নয়াদিল্লি: পরনে স্পোর্টস শ্যু, কালো লেগিংস আর সাদা টি-শার্ট। মাথার লম্বা চুল বেশ পরিপাটি করে বিনুনি করা। ব্যাট হাতে স্টান্স নিচ্ছে স্টাম্পসের সামনে। একের পর এক শট খেলে চলেছে ব্যাটের ঠিক মাঝখান দিয়ে। ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে বলে ‘স্য়ুইট স্পট‘।


আপাতত ‘মিষ্টি’ এই কন্যার ব্যাটিংয়ের ভিডিওয় মজেছে মাইকেল ভন, শাই হোপের মতো ক্রিকেটের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রজন্মের একাধিক প্রতিনিধি। খুদে প্রতিভা অবশ্য প্রশংসায় বেশ নির্লিপ্ত। তাঁর স্বপ্ন যে অনেক উঁচু তারে বাঁধা। একদিন মিতালি রাজের মতো ব্যাট করতে হবে যে!



মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অন্ধ ভক্ত তাই সারাদিনে ১০ ঘণ্টা ধরে ক্রিকেটীয় কসরত করে চলেছে!



মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অন্ধ ভক্ত তাই সারাদিনে ১০ ঘণ্টা ধরে ক্রিকেটীয় কসরত করে চলেছে!

আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক। ধোনি-ভক্ত কিশোরীর নাম পরী শর্মা। বয়স? মাত্র ৭ বছর। এই বয়সেই তাঁর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ ক্রিকেট বোদ্ধারা। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ভন ট্যুইট করে বলেছেন, ‘ভিডিওটি দেখুন। পরী শর্মা। মাত্র ৭ বছর বয়স। কী দারুণ মুভমেন্ট।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার শাই হোপের উচ্ছ্বাসও ধরা পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘আমি ছোটবেলা পরী শর্মার মতোই ব্যাটিং করতে চাইতাম,’ ট্যুইট করেছেন বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের তারকা শিখা পাণ্ডে ট্যুইট করে জানিয়েছেন, পরীর কাছে তালিম নিতে চান তিনি!



হরিয়ানার ঝাঝর গ্রামে বাড়ি পরীর। খুদে প্রতিভার জীবনকাহিনী শুনে মনে পড়তে পারে ‘দঙ্গল’ কন্যা গীতা ও ববিতা ফোগতকে। কারণ, পরীর বাবা প্রদীপ শর্মা ক্রিকেটকে নিজের পেশা করতে চেয়েছিলেন। ছিলেন বাঁহাতি পেসার। একসময় বিশ্ববিদ্যালয় দলে বীরেন্দ্র সহবাগ, ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক যোগীন্দর শর্মাদের সঙ্গে খেলেছেন। তবে ক্রিকেট মাঠে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছে প্রদীপের। তাই মেয়েকেই নিজের স্বপ্নপূরণের আধার হিসাবে বেছে নিয়েছেন।



পরীর কোচ প্রদীপই। বাবার তত্ত্বাবধানে ভোর ৪টেয় শুরু হয় তার প্র্যাক্টিস। পরের দশ ঘণ্টায় ঘষামাজা হতে থাকে পরীর ক্রিকেটীয় সত্তা। আপাতত লকডাউনের জেরে মাঠে যাওয়ার উপায় নেই। তবে খুদের ক্রিকেট সাধনায় ছেদ পড়েনি। ইন্ডোরেই চলছে অনুশীলন। ‘তিন বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি পরীর। ওকে বল ছুড়ে ক্যাচিং প্র্যাক্টিস দিতাম। তাতেই ওর ভাল লেগে যায়। পরে আমি ওকে ব্যাটিং শেখাতে শুরু করি। আমার গল্প শোনাতাম। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই ও বলে যে, ভারতের হয়ে খেলতে চায়,’ বলেছেন প্রদীপ। যিনি নিজে এখন রাজ্য সরকারের চাকুরে।



বাড়িতেই ইন্ডোর প্র্যাক্টিসের আয়োজন করে ফেলেছেন প্রদীপ। সেখানেই রোজ মেয়ের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পরিচর্যা করেন প্রদীপ। তাঁর কথায়, ‘টেকনিক, স্টান্স, ওর সব কিছুই আমার শেখানো।’ কয়েক কোটি মানুষ পরীর ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখে ফেলেছেন। তবে খুদে প্রতিভা অপেক্ষায় রয়েছে, কবে তার আদর্শ ধোনির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়। ধোনির উৎসাহ পেলে আরও উদ্যম নিয়ে বাইশ গজে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া।