লন্ডন: প্রথম একাদশে তাঁকে হয়তো দেখাই যেত না, যদি ট্রেন্ট ব্রিজে সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে নেটে মহম্মদ সিরাজের বলে ময়ঙ্ক অগ্রবাল মাথায় চোট না পেতেন।


পড়ে পাওয়া সেই সুযোগ আঁকড়ে ধরে বিলেতে ব্যাট হাতে ফুল ফোটাচ্ছেন কে এল রাহুল। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে তাঁর ঝকঝকে সেঞ্চুরি ভারতের জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই ম্যাচের শেষ দিন ইংরেজ ব্যাটিংকে ছারখার করে দিলেন ভারতীয় পেসাররা। ১৫১ রানে ম্যাচ জিতে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ এগিয়ে গেলেন বিরাট কোহলিরা।


স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা বেছে নেওয়া হয়েছে রাহুলকে। যিনি লর্ডসের সেঞ্চুরিকে কেরিয়ারের সেরা বেছে নিচ্ছেন। প্রথম ইনিংসে ৬ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ২৫০ বলে ১২৯ রান করেন রাহুল। এটাই কি কেরিয়ারের সেরা ইনিংস? ম্যাচের শেষে এবিপি লাইভের প্রশ্নে লন্ডন থেকে জ়ুম কলে রাহুল বললেন, 'হ্যাঁ। আমি পরিশ্রম করেছিলাম। প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখিনি। তার পুরস্কার হল এই সেঞ্চুরি। দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে ভাল লাগছে। এই ইনিংস আমার কাছে ভীষণ স্পেশ্যাল। ইনিংস ওপেন করতে নেমে আমাদের দায়িত্বই ছিল ভাল শুরু দেওয়া। সেটাই করেছি। আমরা এখানে বেশ কিছুদিন আছি। তাই পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে সড়গড় হওয়ারও কিছুটা সুযোগ পেয়েছি।'


ম্যাচের রাশ নাটকীয়ভাবে পেন্ডুলামের মতো একবার ভারতের দিকে ঝুঁকেছে, তো পরের মুহূর্তেই ইংল্যান্ডের দিকে। শেষ দিকে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটায় ভারত। প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মা ও কে এল রাহুলের দুরন্ত ব্যাটিং ভারতকে সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছিল। তবে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিল অধিনায়ক জো রুটের অনবদ্য সেঞ্চুরি। যে ইনিংসের পর একটা সময় ইংল্যান্ডের পাল্লা ভারি ছিল। ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে ধস নামে। তবে লোয়ার অর্ডার অবিশ্বাস্য লড়াই করে। মহম্মদ শামি ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। যশপ্রীত বুমরা মূল্যবান ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। ২৯৮/৮ স্কোরে দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিল ভারত। ইংল্যান্ডের সামনে ৬০ ওভারে জয়ের লক্ষ্য ছিল ২৭২ রান।


তবে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। ২ ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় ইংল্যান্ড। বুমরা ইনিংসের প্রথম ওভারেই তুলে নেন রোরি বার্নসকে। ডম সিবলিকে পরের ওভারেই ফেরান মহম্মদ শামি। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ১ রান যোগ হয়েছে। এরপর রোহিত শর্মা হাসিব হামিদের ক্যাচ ফেলে দিলেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ইংরেজ ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত ৯ রানের মাথায় আউট হন তিনি। এরপর জনি বেয়ারস্টোকে তুলে নেন ইশান্ত শর্মা। কিছু পরেই ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান তথা অধিনায়ক জো রুট ফেরেন বুমরার বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে। ৩৩ রান করে।


ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৬৭/৫। কিন্তু এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মঈন আলি ও জস বাটলার। মঈন ফিরলেও লড়াই করে যাচ্ছিলেন বাটলার। ব্যক্তিগত ২ রানের মাথায় যাঁর ক্যাচ ফেলেছিলেন কোহলি।


শেষ হয়ে আসছিল ওভার সংখ্যাও। অবশেষে আর ৮.১ ওভার বাকি থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ডকে ১২০ রানে অল আউট করে দেয় ভারত। ৫২তম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে বাটলার ও অ্যান্ডারসনকে ফেরান সিরাজ। ইনিংসে তিনি ৪ উইকেট নিয়েছেন। তিনটি উইকেট বুমরার। ইশান্ত শর্মা ২টি ও শামি একটি উইকেট নিয়েছেন।