কলকাতা: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেটকে কী দিয়েছেন তা নতুন করে বলার নেই। কিন্তু তাঁর বর্ণাঢ্য কেরিয়ারে কাঁটা হয়ে তীব্রভাবে বিঁধেছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল। সৌরভ প্রকাশ্যে দাবি করেন, গ্রেগের জন্যই ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয় তাঁকে, চূড়ান্ত অবিচারের শিকার হতে হয়। সে সময়টা তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের সব থেকে খারাপ অধ্যায়।

সেটা ২০০৩। ব্রিসবেনে ১৪৪ করে বিশ্ব ক্রিকেটকে সৌরভ বুঝিয়ে দেন, স্টিভ ওর অপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়াকে তিনিই একমাত্র মুখের মত জবাব দিতে পারেন। তার মাসছয়েক আগে প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর মত সৌরভ হাজির হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়, রেইকি ভিজিট করতে। বুঝতে চেয়েছিলেন, টিম ইন্ডিয়ার সফরের সময় ক্রিজে কেমন বাউন্স থাকবে, ফিল্ডিং প্লেসমেন্টই বা কেমন হওয়া উচিত। সেই প্রস্তুতিতে তাঁকে সাহায্য করেন গ্রেগ চ্যাপেল। সৌরভও ফিরিয়ে দেননি, গ্রেগ তখন আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন, মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিল। শোনা যায়, সৌরভ তখন আর্থিক সাহায্যও করেন তাঁকে। সে সময় থেকে সৌরভ-গ্রেগ বন্ধুত্ব গাঢ় হয়, সৌরভ ঠিক করেন, জন রাইটের চুক্তির সময়সীমা শেষ হলে কোচ হিসেবে চ্যাপেলকে আনবেন তিনি।

সে সময় নাকি তাঁকে বারবার নিষেধ করেছিলেন তৎকালীন বিসিসিআই সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া। তিনি বলেছিলেন, চ্যাপেল জটিলতাপূর্ণ, তাঁর সঙ্গে সৌরভের ব্যক্তিত্বের সংঘাত হবে। কিন্তু মহারাজ তা মানতে রাজি হননি। তিনি গ্রেগকে নিয়ে আসেন কিন্তু এসেই গ্রেগ স্বমূর্তি ধরেন। সিনিয়রদের ম্যানেজ করতে পারেননি, যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহরাও তাঁর কাজের ধরনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সে সময় সৌরভ, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলের মত সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, জুনিয়র যুবরাজ, জাহির খান, হরভজনরাও টিম ইন্ডিয়ার সেই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু গ্রেগ এসে শুরু করেন লবিবাজি, খারাপ হতে থাকে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্স।

জন রাইট চলে যাওয়ার পর মনে করা হয়েছিল গ্রেগ ভারতীয় ক্রিকেটকে উপকৃত করবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কর্তৃত্ব করা। অস্ট্রেলীয় সংস্কৃতি আমদানি করতে গিয়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেন। ভারতীয় খেলোয়াড়রা তা মানতে পারেননি। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে আসে বিসিসিআইকে লেখা গ্রেগের সেই বিস্ফোরক চিঠি, সৌরভ আনফিট, মানসিকতা নেতিবাচক, চোটের ভান করেন।

সৌরভ নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর কেরিয়ারে সেটাই বৃহত্তম সেটব্যাক। ২০০৩-এ একটুর জন্য বিশ্বকাপ হারানোর পর তিনি তখন দেশকে ২০০৭-এর বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু জিম্বাবোয়ে সিরিজ জিতে দেশে ফেরার পর আচমকা টিম থেকেই বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। দীর্ঘ লড়াই করে দলে ফেরেন সৌরভ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান অফ দ্য সিরিজ হয়ে টিমে আবার জায়গা পাকা করেন। কিন্তু ফিরে আসেনি অধিনায়কত্ব। সৌরভ-গ্রেগ সম্পর্কও আর জোড়া লাগেনি।