মুম্বই: তাঁর স্ট্রোকের ফুলঝুরি দেখেই প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছিল কথাটি। মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি। ব্যাটিংয়ের প্রচলিত ধারণাই পাল্টে দিয়েছিলেন এ বি ডিভিলিয়ার্স (AB de Villiers)।
ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি। তবে বাইশ গজে অনেকটা তাঁকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। যাঁকে বলা হচ্ছে বিশ্বক্রিকেটের নতুন মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি।
কখনও হাঁটু ভাঁজ করে বসে অফস্টাম্পের বাইরের বলকে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে পাঠানো, কখনও আবার স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে থার্ড ম্যান বাউন্ডারিতে বল উড়িয়ে দেওয়া। অবিশ্বাস্য সব শট খেলছেন সূর্যকুমার। ভারতীয় ক্রিকেটমহলে যিনি স্কাই নামে পরিচিত।
এবার সূর্যকুমারকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন ডিভিলিয়ার্স। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে ডিভিলিয়ার্স বলেছেন, 'ধারাবাহিকভাবে রান করে যেতে পারলে ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে ওর নাম লেখা থাকবে। হ্যাঁ, আমার সঙ্গে ওর তুলনা সঠিক। এখন ওকে শুধু ধারাবাহিকতা নিয়ে ভাবতে হবে। ওকে পাঁচ থেকে দশ বছর এভাবেই খেলে যেতে হবে। তাহলেই ক্রিকেটের ইতিহাসে ওর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।'
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup) ভারতের গেমচেঞ্জার হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। অথচ বছর দুয়েক আগেও ছবিটা ছিল আলাদা। জাতীয় দলে সুযোগ না পেয়ে মুষড়ে পড়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav)। সেই সঙ্গে নিয়েছিলেন নতুন শপথ। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের অঙ্গীকার।
যে অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর স্ট্রোকের ফুলঝুরি দেখে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে, সেই দেশেই সফরকারী ভারতীয় দলে ডাক না পেয়ে বিরাট ধাক্কা খেয়েছিলেন মুম্বইয়ের তারকা। রবিবার জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে তাঁর ম্যাচ জেতানো ইনিংসের রেশ এখনও মোহিত করে রেখেছে ক্রিকেটবিশ্বকে। তার মাঝেই লড়াইয়ের দিনগুলি মনে পড়ে যাচ্ছে সুফিয়ান শেখের। যিনি মুম্বই দলে সূর্যর দীর্ঘদিনের সতীর্থ। অনূর্ধ্ব ১৩ দল থেকে একসঙ্গে খেলছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু টুর্নামেন্টে ছিলেন সূর্যর রুমমেট।
মুম্বই থেকে ফোনে উইকেটকিপার-ব্যাটার সুফিয়ান এবিপি লাইভকে বলছিলেন, '২০২০ সালের ঘটনা। তখন করোনা অতিমারীতে গোটা বিশ্ব জবুথবু। তারই মাঝে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ভারত। সেই সফরে ভারতের সীমিত ওভারের দলে সুযোগ পায়নি সূর্য। সেটা ছিল ওর কাছে বিরাট ধাক্কা। কিন্তু ও অন্য ধাতুতে গড়া। হাল ছাড়ার পাত্র নয়। যার পরিচয় পেয়ে চমকে উঠেছিলাম আমি।'
কীভাবে? সূর্যর দীর্ঘদিনের সতীর্থ বলছেন, 'আমাদের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির খেলা ছিল। সূর্যই মুম্বই দলের অধিনায়ক। আমরা তাজ ট্রাইডেন্টে হোটেলে ছিলাম। কোয়ারেন্টিনের কড়াকড়ি। জৈব সুরক্ষা বলয়ে এক সপ্তাহ কেউ কারও ঘর ছেড়ে বেরতে পারিনি। সাতদিন কাটার পর ওর ঘরে গিয়েই চমকে উঠেছিলাম। দেখি, সারা ঘরে লেখা 'ইন্ডিয়া'। কাগজে লিখে জানলায়, দরজায়, বিছানায়, এমনকী ওয়াশরুমের আয়নায়, টিভিতে সর্বত্র আঠা দিয়ে আটকে রেখেছিল। আমি যেতেই বলল, দ্যাখ, আমি ছাড়ব না। জাতীয় দলে ফিরবই।' সুফিয়ান যোগ করলেন, 'ও লড়াইটা সেই হোটেলের ঘর থেকেই শুরু করে দিয়েছিল। করোনার আতঙ্কে আমাদের জিমে যাওয়াও বন্ধ ছিল। সূর্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে বলে হোটেলের ঘরেই নিজের জন্য জিম করে নিয়েছিল। ও বিশেষ ফিটনেস ডায়েট মেনে চলে। অনেক ক্রিকেটারই এত কঠোর ডায়েট মেনে চলতে পারবে না। ২০ দিনের খাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছিল সূর্য। প্রোটিন শেক থেকে শুরু করে সবরকম খাবার এনেছিল। নিজের রান্না নিজেই করত। বাইরে থেকে কিছু আনতে পারতাম না। কিন্তু তাতেও দমেনি ও। সেই জেদের প্রতিফলন আজ বাইশ গজে দেখা যাচ্ছে।'
আরও পড়ুন: নেটে বিধ্বংসী মেজাজে কোহলি, ব্যাটের শব্দ শুনে বাহবা দিচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা