর পরেও মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে ঐশ্বরিক ব্যাকফুট ড্রাইভ বা প্যাডল স্যুইপ। মাস্টার ব্লাস্টারের জীবনের হাফসেঞ্চুরিতে গোটা বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা চলছে, তুম জিও হাজারো সাল...


আরও পড়ুন: ইডেনে ক্রিকেটার হিসাবে এই হয়তো শেষ, বাংলায় বলে গেলেন ধোনি