কলকাতা: চার বছর আগে পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা বুক ফুলিয়ে বলতেন, আইসিসি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের কাছে ভারত অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য। এখন বলতে হয়, বিশ্বকাপে কোনওদিন ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক তিক্ত স্মৃতির মধ্যে পাকিস্তানের একমাত্র মিঠে হাওয়া ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। ওভালে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সরফরাজ আমেদের পাকিস্তান।


আর আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শাপমোচন ঘটেছিল যাঁর হাত ধরে, সেই মহম্মদ আমির মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বকাপেও ভারতের একাধিপত্য ঘুচবে। হয়তো বা রবিবারই। আর শান্তির ঘুম নামবে পাকিস্তানে।


শনিবার গভীর রাতে দুবাই থেকে করাচি ফিরেছেন আমির। রবিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাক মহারণ দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন ৬ ফিটের পেটানো চেহারার পাক পেসার। করাচি থেকে হোয়াটঅ্যাপ কলে এবিপি লাইভকে আমির বললেন, 'কোনও সন্দেহ নেই আইসিসি-র টুর্নামেন্টে ভারত বরাবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়ে এসেছে। তবে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে সেই ছবিটা পাল্টেছিলাম। ফাইনালে আমরা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।'


২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেই ফাইনালে আমিরের আগুনে স্পেল ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এখনও দুঃস্বপ্ন হয়ে রয়ে গিয়েছে। ৬ ওভারে ২টি মেডেন সহ মাত্র ১৬ রান খরচ করে তিন উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি পাক পেসার। শিকারের তালিকায় ছিলেন রোহিত শর্মা, শিখর ধবন ও বিরাট কোহলি। ভারতীয় ইনিংসের কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন স্যুইং আর দুরন্ত গতিতে।


রবিবার কারা এগিয়ে? আমির বলছেন, 'আমরা ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ছিল পঞ্চাশ ওভারের টুর্নামেন্ট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনও পূর্বাভাস করা চলে না। টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফর্ম্যাট যেখানে যে দল নির্দিষ্ট একটা দিনে ভাল খেলবে আর পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাবে, তারাই জিতবে।'


নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে ২৯ বছরের পাক পেসার বলছেন, 'ভারত-পাকিস্তান খুব চাপের খেলা। সকলের ওপরই প্রত্যাশার চাপ থাকে। ক্রিকেটারদের ওপর চাপ তো থাকেই, সমর্থকদের ওপরও চাপ থাকে। চাপের মুখে কারা নিজের ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে, নিজের পরিকল্পনাকে প্রয়োগ করতে পারছে সেটাই আসল। তাই চাপের কথা ভুলে গিয়ে ও স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে পারফর্ম করতে হবে। পরিকল্পনা থেকে সরে গেলেই চাপে পড়ে যেতে হয়। নিজের পদ্ধতিটা ঠিক রাখলে বড় ম্যাচ, চাপ এই সমস্ত মনঃস্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো কেটে যায়। পদ্ধতি ঠিক থাকলে দিনের শেষে চাপ কেটে যায়।'




বিরাট কোহলি নাকি বাবর আজম, কে সেরা, তা নিয়ে সম্প্রতি ক্রিকেটবিশ্ব উত্তাল হয়েছে বারবার। পাকিস্তানের অনেকেই বাবরকে এগিয়ে রেখেছেন। আর আমির? যিনি নিজে মাঠে বারবার কোহলির ঘাতক হয়ে উঠেছেন? অদ্ভুত শোনালেও, প্রবল প্রতিপক্ষের গলায় কোহলিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। 'বিরাট ও বাবরের তুলনা চলে না। বিরাট সব ধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে ২০ হাজার রান করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০টা সেঞ্চুরি রয়েছে। বাবর সেই জায়গায় পৌঁছচ্ছে। কোহলি সেই জায়গায় আগেই পৌঁছে গিয়েছে,' বলছিলেন আমির। যোগ করলেন, 'বাবর এই সময়কার অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। পাকিস্তানের সেরা তো বটেই। তবে বিরাটের সঙ্গে ওর তুলনা করা উচিত নয়। কারণ বিরাট অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বিরাট অনেক কিছু অর্জন করে ফেলেছে। বাবর যেরকম খেলছে, সেভাবে খেলে যেতে পারলে ২-৩ বছর পর বিরাটের জায়গায় পৌঁছতে পারে।'






তিনি খেললে ম্যাচের আগের দিন রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহলির টিম ম্যানেজমেন্টকে হয়তো তাঁকে সামলানোর নকশা তৈরি করতেই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হতো। তবে পাক দলের সতীর্থদের জন্য ভারত-বধের অঙ্ক কষে দিচ্ছেন আমিরই। বলছেন, 'বোলারদের পরিকল্পনা সহজ-সরল রাখতে হবে। বোলারদের বুঝতে হবে বাইশ গজ কীরকম আর ঠিক কীভাবে বল করতে হবে। পিচের চরিত্র অনুযায়ী বল করলে উইকেট নেওয়ার ও ম্যাচকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ-সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পিচের চরিত্র না বুঝে বল করে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। তাতে চাপ বাড়ে। পরিকল্পনা ভেস্তে যায় আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাত থেকে বেরিয়ে যায়। বোলার হিসাবে আমি সব সময় পিচের চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেছি আর সেই অনুযায়ী বোলিং করেছি। ভারতের বিরুদ্ধে পাক বোলারদেরও সেই পরামর্শই দেব।'


শাহিন আফ্রিদি-হ্যারিস রউফরা শুনছেন?