কলকাতা: দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক যোগাসন থেকে তিন-তিনটি পদক জিতেছিলেন। তবে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের খরচ তুলতে বন্ধক রাখতে হয়েছিল মায়ের গয়না। অগাস্ট মাসে শ্রীলঙ্কায় এশিয়া প্যাসিফিক যোগাসন (Asia Pacific Yoga) প্রতিযোগিতা। যদিও ঋণে জর্জরিত সুস্মিতা দেবনাথের (Susmita Rai Debnath) সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়েই তৈরি হয়ে গিয়েছিল বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।
দুবাই থেকে বাড়ি ফেরার পর সুস্মিতাকে ঘিরে যখন সংবর্ধনার জোয়ার, তখন শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগিতার যোগ্যতা অর্জন করেও না যেতে পারার আশঙ্কা গ্রাস করেছিল হাওড়ার কৃতী কন্যাকে। যে কাহিনি তুলে ধরেছিল এবিপি আনন্দ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের খরচ যে আকাশছোঁয়া! শুধু রেজিস্ট্রেশনের খরচই ৫৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে বিমান ও রেলের টিকিটের ভাড়া। মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা খরচ। সব মিলিয়ে অঙ্কটা বেশ বড়সড়। রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষ দিনও দ্রুত এগিয়ে আসছিল। উৎকণ্ঠায় দিন কাটছিল বঙ্গকন্যার।
এবিপি লাইভ বাংলার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। প্রচুর মানুষ শেয়ার করেন ঝড়ের গতিতে। এবিপি আনন্দে সুস্মিতার লড়াই আর উদ্বেগের কাহিনি পড়ে শেষ পর্যন্ত পাশে দাঁড়ালেন সাধারণ মানুষ। একাধিক শুভান্যুধায়ী বাড়িয়ে দিলেন আর্থিক সাহায্যের হাত। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার খরচ জোগাড় হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনও সেরে ফেলেছেন সুস্মিতা। সুন্দর যে মুখ দিন কয়েক আগে পর্যন্ত দুশ্চিন্তার কালো মেঘে ঢাকা পড়েছিল, সেখানে ফের রোদ ঝলমলে হাসি। স্বস্তি।
হাওড়ার কৃতী কন্যা বলছেন, 'এবিপি আনন্দ আমার খবর সকলের সামনে তুলে ধরেছিল। অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি তারপর থেকেই। অনেক শুভান্যুধায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা সফর বাতিল করতে হচ্ছে না। এশিয়া প্যাসিফিক যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কলম্বোয় যাচ্ছি। এবিপি আনন্দকে অনেক ধন্যবাদ। যাঁরা পাশে দাঁড়ালেন, সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই।'
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশার মানুষ, একাধিক সংস্থার কর্ণধারেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের দেবজ্যোতি বসুমল্লিক, জাভিদ সাবির, সোদপুরের রাজু, চিকিৎসক অজিত মাইতি - অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিতরা রাতারাতি হয়ে উঠেছেন সুস্মিতার পরমাত্মীয়। শ্রীলঙ্কা সফরের পৃষ্ঠপোষক।
তবে আবেগে গা ভাসাতে নারাজ সুস্মিতা। কারণ, তিনি জানেন, দায়িত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে তাঁর। সঙ্গে বেড়েছে প্রত্যাশার পারদও। হাওড়ার উদয়নায়ারণপুরের তরুণী বলছেন, 'এত মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় ভাল ফল করলে সকলে খুব খুশি হবেন। শ্রীলঙ্কায় শুধু আমার পদক জেতার লড়াই নয়। পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের জন্য নিজের সেরাটা দিতে হবে।'
শ্রীলঙ্কায় ট্র্যাডিশনাল ও আর্টিস্টিক সোলো বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সুস্মিতা। ট্র্যাডিশনাল বিভাগে সোনা জিতলে চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন্স বিভাগেও নামার সুযোগ পাবেন। কড়া অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছেন সুস্মিতা। সংসারের হাল ধরতে একটি ডিফেন্স সংস্থায় এনসিসি বাচ্চাদের যোগাসন শেখান। পাশাপাশি যোগাসন শেখানোর জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন। দিনভর কাজের পর রাত আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরেও বিশ্রাম নয়, শুরু করে দেন যোগাসনের প্রস্তুতি। 'প্রত্যেক দিন রাতে বাড়ি ফিরে প্রায় ৪ ঘণ্টা করে অনুশীলন করি,' বলছিলেন সুস্মিতা।
২১ অগাস্ট শ্রীলঙ্কায় শুরু প্রতিযোগিতা। ১৯ অগাস্ট রওনা হচ্ছেন সুস্মিতা। হাওড়ার মেয়েকে ঘিরে ফের পদক স্বপ্নে বিভোর বাংলা।
আরও পড়ুন: মাত্র ৩৪ মিনিটে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে ব্যাডমিন্টনের প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে সিন্ধু
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।