ম্যাঞ্চেস্টার: তাঁদের স্মৃতিতে অনেক কিছুই তরতাজা। আবার অনেক কিছুই হয়ত আর সেভাবে মনে নেই। কিন্তু এই ২৫ জুন দিনটা এলে তাঁরা সকলেই ফিরে যান লর্ডসের সেই ঐতিহাসিক ব্যালকনিতে। তাঁরা ‘কপিলস ডেভিলস’। একটা শনিবারের রাতে যাঁরা সারা দেশকে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মধুর স্মৃতিতে চিরনতুন হয়ে থাকবে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে। ছত্রিশটা গ্রীষ্ম কেটে গিয়েছে। কিন্ত প্রুডেন্সিয়াল কাপ হাতে কপিল দেবের সেই চওড়া হাসি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে রূপকথার মতো হয়ে রয়েছে। সেই সোনালি দিনের রেশ কখনও আবছা হয় না। চির অমলিন স্মৃতিফলক ওই ছবি। লর্ডসের ওই সুন্দর সন্ধেটা না এলে ২৮ গ্রীষ্ম পরে ওয়াংখেড়ের সেই তারকা-খচিত এপ্রিলের রাতটা কি আসত! এমন একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসে। একজন সচিন তেন্ডুলকর গড়ে ওঠার জন্য সুনীল গাওস্করের প্রয়োজন ছিল। আর কপিল দেব না থাকলে হয়ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থাকতেন না। আর কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ছিলেন সম্ভবত বীরেন্দ্র সহবাগের মিনি সংস্করণ। ৮৩-র সেই ব্যাচকে দেখেই ব্যাট ও বল হাতে তুলে নেয় এবং ক্রিকেটই হয়ে ওঠে তাদের আবেগ। ভারতীয় ক্রিকেটের এখনকার সুদিনের সোপান গড়ে দিয়েছিল ৮৩-র সেই স্কোয়াড, একথা বললে সম্ভবত অত্যূক্তি হয় না। সম্প্রতি একটি ওয়েব শো-তে সাক্ষাত্কারে কপিল বলেছেন, বিশ্বকাপের সময় যত ঘটনা ঘটেছিল, তাঁর সবকিছু মনে নেই। এমনটা হতেই পারে। কেননা, তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে অনেক সাফল্যের আখ্যান জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু মদন লালের স্মৃতি এখনও প্রখর। ফাইনালে ভিভিয়ান রিচার্ডসের উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।  সেদিনের কথা উঠতেই মদনলাল বললেন, আমার ক্রিকেট কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় কীর্তিটা কীভাবে ভুলে যেতে পারি। আমার স্মৃতি খুবই শক্তিশালী। মদন লাল বলেছেন, টানব্রিজ ওয়েলসে কপিলের সেই ইনিংস, বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবার হারানো, ইয়ান বোথামকে কীর্তি (আজাদ)-র শ্যুটার, চেমসফোর্ডে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছনো-অনেক ঘটনা মনে রয়েছে। সম্প্রতি একটি শো-তে শ্রীকান্ত বলেছেন, ভারত সেমিফাইনালেও পৌঁছতে পারবে না ভেবে নিয়ে তিনি আমেরিকায় একটা বড়সড় হনিমুনের পরিকল্পনা করেছিলেন। শ্রীকান্ত বলেছেন, আমার বয়স তখন ২৩। নতুন বিয়ে হয়েছে। আমার স্ত্রীর বয়স ছিল ১৮। দুমাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। আমেরিকায় হনিমুনের পরিকল্পনা করছিলাম। আমরা লন্ডন থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার জন্য আমরা ১০ হাজার টাকা দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটও বুক করেছিলাম। ২০১১-র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যরা বিসিসিআই-এর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। কিন্তু এতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন না ১৯৮৩-র সেই ব্যাচ। শ্রীকান্ত হাসতে হাসতে বলেছেন, ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে লতা মঙ্গেশকর আমাদের জন্য একটা কনসার্ট করেছিলেন।আর তা থেকে আমাদের এক লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়েছিল।গাড়ি তো দূরের কথা, আমার তো নিজের বাড়িও ছিল না। ভারতের হয়ে নয় বছর খেলার পরও আমি মোটরবাইক ব্যবহার করতাম। কিন্তু ১৯৮৩ তাঁদের একটা স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়। প্রাক্তন মুখ্য কোচ ও জাতীয় নির্বাচক মদন লাল বলেছেন, হ্যাঁ, আজ আমি একটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ এবং এতে আমার সাহায্য হয়। কিন্তু হ্যাঁ, আমাদের সেই সাফল্য ছিল অনেক কিছু। এর সুফল পেয়েছে দুটি প্রজন্ম। এতে আমি খুবই খুশি। ফিরোজ শাহ কোটলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যশপাল শর্মা একটা ঘটনার কথা বলতে গিয়ে হাসি চাপতে পারলেন না। তিনি বললেন, ম্যালকম (মার্শাল)-এর সঙ্গে তো আমার একটা ডিল হয়ে গিয়েছিল। ও বল করতে এসেই আমাকে বাউন্সার দিত। আর সুনীল ভালসনের কাছে তো ওই টুর্নামেন্ট ছিল অনন্ত প্রতীক্ষার। স্কুলের বাচ্চাদের সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন হয়ে উঠেছেন, ভারতীয় দলের কোন ক্রিকেটার ১৯৮৩-র বিশ্বকাপে একটাও ম্যাচ খেলেননি?  তিনি কে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভালসন সম্প্রতি বলেছেন, কপিল, মদন  ও রজার এতটাই ভালো বোলিং করছিল যে, দলে সুযোগ পাওয়াটা কঠিন বলে জানতাম। ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমার খেলার একটা সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ফিটনেস টেস্টে রজার এমনভাবে স্প্রিন্ট টানলে আমার শুধু বসে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। এরজন্য আমার কোনও খেদ নেই। পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মতো ৮৩-র ব্যাচও একটা গ্রুপ, যাঁরা জানেন না গ্রুপের অ্যাডমিন কে। কিন্তু প্রত্যেকেই একে অপরের কাছে বার্তা পাঠান এবং সেই সোনালি সন্ধের স্মৃতিচারণ করেন। এটা নিখাদ তাঁদেরই কাহিনী। তাদের বয়স আরও বাড়বে। কিন্তু সেই গাথা চির অমলিন হয়ে থাকবে। সেই স্মরণীয় জয়ের কাব্য খুব শীঘ্রই রুপোলি পর্দায় দেখা যাবে।